শিরোনাম
সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আখেরাতের জীবন নিয়ে ভাবতে হবে

মাওলানা মুহম্মাদ আশরাফ আলী

আখেরাত বা মৃত্যু  পরবর্তী অনন্ত জীবনের ওপর বিশ্বাস ইসলামী ইমান আকিদার অংশ। দুনিয়ার দৃশ্যমান জীবন যেমন এক বাস্তব সত্য, তেমন ইমানদারদের কাছে আখেরাতের জীবনও মহাসত্য হিসেবে বিবেচিত। মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন দুনিয়ার জীবন সংক্ষিপ্ত। আখেরাতের জীবন অনন্ত। ফলে দুনিয়ার জীবনকে পরম পাওয়া এবং এ জীবন নিয়ে মগ্ন থাকা মুমিনদের কাজ হতে পারে না। দুনিয়া অভিলাষী মানুষ দুনিয়াকে যখন তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ভাবে তখন আখেরাতের জীবন সম্পর্কে অসচেতন হয়ে পড়ে। এই অসচেতনতা তাকে বেসামাল করে তোলে। সে গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষ দুনিয়ার জীবনে যদি আখেরাতের কথা মনে রাখে তবে সে সর্বদাই সতর্ক থাকার চেষ্টা করে। দুনিয়া অভিলাষী হলে গুনাহ থেকে বাঁচা যে অসম্ভব হয়ে পড়ে তা স্পষ্ট করা হয়েছে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জিজ্ঞাসা করলেন, এমন কেউ আছে কি যে পানির ওপর দিয়ে হেঁটে যায়, অথচ তার পা ভিজে না? সাহাবায়ে কেরাম উত্তর দিলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! এমন তো হতে পারে না। তিনি তখন বললেন, এমনিভাবে দুনিয়া অভিলাষী কেউ গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে না। (বায়হাকি)

আখেরাতের জীবন যে অনন্ত তা হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় স্পষ্ট করা হয়েছে। বিশাল সাগরের পানিতে আঙ্গুল চুবালে তাতে যে পানি লাগে আখেরাতের জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবন ততটুকু নগণ্য। মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর কসম! আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত কেবল এতটুকুই, যেমন তোমাদের কেউ নিজেদের আঙ্গুল সাগরে চুবিয়ে দিল। এবার সে দেখুক, এ আঙ্গুল কতটুকু পানি নিয়ে ফিরে আসে। (মুসলিম)

উপরোক্ত হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে, আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন তুচ্ছ। অথচ দুনিয়ার জীবনের মোহে আমরা আখেরাতের জীবনকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত করছি। দুনিয়ার জীবনের জন্য যেহেতু আখিরাতে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে সেহেতু দুনিয়ায় কেউ অসত্য, অসুন্দর ও অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ এবং তাঁর রসুল প্রদর্শিত সত্য সুন্দর ও কল্যাণের পথে চলতে ব্যর্থ হলে আখেরাতের জীবনে তাকে শাস্তি পেতে হবে। সে শাস্তির কথা দুনিয়ার জীবনে কল্পনা করাও কষ্টকর। কাজেই প্রতিটি মোমিনের উচিত তার হৃদয়কে দুনিয়ার মোহ থেকে রক্ষা করা। দুনিয়ার জীবনের প্রতি অকারণ ভালোবাসার বদলে আখেরাতের বিশাল জীবনে যাতে সুখ-শান্তির অনন্ত স্বাদ অন্বেষণ করা যায় সে চিন্তায় মগ্ন হওয়া। দুনিয়ার জীবনের মোহ ছাড়তে পারলে মানুষ অন্যায় ও অকল্যাণের পথ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হবে।  আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর