বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিচিত্রিতা

আইএস উত্থান

ইরাকে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পতনের মধ্য দিয়ে সে দেশে সংখ্যালঘিষ্ঠ সুন্নি আধিপত্যের অবসান ঘটে। সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সম্প্রদায়ের হাতে দেশ শাসনের ক্ষমতা চলে যায়। সাদ্দাম হোসেনের সেনাবাহিনীর সদস্যরা পলাতক হয়। ইরাকের নতুন শাসকরা গণতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনার উদ্যোগ নেন। ইরাকি পার্লামেন্টে জনসংখ্যার অনুপাতে শিয়া, সুন্নি ও কুর্দি এমনকি ইয়াজিদিদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়। স্বভাবতই শত শত বছর ধরে ইরাকের শাসনক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে তাতে ক্ষোভ দেখা দেয়। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, এ ক্ষোভ থেকেই জন্ম নেয় ইসলামী স্টেট বা আইএস। সুন্নি এই জঙ্গি সংগঠনের পেছনে সৌদি সরকারের মদদ ছিল বলে মনে করা হয়। সৌদি শাসকদের মতো আইএস জঙ্গিরাও ওয়াহাবিতন্ত্রের অনুসারী। জাতশত্রু শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের পাশে শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরাকের অভ্যুদয়কে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব যেমন মেনে নেয়নি, তেমন মেনে নিতে পারেনি তাদের দোসর জায়নবাদী ইসরায়েল। যে কারণে আইএস সৃষ্টিতে পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মদদ ছিল বলে মনে করা হয়। ইসরায়েলের মদদের বিষয়টি আরও স্পষ্ট। আইএসে ব্যাপকহারে সাদ্দাম আমলের সেনা সদস্যরা যোগ দেয়। তাদের প্রতিহিংসার টার্গেটে পরিণত হয় শিয়া ও কুর্দিরা। ধর্মীয়ভাবে ইরাকের সংখ্যালঘু খ্রিস্টান, ইহুদি বিশেষত ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের সদস্যরা নির্যাতনের শিকার হয়। ইরাকি পার্লামেন্টের একমাত্র ইয়াজিদি সদস্য ভিয়ান দাখিলের অভিযোগ, ‘আইএসের তাণ্ডবে আমাদের পবিত্রতম তীর্থস্থান লালিশ সাক্ষাৎ দোজখে পরিণত হয়েছে। প্রাচীন এ প্রার্থনালয়টির অবস্থান ছায়াঢাকা লোকালয়ে। সেই পবিত্র স্থানকে তারা দোজখ বানিয়েছে। আমাদের অপরাধ আমরা নাকি শয়তানের পূজারি, এ অভিযোগে আইএস জঙ্গিরা আমাদের পবিত্র স্থান ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে। আমাদের বাস্তুচ্যুত ও ধর্মান্তরিত করতে চেয়েছে। এহেন ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি থামাতে পশ্চিমাদের এগিয়ে আসতে হবে। নয় তো পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় সম্প্রদায় ইয়াজিদিদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’ হাজার হাজার বছরের পথ পরিক্রমায় ইয়াজিদি ধর্মীয় গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যে উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধর্মমতের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। রহস্যময় এ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা জরথুস্ত্রবাদ ও মেসোপটেমিয়ার অন্যান্য ধর্মমতের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে হাজার হাজার বছরের পথ পরিক্রমায়। পরে ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলামের প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে রহস্যে ঘেরা এই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর।

জামিল হাসান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর