সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ষড়যন্ত্রকারীরা শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে

বিশেষ সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক

ষড়যন্ত্রকারীরা শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আট বছর সাত মাস প্রাচ্যের অক্সফোর্ড-খ্যাত দেশের এই শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠকে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ।  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি, শিক্ষার মান, ডাকসু, গবেষণাসহ সার্বিক পরিস্থিতি এবং দায়িত্ব পালনের সময়ের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা  ও অর্জন নিয়ে সদ্য সাবেক এই উপাচার্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক— ফরহাদ উদ্দীন।

 

 

উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষে এখন আপনার সময় কীভাবে কাটছে?

আমি উপাচার্যের দায়িত্ব হস্তান্তরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে যোগদান করি। এ বিভাগই আমার মূল পরিচয়। উপাচার্যের দায়িত্ব সব সময় সাময়িক। সেই সাময়িক দায়িত্ব পালন শেষে আমি বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। আমি মনে করি, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ আমাকে উজ্জীবিত রাখে, সজীব রাখে। উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। নিয়মিতভাবে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের একটি কোর্সের ক্লাস নিয়েছি। এটি উপাচার্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকালেও আমাকে বৈচিত্র্যে রেখেছে। আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালে আপনার অর্জনগুলো কী কী?

আট বছর সাত মাস আমি দায়িত্বে ছিলাম। দায়িত্ব পালনকালে যে কাজগুলো করেছি সেগুলো আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব। দায়িত্বই পালন করার চেষ্টা করেছি। এ দায়িত্ব পালনে আমার সহকর্মী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী— সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে আমাদের অগ্রাধিকার ছিল। আমাদের ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন এতটাই দুরূহ ছিল যে, সেখানে নানা ধরনের অসুবিধার মধ্যে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কাজ চালাতে হয়েছে। আমাদের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও নানা ধরনের প্রতিকূলতা ছিল। শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণ, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, একবিংশ শতাব্দীর চাহিদা মোকাবিলায় নতুন নতুন বিভাগ সৃষ্টি করা ছিল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। সেগুলো আমরা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করেছি। আর যেটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল তা হচ্ছে, সময়মতো স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া। এই যে একটি বড় ধরনের সেশনজটের মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় তার একটি কারণ আছে। সামরিক শাসন, স্বৈরশাসন, গণতান্ত্রিক অপশাসনের সময় বার বার বিশ্ববিদ্যালয়কে অনির্ধারিতভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। সে কারণে চার বছরের স্নাতক কোর্স শেষ করতে সাত থেকে সাড়ে সাত বছর লেগে গেছে। এ ধরনের একটা অবস্থা থেকে চার বছরের কোর্স চার বছরে শেষ করা এবং এক বছরের মাস্টার্স এক বছরে শেষ করা এই যে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়ে আসা গেছে এটি আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় একটি অগ্রযাত্রা এবং সেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তা কখনো ভোলার নয়। ২০১৪ সালের সেই সময়ে যখন রাস্তাঘাটে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে তখনো শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে যে পরীক্ষার হলে এসেছে, আমরা কোনোভাবেই পরীক্ষা বন্ধ করতে দিইনি। কারণ এক দিনের জন্য একটি কোর্সের পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হলে তা আবার নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত উপকাঠামোয় তিন মাস লেগে যায়। কারণ প্রতিদিনই পরীক্ষা থাকে। অতএব এই যে আমরা সেই সময়ে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছি এবং ছাত্রছাত্রীদের নানাভাবে সচেতন করেছি, যাতে তারা পরীক্ষা দেয় এবং শিক্ষকরাও অনেকে বাইরে থেকে আসেন। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবাসে বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হলে এসে পরীক্ষা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পর যে উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা ছিল তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে করেন?

প্রকৃতপক্ষে আমি একজন শিক্ষক। আর একজন শিক্ষক কখনো আত্মতুষ্টি লাভ করেন না। তিনি কখনই সন্তুষ্টি ভোগ করেন না। আমি প্রায় ৩৭ বছর শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। এই ৩৭ বছরে আমি কখনো বলতে পারব না যে কোনো একটি ক্লাস শেষে আমি কখনো বলেছি এই ক্লাসটি সব দিক দিয়ে সফল হয়েছে। কারণ যখনই আমি ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে আসি প্রতিবারই আমার মনে হয় ক্লাসে আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর এভাবে দিলে আরেকটু ভালো হতো। এই দৃষ্টান্ত দিয়ে যদি ছেলেমেয়েদের বোঝানো যেত তাহলে ভালো হতো। অর্থাৎ প্রতিটি ক্লাস শেষে আমার মনে হতো, ক্লাসটি অসম্পূর্ণই থেকে গেছে। ঠিক একইভাবে আমি দীর্ঘ আট বছর সাত মাস উপাচার্যের দায়িত্ব অর্থাৎ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময় উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করার পরও আমার মনে হয়েছে, আরও অনেক কিছু করার বাকি রয়ে গেছে। এটাই স্বাভাবিক।

দায়িত্ব পালনকালে কি কোনো ধরনের চাপের মুখোমুখি হয়েছিলেন?

আমি গর্ব করেই বলতে পারি, খুব আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলতে পারি, আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কোনো ধরনের চাপ, কোনো ধরনের অন্যায় অনুরোধ আমার কাছে আসেনি।

আপনার সময়ে তো অনেক নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান প্রশাসন নতুন একটি বিভাগের অনার্সে ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা কী?

একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্র প্রতিদিনই বিস্তৃতি লাভ করছে। নতুন নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্র নির্মিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমরা সেভাবেই পরিচালনার চেষ্টা করেছি। আজকের পৃথিবীতে কত নতুন নতুন জ্ঞানের ক্ষেত্র আছে সেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের বিচরণ করার সুযোগ দেওয়া দরকার। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা বেশ কয়েকটি নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছি। যেমন— ফলিত গণিত বিভাগ, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ, ক্রিমিনোলজি বিভাগ, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগ, পাবলিক হেলথ বিভাগ, দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগ, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, দুর্যোগ প্রশমন ইনস্টিটিউট, নৃত্যকলা বিভাগ, তাত্ত্বিক ও গাণিতিক রসায়ন বিভাগ, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই বিভাগগুলো যেহেতু আমাদের বর্তমান সময়ের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সে কারণেই এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল প্রস্তাব করেছে।

আজ পৃথিবীতে রোবটিক্স পপুলেশন, রোবটিক্স সম্পদ বেড়ে গেছে। রোবটিক্স সিটিজেনের কথা আমরা শুনছি। রোবট দিয়ে উন্নত বিশ্বে শিল্পকারখানা পরিচালিত হচ্ছে, হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি রোবটিক্সের ওপর মৌলিক জ্ঞান ধারণের সুযোগ না পায় তাহলে বিশ্বের অগ্রযাত্রার সঙ্গে নিজেদের তাল মেলাবে কীভাবে। একইভাবে সারা দেশের মুদ্রণশিল্প ক্রমান্বয়ে বিস্তৃতি লাভ করছে। কিন্তু মুদ্রণশিল্পের ওপর মৌলিক লেখাপড়া জানা শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। সে জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব যে এ বিষয়ে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। আমি মনে করি, প্রতিটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার পেছনে যে প্রয়োজনীয়তা, চাহিদা, যৌক্তিকতা, ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যাশা সবই পূরণের চেষ্টা করা হয়েছে।

আমি শুনতে পাচ্ছি, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এ বছর ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি জানি না কোন যুক্তিতে এ ধরনের পেছনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। বিভাগে যদি সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা থাকে সে জায়গায় প্রতিকূলতা কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা উচিত। আজকের দিনে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ওপর লেখাপড়ার সুযোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বাংলাদেশে থাকবে না— তা তো আমি কল্পনাই করতে পারি না। আমি মনে করি, এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রাজনীতিকে কীভাবে দেখেন?

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ দিয়ে গেছেন। এই আদেশই হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চালিকাশক্তি। এই আদেশে শিক্ষকদের সব ধরনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি রাজনীতি করার স্বাধীনতা, রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার স্বাধীনতা, সার্বিক স্বাধীনতা নিয়েই আমরা শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের আদেশ অনুমোদন দেওয়ার সময় এ কথাটি বলেছিলেন, ‘আমি শিক্ষকদের ওপর কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাই না। শিক্ষকরা নিজেদের বিবেক দ্বারা পরিচালিত হবেন। তারা তাদের বিবেকের কাছে জবাবদিহিতা করবেন। এটি আমি শিক্ষকদের কাছ থেকে আশা করি।’ আমি মনে করি, আমরা ১৯৭৩ সালের আদেশ সমুন্নত রেখে আমাদের শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে চলেছি। তবে এর সঙ্গে কিছু মানুষ যুক্ত থাকেন যারা স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার না করে অপব্যবহার করেন। আমরা অনেক সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করি। কিন্তু সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের যে স্বাধীনতা, তাদের যে রাজনৈতিক অধিকার, তা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করার প্রশ্ন আসে না। কারণ অধিকাংশ শিক্ষক নিয়মনীতি মেনে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত আছেন। যখন যেই বিচ্যুতিগুলো ঘটে সেগুলো আমাদের বিচ্যুতি, আমাদের সংকট, আমাদের নীচতা, আমাদের লোভ-লালসা। সে কারণে আমাদের স্বাধীনতাকে কোনোভাবেই দায়ী করা যাবে না। আমি মনে করি, শিক্ষকের রাজনীতি করার যে স্বাধীনতা, তা কোনোভাবেই যেন শিক্ষকতার দায়িত্ব, পেশাগত দায়িত্ব, সামাজিক দায়িত্ব, সহকর্মীদের সঙ্গে তার আচার-আচরণ সেগুলোকে কোনোভাবেই যেন বিঘ্নিত না করে, সেখানে যেন অশালীন কোনো আচরণ দেখা না দেয়, সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সেখানে শিক্ষকদের নির্বাচিত শিক্ষক সমিতির দায়িত্ব, সেখানে প্রশাসনের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। কোনোভাবেই যেন আমাদের স্বাধীনতা নষ্ট করার মতো ঘটনা না ঘটে (সাম্প্রতিককালেও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ঘটনা ঘটতে দেখছি)। এগুলো কিছু ষড়যন্ত্রকারী যারা শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস নেয় এবং একই সঙ্গে আমাদের যে স্বাধীনতা তা নস্যাৎ করার নানা চক্রান্ত করছে। সেই জায়গায় আমাদের সতর্ক থাকার দরকার আছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেখানে নিরপেক্ষ তদন্ত করা, দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। এর মাধ্যমেই সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত ও অপরাধমুক্ত করা যায়।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে তিনজন শিক্ষক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নীল দলের দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেছে। এ পরিস্থিতির কারণ কী?

এ ধরনের ঘটনা একেবারে অপ্রত্যাশিত, অগ্রহণযোগ্য এবং নিন্দনীয়। এ ধরনের ঘটনা আমরা প্রত্যাশা করি না এবং পত্রপত্রিকায় লেখার যে ধরন দেখেছি তা বিশ্বাস করা কঠিন। এর পরও যেহেতু ঘটনাটি শিক্ষকদের সভায় ঘটেছে এবং বহু শিক্ষক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অতএব তা তো বিশ্বাস না করেও উপায় থাকে না। যারা এ কাজটি করেছেন তারা অন্যায় করেছেন। প্রত্যেক শিক্ষকের তার নিজস্ব বক্তব্য প্রদান করার স্বাধীনতা আছে, তার মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই পাকিস্তান এবং ঔপনিবেশিক আমলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য, বাকস্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করেছেন এবং সেই আন্দোলনের পরই আমাদের জাতির জনক আমাদের একটি স্বাধীন আদেশ দিয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ অনুযায়ী আমরা যারা দায়িত্ব পালন করি তাদের মাঝে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা কোনোভাবেই চিন্তা করা যায় না। আর যদি কোনো শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হন তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

শিক্ষকদের এসব কর্মকাণ্ড শিক্ষা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন কি?

শিক্ষকদের রাজনীতির কারণে কখনো কখনো তারা আন্দোলনে যান, মানববন্ধন করেন, শোভাযাত্রায় অংশ নেন। কিন্তু তারা যা-ই করুন না কেন তাদের যে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, শিক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন সেগুলো যাতে কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয়। এ দায়িত্বগুলো পালন করেই তারা যেন এ ধরনের কর্মসূচিগুলোয় যোগদান করেন তা আমাদের প্রত্যাশা এবং আমরা নতুন করে কথাগুলো বলছি না। আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সামরিক শাসন, স্বৈরশাসকের আমলে তীব্র আন্দোলন করেছি, দিনের পর দিন আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমার মনে পড়ে না যে ক্লাসের দায়িত্ব পালন বাদ দিয়ে সেসব আন্দোলনে আমরা গিয়েছি। যখন যার ক্লাস ছিল না তখন তিনি আন্দোলনে গিয়েছেন।

শিক্ষকদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তা নিরসনের উপায় কী?

আমার আগের একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছি যে শিক্ষকরা তাদের বিবেকবোধ দ্বারা চালিত হবেন যা জাতির জনক প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন। আমিও বঙ্গবন্ধুর সেই কথাটির ওপর ভিত্তি করে বলতে চাই, শিক্ষকতায় যারা আসবেন তারা নিজেদের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন। তাদের দেখে, তাদের কথা শুনে, তাদের আচার-আচরণে, তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ সবকিছু দেখে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা নেবে। একজন শিক্ষক শুধু শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক নন, তারা ক্লাসরুমের বাইরেও দায়িত্ব পালন করেন। অনেক সময় তিনি কিছু বলবেন না কিন্তু তার আচার-আচরণ, তার ভাবভঙ্গি দেখেই একজন শিক্ষার্থী শিক্ষা নেবে। সে ধরনের পেশায় যখন আমরা আসি তখন আমাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি যার প্রয়োজন তা হলো, উদার মনমানসিকতা তৈরি করা, সত্য কথা বলা, সত্যকথন। এ সত্যের সঙ্গে থাকলে এবং উদার মনমানসিকতা থাকলে আমার তো মনে হয় না এ ধরনের কোনো সমস্যা হতে পারে। এ জায়গায় আমি নজরুলের ভাষায় বলতে চাই : ‘দোহাই তোদের, আবার তোরা সত্যি করে সত্য বল্।’ সত্য কথা তো সবাই বলছে। তবে সত্যি করে সত্য বলতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা এ ঘটনায় শিক্ষক রাজনীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল প্রকাশের ক্ষেত্রে দুর্বলতার অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

গবেষণা নিবন্ধ যখন জমা দেওয়া হয় কোনো জার্নালের সম্পাদকের কাছে তখন দায়িত্ব হচ্ছে সম্পাদনা পরিষদ সেটি গ্রহণ করেছে কিনা। গ্রহণ করলে তা রিভিউর জন্য পাঠানো হয়। যারা রিভিউ করেন তারা নিবন্ধটি দেখে সেটা গ্রহণযোগ্য কিনা, গ্রহণযোগ্য হলে সেখানে কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জনের প্রয়োজন আছে কিনা এবং সেখানে কোনো ধরনের কোনো অপূর্ণতা আছে কিনা সবকিছু দেখে মতামত দেন। সে মতামত অনুযায়ী যিনি প্রবন্ধকার তিনি বিষয়টি সংশোধন করে আবার জমা দেন। পরবর্তীতে সম্পাদনা পরিষদ আবার মিলিত হয় এবং সব সংশোধন ঠিকমতো করা হয়েছে কিনা দেখে নিশ্চিত হয়। তখন তারা এটা মুদ্রণের ব্যবস্থা করে। এটিই হচ্ছে একটি গবেষণা জার্নাল প্রকাশের ন্যূনতম রীতিনীতি। সেখানে যদি কোথাও ব্যতিক্রম হয় তাহলে তা নিশ্চয়ই দেখার বিষয়। আমি জানি না জার্নালগুলোয় প্রকাশিত যে নিবন্ধ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এখন আলোচনায় এসেছে সেগুলোর বিষয়ে নিয়মনীতি মেনে এডিটোরিয়াল বোর্ডের নিয়মিত সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা। তা এখন দেখার বিষয়। আমি শুনেছি যে কোনো একটি জার্নালে সম্পাদনা পরিষদের সভা বছরের পর বছর হয়নি। এটি কীভাবে ঘটতে পারে আমি জানি না।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। আপনি কী মনে করেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ আমাদের রক্ষা করা উচিত। শিক্ষকদের ওপর, শিক্ষার্থীদের ওপর নানা সময়ে নানা অত্যাচার-নির্যাতন নেমে এসেছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩-এর ওপর ভর করে আমরা সেসব কঠিন সময় পার করে এসেছি। আজকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, সিনেট, সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় আমাদের প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনা করেন তখন তাদের সব লিফলেটের এক নম্বর শর্তই থাকে যে, ‘আমরা নির্বাচিত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ সমুন্নত রাখব’। এ শর্ত পালন থেকে তারা যেন পিছিয়ে না যান সেটি আমি প্রত্যাশা করি এবং সেই শর্ত পালনের প্রথম পদক্ষেপই হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আদেশ যেন আমাদের নিজেদের দ্বারা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রশাসন সব সময় এ ব্যাপারে অতীতে সজাগ ছিল, আমরা আশা করব, ভবিষ্যতেও তারা সে বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকবে। কারণ ১৯৭৩-এর আদেশ আমাদের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার লঙ্ঘিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সম্মান, মর্যাদা রক্ষা করা কঠিন হবে।

সম্প্রতি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ উঠলে কী করা উচিত?

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে এ ধরনের অভিযোগ আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামকে নানাভাবে ক্ষুণ্ন্ন করে। এ ধরনের অভিযোগ এলে সবচেয়ে প্রথম যা করণীয় বলে আমি মনে করি তা হলো অভিযোগ যখন আসে তখন সেই অভিযোগকে পরিপূর্ণ তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা আছে কি নেই তা প্রমাণ করা। অভিযোগ হয়তো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আসতে পারে। এ অভিযোগের সত্যতা থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে। একটা স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি বলা হয় অভিযোগ সত্য নয়, তাহলে আমার মনে হয় জনমনে আর কোনো প্রশ্ন থাকে না। আর যদি অভিযোগ কোনোভাবে প্রমাণিত হয় সে ক্ষেত্রে দোষ যারই হোক না কেন তাকে চিহ্নিত করা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া একটি দায়িত্ব। কিন্তু যদি ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সেই পরীক্ষা পুনরায় নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প দেখি না। আমি আমার দায়িত্ব পালনকালে একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্রে কিছু ভুল পরিলক্ষিত হয় এবং সেই ভুল যখন পরীক্ষা হয়ে যায় তখন প্রকাশিত হয়, গণমাধ্যমে আসে। তারপর আমাদের সহকর্মীরা আমাদের বললেন, এ ভুলগুলো যাতে ছাত্রছাত্রীদের কোনো ক্ষতি না করে সেভাবে তারা সবাইকে মূল্যায়ন করবেন। অর্থাৎ ভুল প্রশ্নে তারা সবাইকে পূর্ণ নম্বর দিয়ে দেবেন। এভাবে একটা সমাধান করা নিশ্চিত করেন। কিন্তু পরে তাদের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেল সেই ভুলের সংশোধন করে যে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে সেখানেও কিছু ছাত্রছাত্রী অ্যাফেক্টেড হয়ে যাবে যারা হয়তো সে প্রশ্নের উত্তরই দেয়নি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। আমি মনে করি, অভিযোগ হয়তো আসবে। অভিযোগ আসার পর তদন্ত করাটাই হচ্ছে মূল দায়িত্ব।

উপাচার্য নির্বাচনে শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারলেও ডাকসু না থাকায় বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনে বাধা কোথায়?

