রংপুর সদর উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামে ফেসবুকে ধর্মীয় ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্নকারী ছবি স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভকারীরা সহিংসতায় মেতে উঠলে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়। এ সময় পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে একজন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে সাতজন পুলিশ সদস্য। বিক্ষোভকারীরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নয়টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঠাকুরপাড়ার টিটু রায় পেশায় একজন কবিরাজ। গত সপ্তায় তিনি নাকি তার ফেসবুকে ধর্মীয় ব্যঙ্গাত্মক ছবি পোস্ট করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ করবে— এমন খবর পেয়ে ৩টা থেকে গঙ্গাচড়া, কোতোয়ালি ও তারাগঞ্জ থানা পুলিশ এলাকায় অবস্থান নেয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ধারেকাছের এলাকা থেকে ৮-১০ হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও লাঠি দিয়ে ঢিল ছুড়তে থাকে। এরই একপর্যায়ে তারা ঠাকুরপাড়া গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে টিটু রায়ের তিনটিসহ নয়টি বাড়ির ১৮টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুলিশ বলেছে, পরিকল্পিতভাবে বিক্ষোভকারীরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ নিঃসন্দেহে গুরুতর। এ ব্যাপারে ২৯ অক্টোবর গঙ্গাচড়া থানায় টিটু রায়কে আসামি করে মামলাও করা হয়। টিটু রায় তার ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে কোনো স্ট্যাটাস দিয়েছেন কিনা তা যথাযথ তদন্তে জানা যেতে পারে। তিনি অপরাধী বলে বিবেচিত হলে এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপও কাম্য। কিন্তু তার আগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। এ উসকানিমূলক ঘটনায় একজনের প্রাণহানিও অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। যারা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার প্রতিশোধ নিতে সহিংসতায় জড়িয়েছেন তারা প্রকারান্তরে ইসলামের ঘোষিত আদর্শেই কুঠারাঘাত করেছেন। ইসলাম কোনোভাবেই একজনের অপরাধে আরেকজনের ওপর দায় চাপানো সমর্থন করে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতিতেও এ সহিংস ঘটনা কলঙ্ক লেপন করেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করব, সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থেই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার অশুভ কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে যেমন বিরত থাকতে হবে তেমন আইন হাতে তুলে নেওয়ার অপরাধবৃত্তিতে জড়িত না হওয়ার ক্ষেত্রেও সচেতন থাকা বাঞ্ছনীয়।