হাবশী শাসনের অবসানে বঙ্গদেশে হুসাইন শাহের বংশ ক্ষমতায় আসে। আলাউদ্দীন হুসাইনের সিংহাসনারোহণ (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) শান্তি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করে। তিনি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব প্রজার শুভেচ্ছা নিয়ে রাজত্ব আরম্ভ করেন।
আলাউদ্দীন হুসাইন শাহ : আলাউদ্দীন হুসাইনের বংশ পরিচয় সম্বন্ধে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশের ধারণা যে, তিনি আরব বংশীয় সৈয়দ ছিলেন। তার পিতা সৈয়দ আসরাফ-উল-হুসাইনী ছিলেন মক্কার শরিফ (সম্ভ্রান্ত)। তিনি ইউসুফ ও হুসাইন নামে দুই পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে বাংলায় আগমন করেন এবং মুর্শিদাবাদ জেলার চাঁদপাড়ায় এক কাজির আশ্রমে বাস করেন। আসরাফ-উল- হুসাইনীর বংশ পরিচয় পেয়ে তার কনিষ্ঠ পুত্র হুসাইনের সঙ্গে কাজি স্বীয় কন্যার বিয়ে দেন। হুসাইন শাহ্ গৌড়াধিপতি মুজাফ্ফর শাহের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন এবং যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতাগুণে শিগগিরই উজির পদে উন্নীত হন। পরে তিনি তার অত্যাচারী প্রভুর বিরুদ্ধে জনসমর্থিত বিদ্রোহ পরিচালনা করে বিশৃঙ্খল ও অরাজকতার অবসান ঘটান।
আলাউদ্দীন হুসাইন শাহ্ সিংহাসনে আরোহণের পর দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যার দিকে দৃষ্টি দেন। তার রাজত্বকালের প্রধান ঘটনাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা— (১) প্রাসাদরক্ষী পাইকদের উচ্ছেদ, (২) হাবশীদের বিতাড়ন, (৩) রাজধানী পরিবর্তন, (৪) দিল্লির সুলতানের সঙ্গে সন্ধি ও (৫) রাজ্য বিস্তার।হাবশীদের বিতাড়ন : হুসাইন শাহের রাজত্বকালে প্রাসাদরক্ষী পাইকদের ক্ষমতা অত্যন্ত বেড়ে যায়। তিনি তাদের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য পাইক বাহিনীর একটি বিরাট অংশকে বরখাস্ত করেন। হাবশীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি থেকে রাজ্যকে মুক্ত করার জন্য তিনি তাদের বঙ্গদেশ হতে বিতাড়িত করেন এবং তাদের স্থলে পুরাতন মুসলিম ও হিন্দু আমিরগণকে পুনর্বহাল করা হয়। তার এসব ব্যবস্থার ফলে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
রাজধানী পরিবর্তন : হুসাইন শাহ পাণ্ডুয়া থেকে ২৩ মাইল উত্তর-পূর্বে একডালায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। এ রাজধানী পরিবর্তনের কারণ ছিল দূষিত ও বিষাক্ত আবহাওয়া থেকে রাজধানীকে রক্ষা ও শাসনকার্যের সুবন্দোবস্ত করা।
দিল্লির সঙ্গে সন্ধি : হুসাইন শাহ শারকী দিল্লির সুলতান সিকান্দার লোদী কর্তৃক পরাজিত ও বিতাড়িত হয়ে বঙ্গদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাংলার সীমান্ত দিল্লির রাজ্যসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। কাজেই দিল্লিশ্বরের সঙ্গে বাংলার সুলতানের সংঘর্ষের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। জৌনপুর ছিল দিল্লির আক্রমণের বিরুদ্ধে বাংলার জন্য প্রতিরোধ-প্রাচীরস্বরূপ।