রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আস্থার সংকট

চিকিৎসায় বিদেশমুখিতা বাড়াচ্ছে

বাংলাদেশ গত দেড় দশকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি লাভ করেছে। দেশে স্থাপিত হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানসম্মত হাসপাতাল। দেশেই এখন হৃদরোগ ও কিডনি রোগীদের অস্ত্রোপচার হচ্ছে। তারপরও দেশি চিকিৎসকদের ওপর নাগরিকদের আস্থা কতটুকু বেড়েছে তা বলা মুশকিল। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভালো চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। প্রতিবছর বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা কয়েক লাখেরও বেশি। শুধু ভারতেই গত বছর মেডিকেল ভিসা নিয়ে গেছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশি। পর্যটন ভিসায় গিয়েও অনেকে চিকিৎসা করান। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার হাসপাতালগুলোতেও বাংলাদেশি রোগীদের ভিড়। চিকিৎসা মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল দেশবাসীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্য পূরণে স্বাধীনতার পর শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিটি সরকার চিকিৎসা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, একের পর এক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও ক্লিনিক। বেসরকারি খাতে মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবার চেয়ে রাজনীতি নিয়ে চিকিৎসকদের এক বড় অংশ ব্যস্ত থাকায় অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করছে। চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যে সেবার মনোভাব না থাকায় মানুষের আস্থা অর্জনে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন। অস্ত্রোপচারের সময় পেটের মধ্যে থাকা নবজাতকের মাথা কেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে এ দেশে। ডাক্তার ও নার্সের মারপিটে রোগীর প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটেছে অতি সম্প্রতি। যমজ সন্তানের একটিকে পেটে রেখে পেট সেলাই করে প্রসূতির জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন এ দেশের অর্বাচীন চিকিৎসকরা। ফলে আস্থার সংকট রোগীদের বিদেশমুখী হতে বাধ্য করছে। শত শত কোটি টাকার মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় ঘটছে।  এ অকাম্য অবস্থার উত্তরণে চিকিৎসা পেশায় মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতার সন্নিবেশ ঘটাতে হবে।  নিজেদের সুনামের স্বার্থেই চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে সচেতন হবেন এমনটিই কাম্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর