বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রস্তাব

নিরাপত্তার ব্যাপারেও মিয়ানমারের অঙ্গীকার কাম্য

নির্যাতন-নিপীড়নের সম্মুখীন হয়ে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের ফেরত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির দফতরের মন্ত্রী কিয়াও তিন্ত সোয়ে ঢাকা সফরে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে এ প্রস্তাব দিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের প্রস্তাবকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে উপনীত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়াও তুলে দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারের মন্ত্রীর কাছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে উভয়পক্ষ একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনেও সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার প্রস্তাব নিঃসন্দেহে একটি আশাজাগানিয়া ঘটনা। এ প্রস্তাবে মিয়ানমারের সুমতির প্রকাশ ঘটেছে এবং তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানিয়েছিল সারা দুনিয়ার মানুষ। জাতীয় ঐক্য জোরদারে সে দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে আস্থায় আনার প্রয়াসও বহির্বিশ্বের প্রশংসা পেয়েছে। এসব প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ডকে ম্লান করে দিয়েছে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়াদের জাতিগত নিধনের ঘৃণ্য প্রয়াস। এ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে রোহিঙ্গাদের শতকরা ৯০ ভাগই স্বদেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা। অনুমান করা হচ্ছে, জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। রাখাইনে জঙ্গি তত্পরতা দমনের নামে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়াদের বর্বর নিপীড়ন উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর নামান্তর। জঙ্গিবাদ সারা দুনিয়ার জন্য বিড়ম্বনা সৃষ্টিকারী একটি সমস্যা। জঙ্গি নামের অপরাধীদের দমনের বদলে সাধারণ নাগরিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া কাণ্ডজ্ঞানহীনতারই নামান্তর। রাখাইনে হাজার বছর ধরে বসবাসকারী একটি জাতিগোষ্ঠীর মানবিক অধিকারকে অস্বীকার করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ প্রকারান্তরে জঙ্গিবাদকেই উত্সাহিত করেছে। সে ভুল পথ থেকে সরে এসে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি দান এবং অবাধ চলাচলের অধিকার মেনে নিলে রাখাইনকে ঘিরে যে জঙ্গিবাদের হুমকি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তা সহজে দমন করা সম্ভব হবে।  মিয়ানমার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত  নেওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছে আমরা তাকে স্বাগত জানাতে চাই।

তবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও মিয়ানমারকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।

সর্বশেষ খবর