রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেশত

মোহাম্মদ ওমর ফারুক

মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেশত

মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেশত। মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা থেকে বর্ণিত, তিনি একবার নবী (সা.)-এর কাছে এসে আরজ করলেন ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি এবং এ ব্যাপারে আপনার কাছে পরামর্শ নিতে এসেছি। রসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন তোমার মা আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রসুলুল্লাহু (সা.) বললেন, তাহলে তাকেই ধরে রাখ। কেননা জান্নাত তার পায়ের কাছেই রয়েছে। (নাসায়ী ৩১০৪, ইবনে মাজাহ-২৭৮১) সন্তানের জন্য মায়ের দোয়া সবার আগে আল্লাহর কাছে কবুল হয়। একদিন মুসা (আ.) কোহেতুরে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহ জান্নাতের মধ্যে আমার সঙ্গী হবে এমন কোনো ব্যক্তি বর্তমানে দুনিয়াতে আছে কিনা? আল্লাহপাক বলেন, হ্যাঁ আছে। দামেস্ক শহরে আলী বিন মোয়াফেক নামে যে গোশত বিক্রেতা আছে সে জান্নাতে তোমার সঙ্গী হবে। তা শুনে মুসা (আ.) আনন্দিত হয়ে দামেস্কের দিকে ছুটলেন। তার অন্তরে কত শত খুশির বন্যা। তিনি দুনিয়াতে থাকতেই তার জান্নাতের বন্ধুর সাক্ষাৎ পাবেন। বহু পরিশ্রমের পর নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দেখেন, এক ব্যক্তি গোশত বিক্রি করছে, কিন্তু তার বিশ্রী চেহারা দেখে সন্দেহ করে নাম জিজ্ঞেস করে দেখেন নামও ঠিক আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে গোশত বিক্রি করা শেষ করে কসাই গোশতের কয়েক টুকরা থলিতে ভরে বাড়ির দিকে চললেন। মুসা (আ.)ও তার পেছনে পেছনে চললেন। কসাই ঘরে গিয়ে নিজ হাতে গোশত পাকালেন, নিজ হাতে রুটি তৈরি করে তার বৃদ্ধ মাকে অতি যত্নে রুটি-গোশত খাওয়াতে লাগলেন। চামচ দিয়ে গোশতের ঝোল তার মুখে তুলে দিলেন। তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়ানোর পর মায়ের মুখখানা মুছে দিলেন এবং মায়ের কাপড় ধুয়ে দিলেন। তার মা দুই হাত তুলে ক্ষীণ কণ্ঠে কি যে, উচ্চারণ করলেন। কসাই মুসা (আ.)-কে চিনেন না এবং তার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করেন না।

মুসা (আ.) সবই নিজ চোখে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই এই বৃদ্ধা আপনার কি হয়। কসাই বললেন, ইনি আমার মা। মুসা (আ.) বললেন, আপনি তাকে রুটি খাওয়ানোর পর তিনি হাত তুলে কী বললেন? কসাই বললেন, ভাই শুনে আপনি হেসে ফেলবেন, এটা আমার মায়ের একটা অভ্যাস। তিনি প্রতিদিন খানা খাওয়ার পর আমার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে মোনাজাত করেন। বর্তমান জমানায় মুসা (আ.) আমাদের নবী, আমরা তার উম্মত। যদিও তার সাক্ষাৎ আমাদের ভাগ্যে জোটেনি, তবুও আমরা তাকে ভক্তি করি। হাশরের দিন তার শাফায়াতের আশা রাখি। আমার মা প্রতিদিন মোনাজাত করে বলেন, হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে জান্নাতের মধ্যে আমাদের নবী মুসা (আ.)-এর বন্ধু করে দিও।  মুসা (আ.) আশ্চর্য হয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমার মায়ের দোয়া কবুল করেছেন। আমিই সেই মুসা নবী। আপনি সত্যিই ধন্য। আল্লাহপাক বলে দিয়েছেন, জান্নাতে আপনি আমার বন্ধু হবেন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

 

সর্বশেষ খবর