ডাকসু নির্বাচন নিয়মিতভাবেই হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ডাকসু নির্বাচন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩-এর অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘদিন যাবৎ ডাকসু নির্বাচন কেন হচ্ছে না আমার মনে হয় এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই অবগত। ১৯৯০-এর পর ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে যে ধরনের খুনোখুনি হয়েছে তা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোভাবেই আর ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেনি। কোনো কোনো উপাচার্য অতীতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তারপর দেখা গেল যে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়েছে। আমি মনে করি, ডাকসুকে সচল করাটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সে কাজটি করতে গেলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং জাতীয় রাজনীতির নেতৃবৃন্দ সবারই একটি ঐকমত্যে আসতে হবে। যদি ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত হতো যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছে এবং একই সঙ্গে সংগঠনে যুক্ত থাকছে। এ ধরনের একটা ছাত্ররাজনীতি-সহায়ক পরিবেশ তৈরি করাটা বাঞ্ছনীয়। আমরা অতীতে ডাকসুর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা যখন বলি তখন এটাই দেখতে পাই যে তখন যারা ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছে নিয়মিত ছাত্ররা। ডাকসু নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র। অতএব ডাকসু নির্বাচনের প্রাক্কালে যে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে তা হচ্ছে সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সহাবস্থান। সেই সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্যই নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের হাতেই ছাত্ররাজনীতি আনা প্রয়োজন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ সচেতন, তারা যদি নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা সংগঠন পরিচালনার পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে এবং সঙ্গে প্রশাসন ও জাতীয় রাজনৈতিক দল সবাই ঐকমত্যে পৌঁছতে পারে আমার মনে হয় না ডাকসু নির্বাচন করা খুব কঠিন কাজ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভবিষ্যতে কোন পর্যায়ে দেখতে চান?

বর্তমানে আমাদের শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়ে লেখাপড়া করছে, বিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশে এসে লেখাপড়ার সুযোগ নিচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে এভাবে একটা বিশ্বায়িত সমাজে আমরা বসবাস করি। গণমাধ্যম সারা পৃথিবীর সীমান্তকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষা পদ্ধতি আজকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন যেখানে আমরা যে গ্র্যাজুয়েট তৈরি করব তারা হবে গ্লোবাল গ্র্যাজুয়েট বা বিশ্বমানের স্নাতক। বিশ্বমানের স্নাতক তৈরি করার জন্য যে সুযোগ-সুবিধা, যে অবকাঠামো দরকার তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা খুব জরুরি। এটা ভাবলে আমরা অনেকে হয়তো আশ্চর্য হব, প্রায় এক শ বছর হতে চলল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদে মৌলিক গবেষণার জন্য ‘গ্রিনহাউস’ দরকার। প্রায় এক শ বছর হতে চলা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ‘গ্রিনহাউস’ নেই। আমি দায়িত্ব পালনের শুরু থেকে বিশেষ আগ্রহ নিয়ে ‘গ্রিনহাউস’ প্রতিষ্ঠার জন্য নানামুখী প্রচেষ্টা করেছি। জীববিজ্ঞান অনুষদের আমার সহকর্মীরা তা জানেন। কিন্তু নানা বাধাবিপত্তি এবং মূলত অর্থায়নের অভাবে তা করা যায়নি। তবে অতিসম্প্রতি আমি বিদায় হওয়ার প্রাক্কালে আমাদের বন ও পরিবেশমন্ত্রী জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে আলোচনা করে এক জায়গায় এসে উপনীত হয়েছি যে, মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আমরা ‘গ্রিনহাউস’ নির্মাণ করব। একটি ‘গ্রিনহাউস’ ছাড়া, একটি ‘অ্যানিমল হাউস’ ছাড়া জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের কাজ করা যে কত দুরূহ তা আমরা উপলব্ধি করি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমস্যাই হচ্ছে আর্থিক সীমাবদ্ধতা। সেই আর্থিক সংকটের কারণে অনেক কিছুই করা যায় না। এখন আমরা চাইব এ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় যেন ন্যূনতম অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধায় নিয়ে আসা যায়, যেন আমরা যে স্নাতকদের এখান থেকে বের করব তারা যেন সত্যিকার অর্থে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের হয়। এখন আমরা সে ধরনের স্নাতক তৈরি করছি তার সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ুক।

 

 

 

সর্বশেষ খবর