মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মোবাইল, ইন্টারনেট যখন প্রাণঘাতী

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের উপহার দিয়েছে এক নতুন সমাজ। প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করছে নতুন নতুন দিগন্ত। আর মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে পথে বিদ্যুৎ গতিতে। বিজ্ঞান মানুষের গৌরব। মানব সফলতার শ্রেষ্ঠ অবদান। প্রযুক্তি আমাদের সহায়ক। সুখ সমৃদ্ধির একান্ত সঙ্গী। তবে জেনে রাখার বিষয়, মানব রচিত প্রায় সব কিছুই লাভ-ক্ষতি এবং উপকার-অপকারে মিশ্রিত। জীবন বাঁচানোর ওষুধেও নাকি সাইড অ্যাফেক্ট থাকে। তাই বিশ্বনিয়ন্তার বিধান হলো, যেসব বিষয় ভালো-মন্দ মিশ্রিত এতে যদি ভালোর পরিমাণ প্রভাবিত হয় তবেই তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি এতে ক্ষতির দিক প্রভাবিত হয় তা হবে বর্জনীয় ও পরিত্যাগযোগ্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলুন এ দুটিতে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে। তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।’ [সূরা বাকারা : ২১৯]। বলা বাহুল্য, স্বপ্নের প্রযুক্তি মোবাইল, ইন্টারনেট বর্তমানে অপব্যবহারের বিপদসীমা অতিক্রম করছে। বয়ে আনছে অগ্রগতির অন্তরালে অবনতি। প্রগতির নামে দুর্গতি। অপরাধীরা আজ এ প্রযুক্তিকে অস্ত্র হিসেবে লুফে নিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে হ্যাকিং, সাইবার সন্ত্রাস, প্রতারণা, তথ্যচুরি, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ দাবি এবং নারী নির্যাতন, ইভ টিজিং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও শিশু হত্যা প্রতিদিন আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলছে। প্রতারণামূলক বিষাক্ত প্রেমের ফাঁদ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ও পারিবারিক কলহের অন্যতম কারণ এ প্রযুক্তি। ইন্টারনেট, ইউটিউব ও ফেসবুকে আপত্তিকর বিষয় ছড়িয়ে দিয়ে অসহায় ভুক্তভোগী নারী-কিশোরীদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শিশু-কিশোরদের পড়ালেখায় প্রতিবন্ধকতার বিষয়টা তো সুস্পষ্ট। সস্তায় কলরেট, ইন্টারনেট পেয়ে অবৈধ প্রেম, ভিডিও দেখা এবং গেম খেলায় ঝুঁকে থাকছে রাতজুড়ে। ইতিমধ্যেই ১৩ বছরের কিশোরী স্বর্ণাসহ অনেকের প্রাণ নিল ‘ব্লু হোয়েল’ গেম বা নীল তিমি। ‘নীল তিমি’ বা ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী গেম ‘ব্লু হোয়েল’ নিয়ে পাশের দেশ ভারত ও পাকিস্তান রীতিমতো ধরাশায়ী। পশ্চিমা দেশে এ গেমসের কুপ্রভাব নিয়ে তোলপাড় চলছে আগে থেকেই। এবার কয়েকটি আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেল আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে। গ্রাস করছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশু-কিশোরদের অকাতরে। কেড়ে নিচ্ছে তাদের অবুঝ প্রাণ নীরবে। অনেক ক্ষেত্রে উসকানিমূলক বক্তব্য ও বিভ্রান্তিমূলক ভুয়া তথ্য ফেসবুকে প্রকাশ করে সমাজে অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করা হয়। কক্সবাজারে রামু ও বি-বাড়িয়ার নাসিরনগরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ফেসবুকের মাধ্যমেই উৎপত্তি হয়েছিল। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় বড় হামলা, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি অপব্যবহারেরই ফসল। এ ছাড়া মাদক চোরাচালান, ব্ল্যাক মার্কেট ও অসংখ্য অনৈতিক ও অবৈধ কাজের সহজ মাধ্যম হিসেবে অনেকে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদি ব্যবহার করছে। আল কোরআন তাদেরই যেন সতর্ক করে বলছে: ‘একশ্রেণির লোক আছে যারা অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে, আল্লাহর পথ (সঠিক রাস্তা) থেকে বিভ্রান্ত করার জন্য। আর এসব নিয়ে ঠাট্টা-উপহাসের আসর জমায়। সুতরাং তাদের কঠিন শাস্তির সংবাদ দাও।’ [সূরা লোকমান : ৬]। বর্তমান পরিসরে সামাজিক উন্নতি-অগ্রগতির সহায়ক আধুনিক প্রযুক্তি বন্ধ করা যাবে না। বন্ধ করা যাবে না স্বাচ্ছন্দ্যের এই অসাধারণ মাধ্যমগুলো। তবে অভিভাবক মহল, জাগ্রত সমাজ প্রতিনিধি, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। অপরাধপ্রবণতা ও প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সবাইকে যৌথভাবে। প্রাণঘাতী প্রবণতা রোধ করতে হবে ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে।

লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর