রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল

বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভারে কক্সবাজার জেলা ইতিমধ্যে তার আপন বৈশিষ্ট্য হারাতে চলেছে। জেলার বাসিন্দাদের এক বড় অংশই এখন রোহিঙ্গা। এমনিতেই শরণার্থী হিসেবে এবং পরিচয় গোপন করে আগে থেকেই কয়েক লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বসবাস করছে। আগস্টের ২৫ তারিখ থেকে বানের স্রোতের মতো মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আগমনে এ জেলা কার্যত শরণার্থীদের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। সবার ওপরে মানুষ সত্য এ মানবিক তত্ত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে কক্সবাজারের সামাজিক  জীবন। নিত্যপণ্যের দাম এ জেলায় বেড়েছে স্পুটনিক গতিতে। লাখ লাখ শরণার্থীকে ঠাঁই দেওয়ার কারণে উজাড় হচ্ছে পর্যটনের স্বর্গভূমি হিসেবে বিবেচিত কক্সবাজারের বনভূমি, পাহাড়, গাছপালা, লতাগুল্ম। বিপুল সংখ্যক মানুষের আগমনে হুমকির মুখে পড়েছে কক্সবাজারের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা স্রোতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে টেকনাফের সাবরাংয়ের এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। অনিয়ন্ত্রিতভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যত্রতত্র বসতি গড়ে তোলায় পর্যটননগর কক্সবাজারের পরিবেশ বিপন্নের আশঙ্কা করা হচ্ছে। শরণার্থীদের পুনর্বাসনে কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের যেন ক্ষতি না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ দৃষ্টি রাখার দাবি তুলেছেন পরিবেশবিদরা। উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী; টেকনাফের হ্নীলা, হোয়াইক্যং, লেদা, মুছনী; বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির চাকডালা, তুমব্রু, জলপাইতলী, কলাবাগানসহ বিস্তৃত পাহাড় ও বনভূমির বাঁশ-গাছ উজাড় হয়ে পড়ছে। কক্সবাজারে আগে থেকে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। এ জেলার টেকনাফ, উখিয়ার বিস্তীর্ণ পাহাড়ে গত ২০ দিনে আশ্রয় নিয়েছে আরও ৫-৭ লাখ রোহিঙ্গা। বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর আশ্রয়স্থল তথা আবাস তৈরিতে প্রতিদিন প্রয়োজন হচ্ছে লাখ লাখ বাঁশ ও গাছ। এই বাঁশ ও গাছের জোগান দিতে গিয়েই উজাড় হচ্ছে পাহাড়ি বনভূমি। হঠাৎ করে কয়েক লাখ মানুষের বাড়তি চাপ জেলাবাসীর জীবনকে অসহনীয় করে তুলছে। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বৃদ্ধির আশঙ্কাও বেড়েছে। শরণার্থীদের কারণে এইডস এবং বি হেপাটাইটিসের মতো মরণব্যাধির বিস্তার ঘটার বিপদও দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সম্মানজনক পথ উন্মোচনে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর