রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আত্মহত্যা কবিরা গুনাহ

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

আত্মহত্যা কবিরা গুনাহ

নিজে নিজেকে হত্যা করার নাম আত্মহত্যা।   ইসলামের দৃষ্টিতে এটি কবিরা গুনাহ। আধুনিক বিশ্বে আত্মহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পত্রিকার পৃষ্ঠা উল্টালেই প্রতিনিয়ত দেখা যায় আত্মহত্যার নতুন খবর। আত্মহত্যা একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমান বিশ্বে তা মহামারী আকার ধারণ করেছে। এর বিষাক্ত থাবায় প্রতিদিন ঝরে পড়ছে হাজারেরও অধিক তরতাজা প্রাণ। সমূলে ধ্বংস হচ্ছে কত সাজানো সংসার। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী শুধু ২০১২ সালেই সারা বিশ্বে সংঘটিত হয়েছে আট লাখ চার হাজার আত্মহত্যা। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি করে আত্মহত্যা সংঘটিত হচ্ছে।  ইসলামী দৃষ্টিকোণে আত্মহত্যা একটি ঘৃণিত, নিন্দিত ও জঘন্যতম অপরাধ। যার একমাত্র শাস্তি জাহান্নাম। রসুলুল্লাহ (সা.) এ কাজকে এত বেশি অপছন্দ করতেন যে, তার জীবদ্দশায় কখনো কোনো আত্মহত্যাকারীর জানাজায় শরিক হননি। মহান আল্লাহতায়ালা আত্মহত্যাকারীর কঠোর পরিণতি সম্পর্কে বলেন, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা কর না, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু। যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন ও জুলুমের পথ বেছে নিয়ে আত্মহত্যা করবে আমি অচিরেই তাকে জাহান্নামের আগুনে পৌঁছে দেব। আর এটা আল্লাহর জন্য সহজ।’ (সূরা নিসা, আয়াত-২৯-৩০)।

মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনের অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ কর না, আর ভালো কাজ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সদাচরণকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত নং ১৯৫)।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে, চিরদিন জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে এবং চিরকাল তা পান করতে থাকবে।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস নং ৫৩৬৩)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস লাগিয়ে বা গলাটিপে আত্মহত্যা করে, জাহান্নামে সে নিজেই নিজেকে অনুরূপ শাস্তি দিতে থাকবে। আর যে বর্শাবিদ্ধ করে আত্মহত্যা করে, জাহান্নামে সে অনুরূপ বর্শাবিদ্ধ করে শাস্তি পেতে থাকবে।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস নং ১২৮১)।

আত্মহত্যাকারীর জানাজার ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো— আত্মহত্যাকারীর জানাজার নামাজ পড়া জায়েজ। তবে জানাজায় কোনো বিজ্ঞ আলেম বা এলাকার কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত হবে না। যাতে মানুষ এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং ভবিষ্যতে এ জাতীয় গর্হিত অপরাধ থেকে বিরত থাকে। (ফাতওয়ায়ে শামি-২)।

বিশ্বের কোনো ধর্ম বা সমাজ ব্যবস্থায় আত্মহত্যার কোনো বৈধতা নেই। বরং যারা আত্মহত্যা করে তারা ধৈর্যহীন, স্থূল জ্ঞানের অধিকারী ও নিজ পরিণতি সম্পর্কে উদাসীন। তাই আসুন, আমরা আত্মহত্যা নামক নাশকতা থেকে বিরত থাকি এবং এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সামাজিক গণসচেতনতা গড়ে তুলি।

 লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর