আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতায় কিছুতেই বাদ সাধা যাচ্ছে না। চোর সন্দেহে ১৬-১৭ বছরের এক কিশোরকে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করার পর লাশ গুম করার চেষ্টা মাত্স্যন্যায় অবস্থার ভয়াবহতাই আবারও স্পষ্ট করল। আল্লাহর আরশ কাঁপানো ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের চরশিরামপুর গ্রামের গাউছিয়া নামের এক মত্স্য হ্যাচারিতে। সোমবার সকালে সাগর মিয়া নামের ওই কিশোরকে হ্যাচারির লোকজন পানির মোটর চুরির চেষ্টাকালে আটক করে। পরে হ্যাচারি মালিকের নির্দেশে তার কর্মচারীরা আটক করে কিশোরকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেদম মারধর করে। পৈশাচিক নির্যাতনে কিশোরটি নেতিয়ে পড়লে হ্যাচারির পাশের একটি খেতে তাকে ফেলে এসে লাশ গুম করার চেষ্টা চালানো হয়। লোকজন কিশোরটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে বলা হয় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হ্যাচারিতে হতভাগ্য কিশোরের ওপর নির্যাতন চালানোর সময় ধারে-কাছের লোকজন তা উপভোগ করেছে। কেউ কেউ তাদের মোবাইল ক্যামেরায় সে নির্দয় নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করেছে। কিন্তু কিশোরের বুকফাটা আর্তনাদ সত্ত্বেও কেউ তাকে বাঁচাতে আসেনি। বর্বর নির্যাতনে প্রাণ হারানো কিশোরটির বিরুদ্ধে বৈদ্যুতিক মোটর চুরির চেষ্টা করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য কী মিথ্যা সেটি বড় বিষয় নয়; কিশোরটি কোনো অপরাধ করলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া যেত, তার বদলে যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে ও নির্মম একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের অপরাধ কোনোভাবেই খাটো করে দেখার মতো নয়। দেশে আইন হাতে তুলে নেওয়া বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু মানুষের মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পিটানো, গণপিটুনি, চোখ তুলে নেওয়া এমনকি হত্যাকাণ্ডও ঘটানো হচ্ছে নির্বিবাদে। শিশু-কিশোররাও এ পৈশাচিকতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আমরা আশা করব, ময়মনসিংহে মাছের হ্যাচারিতে চোর সন্দেহে কিশোর হত্যার ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ভবিষ্যতে কেউ যাতে এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায় তা নিশ্চিত করতে দোষীদের বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া হবে।