বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আয়করের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

তপন কুমার ঘোষ

আয়করের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী ঢাকার একটি দৈনিকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ বছর আয়কর থেকে বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করা তার লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম আয়কর দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। আয়কর মেলা আয়োজন করে ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গত করবছরে প্রায় পাঁচ লাখ নতুন করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন এবং দাখিলকৃত মোট রিটার্নের সংখ্যা সাড়ে ১৫ লাখ অতিক্রম করেছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

আয়কর মেলা : এ বছর ১ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে আয়কর মেলা। রাজধানী ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে এক সপ্তাহ, সব জেলা শহরে চার দিন, ৩২টি উপজেলা শহরে দুই দিন এবং ৭১টি উপজেলায় এক দিন এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় করদাতারা আয়কর রিটার্ন জমা ও কর পরিশোধ করতে পারবেন। মেলা থেকে অনলাইনে ই-টিআইএন সংগ্রহ করা যাবে। রাজধানীতে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে।

করমুক্ত আয়সীমা : সাধারণভাবে, কোনো করদাতার বার্ষিক করযোগ্য আয় আড়াই লাখ টাকার বেশি হলে তাকে কর দিতে হবে। তবে নারী এবং ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্বের প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই সীমা চার লাখ টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে সোয়া চার লাখ টাকা।

আয়করের হার : ব্যক্তি-শ্রেণির করদাতাদের আয়ের প্রথম আড়াই লাখ টাকার ওপর কোনো কর দিতে হবে না। এর পরের চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে, এর পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে, পরবর্তী ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ২০ শতাংশ হারে, তত্পরবর্তী ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

ন্যূনতম কর : করমুক্তসীমার অতিরিক্ত আয়ের ক্ষেত্রে প্রদেয় ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ হবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় পাঁচ হাজার টাকা, অন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় চার হাজার টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় তিন হাজার টাকা।

যাদের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক : আয়বছরে (২০১৬-২০১৭) আপনার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলে চলতি করবছরে (২০১৭-২০১৮) আপনাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আয়বছরের পূর্ববর্তী তিন বছরের যে কোনো বছর করদাতার কর নির্ধারণ হয়ে থাকলে বা তার আয় করযোগ্য হয়ে থাকলে তাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আপনি যদি সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা সরকারের কোনো করপোরেশনের একজন কর্মচারী হিসেবে বিগত অর্থবছরের কোনো মাসে ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি মূল বেতন উত্তোলন করে থাকেন তাহলে এ বছর আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। একজন ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী অথবা কোনো সরকারি, আধা-সরকারি বা স্থানীয় সরকারের কোনো টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিকে এ বছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে; তা তার মোট আয় যা-ই হোক না কেন। আপনি একজন চিকিৎসক, দন্তচিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, সার্ভেয়ার অথবা অন্য কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার নিবন্ধিত সদস্য হলে আপনার মোট আয় যা-ই হোক না কেন এ বছর আপনার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। কোনো ব্যবসা বা পেশায় নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মীর মোট আয় যা-ই হোক না কেন তাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। আপনি কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার হলে আপনাকে রিটার্ন জমা দিতে হবে। আপনি একটি গাড়ির মালিক হলে বা কোনো অভিজাত ক্লাবের সদস্য হলে আপনার জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। রিটার্ন দাখিল না করলে কেউ সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

রিটার্ন জমা : এ বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর ২০১৭। এই দিনটিকে ‘আয়কর দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অনলাইনেও রিটার্ন দাখিল করা যায়।

রিটার্ন দাখিল না করলে : নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা না হলে জরিমানা ও বিলম্ব সুদ আরোপযোগ্য হবে। তবে যৌক্তিক কোনো কারণে করদাতা এই সময়ের মধ্যে রিটার্ন দোখিল করতে না পারলে কর অফিসে আবেদন করে সময় বাড়িয়ে নিতে পারেন। করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন জমা না দিলে এক বছর পর্যন্ত জেল অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড আরোপের বিধান আয়কর অধ্যাদেশে রয়েছে।

আয়করের টুকিটাকি : আয়বর্ষের পরবর্তী বর্ষকে করবর্ষ বলে। ১ জুলাই ২০১৬ থেকে ৩০ জুন ২০১৭ পর্যন্ত সময়কালে উপার্জিত আয়ের আয়বর্ষ হবে ২০১৬-২০১৭ এবং করবর্ষ হবে ২০১৭-২০১৮। সব আয়কর অফিস থেকে বিনামূল্যে আয়কর রিটার্ন ফরম সংগ্রহ করা যায়। ফটোকপিও গ্রহণযোগ্য। এনবিআরের ওয়েবসাইট থেকেও ফরম ডাউনলোড করা যায়। করদাতার ১০টি খাতের আয় মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। রিটার্ন দাখিলের দুটি পদ্ধতি আছে। বেশিরভাগ ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দেন। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগসহ নির্দিষ্ট ১০টি খাতে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়। করযোগ্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের সময় উেস কর কেটে রাখা বাধ্যতামূলক। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা/সুদ আয়ের ওপর উেস কর্তিত কর চূড়ান্ত করদায় পরিশোধ হিসেবে গণ্য হবে। উেস কেটে রাখা কর অগ্রিম কর পরিশোধ হিসেবে বিবেচিত হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট (.িহনৎ.মড়া.নফ) থেকে আয়কর সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। আয়কর দেওয়া আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।

লেখক : সাবেক ডিএমডি, জনতা ব্যাংক লিমিটেড।

সর্বশেষ খবর