জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মানবাধিকার কমিটিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) আনীত প্রস্তাব বিপুল ব্যবধানে পাস হয়েছে। এ প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ ১৩৫টি দেশ ভোট দেয়। বিরোধিতা করে চীন, রাশিয়া, লাওসসহ ১০টি দেশ। ভারত, জাপান, নেপাল, ভুটানসহ কিছু দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। ইরান ভোটদান পর্বকালে অনুপস্থিত থাকে। প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর সহিংসতা বন্ধ ও মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন পুনর্বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের ‘পূর্ণ নাগরিকত্ব’ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত ও রোহিঙ্গাদের ওপর যারা অত্যাচার-নিপীড়ন করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্যও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ৩১ অক্টোবর মানবাধিকারবিষয়ক কমিটিতে ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শিরোনামে ওআইসি খসড়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। এর কো-স্পন্সর ছিল ৯৭টি দেশ। প্রস্তাবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ‘মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত’ নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ সংকট সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হয়। যারা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, যেসব সামরিক, সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তি তাদের ওপর অত্যাচার করেছে— তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণ, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে এই প্রস্তাবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মানবাধিকারসংক্রান্ত কমিটিতে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে প্রস্তাব গ্রহণ করার পরপরই পূর্বনির্ধারিত সফরের অংশ হিসেবে চীন, জাপান, জার্মানি, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল, মার্কিন সিনেটের কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশ সফর করছেন। সফররত বিদেশি প্রতিনিধি দলের মধ্যে চীন ছাড়া অন্য সবাই রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মানবাধিকার কমিটিতে বন্ধুদেশ হিসেবে পরিচিত চীন, রাশিয়ার প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। ভারতসহ সার্কভুক্ত তিনটি দেশের ভোটদানে বিরত থাকাও ছিল বাংলাদেশের কাছে অপ্রত্যাশিত। তবে আশার বিষয়টি হলো, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিশ্বজনমত ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে যা সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।