ইসলামী শরিয়তে পোশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। পোশাকের মাধ্যমে যাতে ইসলামী ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটে সে বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। পোশাক-পরিচ্ছদ লজ্জা নিবারণের পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রকৃতি অনুভব করা যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে,
‘হে আদম সন্তান! আমরা তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভাবর্ধনের জন্য। আর তাকওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম। ওটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (আ’রাফ : ২৬)। পোশাক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন মহান আল্লাহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সাজসজ্জা গ্রহণ কর। আর খাও, পান কর কিন্তু অপচয় কর না। অবশ্যই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না’ (আ’রাফ : ৩১)। পোশাক-পরিচ্ছদ যাতে অহংকারের মাধ্যম না হয়ে ওঠে সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলেছে ইসলাম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বলল, মানুষ তো পছন্দ করে যে তার পোশাক সুন্দর হোক এবং তার জুতা সুন্দর হোক। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হলো হককে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা’। [আবু দাউদ, তিরমিযি, মিশকাত] ইসলামী শরিয়তে পোশাককে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন— ওয়াজিব, মুস্তাহাব ও হারাম।
ওয়াজিব পোশাক হলো সে ধরনের পোশাক যে পোশাক সতর আবৃত করে, গরম ও শীত থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ক্ষতি থেকে দেহকে হেফাজত করে। যে পোশাকে সৌন্দর্য আছে, তাকে মুস্তাহাব পোশাক বলে। আবুল আহওয়াছ স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নিম্নমানের পোশাক পরে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। তা দেখে তিনি বললেন, তোমার কি ধন-সম্পদ আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কী ধরনের সম্পদ? আমি বললাম, আল্লাহ আমাকে উট, ভেড়া, ঘোড়া ও দাস-দাসী দিয়েছেন। তিনি বললেন, তাহলে আল্লাহ যখন তোমাদের ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তখন তোমার বেশ-ভূষায় আল্লাহর নেয়ামতের নিদর্শন ও করুণা প্রকাশ পাওয়া উচিত। [আবু দাউদ, মিশকাত] ইবাদতের সময় বিশেষত, জুমা, দুই ঈদ ও জনসমাবেশে সুন্দর পোশাক পরার গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারও সামর্থ্য থাকলে সে যেন তার পেশাগত কাজে ব্যবহূত পোশাক ব্যতীত জুমার দিনের জন্য এক জোড়া পোশাক তৈরি করে’। [আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ] ইসলামী শরিয়তে কিছু পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেগুলো হলো— ১. পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ মিশ্রিত পোশাক। ২. পুরুষের জন্য মহিলাদের পোশাক ও মহিলাদের জন্য পুরুষদের পোশাক ৩. খ্যাতি ও বড়াই প্রকাশকারী পোশাক ৪. ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক ৫. আঁটসাঁট পোশাক ইত্যাদি।লেখক : ইসলামী গবেষক।