টাঙ্গাইলের ঘাটাইল মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী এক জনপদ। সে ঘাটাইল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কলঙ্কিত হয়ে উঠেছে গডফাদারদের জনপদ হিসেবে। এ এলাকার সংসদ সদস্য আমানুর রহমান রানা এখন হত্যা মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে। রানা এবং তার পরিবারের সদস্যরা ঘাটাইলকে তাদের যা ইচ্ছা তাই করার মৃগয়া ক্ষেত্র বানিয়েছিলেন। ঘাটাইলে রানাগংদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই ছিল শেষ কথা। মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যার দায়ে রানা গ্রেফতার হওয়ার পর তার পরিবারের গডফাদারি ধসে পড়ে। তারপরও স্বস্তি আসেনি ঘাটাইলের মানুষের মনে। রানার বদলে সেখানে গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হন ঘাটাইল পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান শহীদ। ঘাটাইল আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এ পৌর মেয়র নিজেকে শুধু গডফাদার নয়, পৌর এলাকার সামন্ত রাজা ভাবতে শুরু করেছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তাকে বেদম পিটিয়ে এ ক্ষমতাদর্পী মেয়র নিজের ক্ষমতা জাহির করেন। এ নিয়ে মামলা হলেও তার দর্প কমেনি। ঘাটাইলের রাস্তাঘাটের দুরবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের সংবাদদাতা আতিকুর রহমান আতিককে নিজের অফিসকক্ষে আটকিয়ে পোষা সন্ত্রাসীদের দিয়ে মারপিটই শুধু করেননি তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাথরুমে আটকে রেখে বাইরে থেকে সিটকানি দিয়ে দেন। তার কাছ থেকে ভিডিও করা একটি ক্যাসেট কেড়ে নেওয়া হয়। এ সময় ঘাটাইল থানার এক এসআইসহ দুই পুলিশ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। সাংবাদিক আতিক তাদের কাছে নিরাপত্তা চাইলে তা তারা উপেক্ষা করেন। বাথরুমে আটকা অবস্থায় আতিক নিউজ টোয়েন্টিফোরে স্ক্রল পাঠান ‘মেয়রের কার্যালয়ে সাংবাদিককে অবরুদ্ধ।’ এ স্ক্রলটি নিউজ টোয়েন্টিফোরে প্রচারিত হওয়ায় তা দেখে মেয়রের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। ঘাটাইল প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা বিষয়টি জেনে মেয়রের কার্যালয়ে ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। সাংবাদিক নির্যাতনের এ ঘটনা শুধু ঘাটাইল নয়, সারা দেশের সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আমরা ক্ষমতাদর্পী মেয়রের ধৃষ্টতার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি কামনা করছি। আমরা আশা করব ঘাটাইলকে গডফাদারতন্ত্রের পাপ থেকে মুক্ত করতে পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে। এ ব্যাপারে নিজেদের দায় পূরণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এগিয়ে আসবে।