শিরোনাম
রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আশুরায় করণীয়

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

আশুরায় করণীয়

ইসলামী বর্ষের প্রথম মাস মহররম। কোরআন মাজিদ ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময় মাস। ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগেও এ মাসকে বহু সম্মানের সঙ্গে দেখা হতো। হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে বহু নবী-রসুলের সঙ্গেই এ মাসের মর্যাদা সম্পৃক্ত রয়েছে। তাই ইসলাম ধর্মেও এই দিনে কিছু করণীয় আছে, নিচে তার কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।

রোজা রাখা : পূর্ববর্তী নবীদের সুন্নতকে স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শন করে রসুলও (সা.) তাঁর উম্মতদের এ মাসে রোজা রাখার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি ইরশাদ করেন, রমজানের পর যদি তোমরা রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রোজা রাখ। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যেদিন আল্লাহতায়ালা একটি সম্প্রদায়ের তওবা কবুল করেছেন। সেদিন অন্যান্য সম্প্রদায়ের তওবাও কবুল করবেন। (তিরমিজি, হা. ৭৪১)। উল্লিখিত হাদিসে যে বিশেষ দিনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তা কোনটি? হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি, যতটা দেখেছি এ আশুরার দিন এবং এ মাস, অর্থাৎ রমজান মাসের রোজার প্রতি। (বোখারি, হা. ২০০৬)। হাদিসের ভাষ্য দ্বারা বোঝা যায় ওই বিশেষ দিনটি (আশুরার দিন) দ্বারা মহররম মাসের ১০ তারিখকে বোঝানো হয়েছে।

পরিবারের জন্য উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করা : এদিন রোজা রাখার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের জন্য উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করারও বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার নিজের ও পরিবারের জন্য উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করবে, আল্লাহতায়ালা সারা বছর তার রিজিকের প্রশস্ততা দান করবেন।’ (আল ইসতিজকার, ৩/৩৩১)। উল্লেখ্য, হাদিসটি নিয়ে কারও কারও দ্বিমত রয়েছে। তবে পরিবারের জন্য খরচ করলে যেহেতু এমনিতেই নফল সদকার সওয়াব পাওয়া যায়, তাই আমলটি একদম বিফল হয়ে যাবে তা বলা যাবে না। এ ছাড়া বিজ্ঞ আলেমদের মতে হাদিসটি আমলযোগ্য।

আশুরার রোজা কয়টি : আশুরার রোজা দুটি। ৯ ও ১০ তারিখ, অথবা ১০ ও ১১ তারিখ। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিন রোজা রাখেন এবং লোকদের রোজা রাখার নির্দেশ দেন। তখন সাহাবিরা বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! ইহুদি ও নাসারারাও এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রসুল (সা.) বললেন, ইনশা আল্লাহ! আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তী বছর আগমনের আগেই রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়ে যায়। (মুসলিম, হা. ২৫৩৭)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধাচরণ কর। আশুরার আগে এক দিন বা পরে এক দিন রোজা রাখ। (মুসনাদে আহমাদ ১/২৪১)। অনেকে মনে করেন, আশুরার রোজার মতো অন্যান্য নফল রোজাও একটি রাখা ঠিক নয়। অর্থাৎ যে কোনো নফল রোজাতেই আগে বা পরে এক দিন মিলিয়ে রোজা রাখতে হবে।  এটি ভুল। কিছু কিছু বিশেষ দিনের ব্যাপারে এ ধরনের হুকুম থাকলেও সব দিনের হুকুম এমনটি নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ যেন শুধু জুমার দিন রোজা না রাখে। (যদি রাখতেই হয়) তবে জুমার আগের অথবা পরের একটি মিলিয়ে রাখবে। (বোখারি, হা. ১৮৬২)।     

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর