শিক্ষা এখন শুধু আলোকিত মানুষ তৈরির ব্রত নয়, বাণিজ্যের মোক্ষম মাধ্যম। কম পুঁজিতে সর্বাধিক মুনাফার নিশ্চয়তা থাকায় গত দুই যুগে সারা দেশে শিক্ষাবাণিজ্য জোরালোভাবে জেঁকে বসেছে। রাজধানীতে তা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবককে। অবস্থাটা এতই নাজুক যে, নগরবাসীর আয়ের এক তৃতীয়াংশই ব্যয় হচ্ছে শিক্ষা খাতে। এমনিতেই রাজধানীতে বাড়িভাড়া আকাশছোঁয়া। বসবাসের জন্য নিকৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তকমা অর্জন করেছে। আয়ের অর্ধেক ব্যয় করেন বাসাভাড়া বাবদ এমন মানুষই এ নগরীতে বেশি। বাড়িভাড়া ও সন্তানদের শিক্ষার পেছনে যে অর্থ ব্যয় হয় তারপর সিংহভাগ মানুষের খাবার, চিকিৎসা, পোশাক অন্য খাতে খরচ মেটানো দুরূহ হয়ে ওঠে। বিশ্বের যেসব দেশে শিক্ষা খাতে সরকারি সহায়তা বেশি বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এ বিষয়ে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি রয়েছে নানা অর্জনও। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই দেওয়া হয়, মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি-মেধাবৃত্তি, শিক্ষার ভালো পরিবেশের জন্য আধুনিক ভবন, শিক্ষা উপকরণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সরকার শিক্ষার্থীদের পাঠদান, মানোন্নয়ন ও প্রশাসনিক তদারকিসহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২২ হাজার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগকে ২৩ হাজার, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার পেছনে বছরে পাঁচ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা ব্যয় করছে। সরকারের এত উদ্যোগ ও এত টাকা ব্যয়ের পরও অভিভাবকদের আয়ের এক তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হচ্ছে কোচিং নামের অভিশাপ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়ছে অভিভাবকের দরিদ্রতার কারণে। শিক্ষা ব্যয় কম হলে ঝরে পড়ার হার যে অনেক কম হতো তা সহজে অনুমেয়। প্রতিবছরই শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে টিউশন ফি, কোচিং ফি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের ভাড়া। এর বিপরীতে অভিভাবকদের আয় তেমন বাড়ছে না। কোচিংয়ের কারণে শিক্ষা খাতে বছরে সরকারের অর্ধ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ও অভিভাবকদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনতে পারছে না। কোচিংয়ের কারণে শিক্ষকরা ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পাঠ্যদান করেন না এমন অভিযোগ প্রবল। কোচিং শিক্ষার্থীদের মেধাকেও গিলে খাচ্ছে। তাদের গিনিপিগে পরিণত করছে। দেশবাসীকে এ বিড়ম্বনা থেকে রেহাই দিতে শিক্ষাবাণিজ্য তথা কোচিংয়ের ব্যাপারে সরকারকে কঠোর হতে হবে।