বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিচিত্রিতা

বাঙালির গর্বিত পরিচয়

শত শত বছর আগেও বাঙালিরা গর্বিত জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল। মহাবীর আলেকজান্ডারের যুগে অগ্রসর দেশ গ্রিসের মানুষ জানত সেদিনের গঙ্গারিড তথা আজকের বাঙালি জাতির কথা। বাঙালির বীরত্বকে সমীহের চোখে দেখেছেন গ্রিকবীর আলেকজান্ডার। রোমানরাও পরিচিত ছিল গাঙ্গেয় ব-দ্বীপবাসীর শৌর্যবীর্যের সঙ্গে। সেই প্রাচীনকালে বাংলার সন্তান অতীশ দীপঙ্করের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ছাড়িয়ে ধারেকাছের সব দেশে। এই মহাপণ্ডিতের জ্ঞানালোকে আলোকিত হয়েছে প্রাচীন চীন। তিব্বতের অধিবাসীরা তাকে ভগবান বুদ্ধের পর শ্রেষ্ঠ গুরুর সম্মান দিয়েছেন। আজও তাকে মান্য করা হয় ‘জোবো ছেনপো’ বা মহাপ্রভু হিসেবে। তিব্বতের লামারা এখনো এই মহাজ্ঞানীর উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। পাল আমলে পদ্মা মেঘনা যমুনা পাড়ের এই দেশ শাসন করেছেন শশাঙ্ক ও ধর্মপালের মতো শাসকরা। রাজা ধর্মপালের রাজ্যসীমা একদিকে তিব্বত অন্যদিকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। প্রাচীন বাংলার যুবরাজ বিজয় সিংহ জয় করেছিলেন দ্বীপ দেশ লঙ্কা। তার নামানুসারে সে দেশের নাম হয় সিংহল। মধ্যযুগে বাংলাদেশ ছিল এক সমৃদ্ধ জনপদ। মরক্কোর বিশ্বখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা সারা বিশ্ব ঘুরে বাংলাদেশে এসে মন্তব্য করেন, ‘আমি পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরেছি কিন্তু পণ্যের এমন প্রাচুর্য ও সস্তা দর আর কোথাও দেখিনি।’ বাংলাদেশের বন্দরে সে সময় চীন, মালয়সহ বিভিন্ন দেশের জাহাজ আসত পণ্য নেওয়ার জন্য। বাংলাদেশে তৈরি হতো মসলিন নামের সূক্ষ্ম বস্ত্র। মধ্যযুগে বাংলাদেশ দুনিয়াজুড়ে ‘মসলিনের দেশ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ঢাকাই মসলিনসহ এ দেশের তৈরি বস্ত্র রপ্তানি হতো চীন ও রোম সাম্রাজ্যে। টলেমির ভূগোল এবং চীনা পর্যটকদের বর্ণনায় মসলিনের প্রশংসা করা হয়েছে। আজ থেকে ছয়-সাতশ বছর আগে সাহায্যের জন্য আরব দেশগুলো বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকত। সে সময় আরব থেকে এ দেশে লোকজন আসত ভাগ্যান্বেষণে। এদের কেউ আসতেন ব্যবসার জন্য। কেউ আসতেন কাজের জন্য। আজ যারা বাঙালিদের মিসকিন বলে নাক ছিটকান, তাদের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সাহায্যের জন্য মুখিয়ে থাকতেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের আমলে গরিব আরববাসীর জন্য কয়েকবার খররাতি সাহায্য পাঠানো হয়। ১৩৮৯ থেকে ১৪০৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পাঠানো হয়েছে বিপুল অর্থ। মক্কার তত্কালীন শাসক হাসান বিন ওজলান সে অর্থের একাংশ নিজের জন্য রেখে বাকি অংশ মক্কা ও মদিনার গরিবদের মধ্যে বণ্টন করেন। মক্কার বাব-ই উম্মেহানিতে ১২ হাজার স্বর্ণমুদ্রা ব্যয়ে মাদ্রাসা ও সরাইখানা নির্মিত হয় বাংলার সুলতানের পাঠানো অর্থে। মদিনার হুস্ন-আল-আতিকে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো অর্থে গড়ে ওঠে বিশাল মাদ্রাসা। আরবদের পানির কষ্ট লাঘবে আরফা খাল খননে ৩০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করেছিলেন বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ।  মাদ্রাসা শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ তকি-আল-ফসিহ ইবনে হাজাব, আল সখাভি, কুতুবুদ্দিন হানাফির লেখা গ্রন্থে ধনী দেশ বাংলা থেকে পাঠানো এসব সাহায্যের কথা উল্লেখ রয়েছে।

অপূর্ব আজাদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর