রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিদাত থেকে দূরে থাকতে হবে

মাওলানা মুহম্মাদ সাহেব আলী

আরবি বিদাত শব্দের অর্থ নতুন কোনো বিষয় সৃষ্টি করা। শরিয়তের ভাষায় আমল ইবাদত তথা দীন বা ধর্ম পালনের নামে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবি ও তাবেয়িনদের সময়েও যা অনুসরণ করা হয়নি তেমন পদ্ধতিই বিদাত। খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে ভণ্ড নবীর আবির্ভাব, জাকাত অস্বীকার, ধর্মদ্রোহিতা, খারেজি ফিতনাসহ অসংখ্য বিদাতের প্রচলন হয়। তখন কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী নতুন উদ্ভাবিত এসব বিষয় বিদাত হিসেবে অভিহিত হয়েছিল। রসুল (সা.)-এর আমলে হয়নি এমন অনেক কাজ খোলাফায়ে রাশেদিন ও তাদের পরের আমলে হয়েছে। এমন অনেক কাজ কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী না হওয়ায় বিদাত বলে অভিহিত করা হয়নি। যেমন কোরআন মজিদ সংকলন, কোরআন মজিদে হরকত ও নোকতা সংযুক্তকরণ, জামাতসহকারে তারাবির নামাজ আদায়, জুমার নামাজের আগে দ্বিতীয় আজান ইত্যাদি। বিদাতের পরিচয় দিতে গিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের দীনে এমন কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে যা এই দীনের মধ্যে নয়; তবে তা মারদুদ বা প্রত্যাখ্যাত। (মুসলিম)। হাদিসটি পর্যবেক্ষণ করলে উপলব্ধি করা যাবে প্রত্যেক নতুন কাজ প্রত্যাখ্যাত নয়; বরং কেবল সেই নতুন কাজই প্রত্যাখ্যাত হবে, দীনে যার কোনো দৃষ্টান্ত বা ভিত্তি নেই অথচ সেটিকে দীনের আবশ্যক কাজ হিসেবে ও ইসলামী আকিদার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সেটি দীনের মূল ভিত্তির মধ্যে সংযুক্ত হয়ে যাওয়ার বিপদ সৃষ্টি হয়। ইসলামের মৌলিক ভিত্তির মধ্যে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়। এ ধরনের হ্রাস-বৃদ্ধি ইসলামবিরোধিতার শামিল; এটি দীনের জন্য বড় ফিতনা। হজরত ইবনে রাজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, বিদাত দ্বারা সেই নতুন কাজ বোঝায় শরিয়তে যে কাজের কোনো ভিত্তি নেই। তবে যেসব কাজে শরিয়তে ভিত্তি রয়েছে সেগুলো শাব্দিক অর্থে বিদাত হলেও শরিয়তের দৃষ্টিতে বিদাত নয়। আল্লামা ইবন তাইমিয়া (রহ.) বলেন, বিদাত এমন কাজ উদ্দেশ্য যা বিশ্বাস ও ইবাদতে কোরআন, হাদিস ও ইজমাবিরোধী হয়। যেমন খারেজি, রাফেজি, কাদেরিয়া, জাহমিয়ার আকিদা-বিশ্বাস। (মাজমুউল ফাতওয়া, তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ১৯৫)। ইমাম বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) বলেন, বিদাত দুই ধরনের। যদি তা শরিয়তের মুসতাহসানের মধ্যে পড়ে, তা হবে বিদাতে হাসানাহ। আর যদি তা মুসতাকবিহারের মধ্যে পড়ে তা হবে বিদাতে সাইয়্যিয়াহ। (উমদাতুল কারি ১১ খণ্ড, পৃ. ১২৬)। বিদাতে হাসানার প্রমাণ, ‘যে কেউ ইসলামের মধ্যে ভালো রীতি প্রচলন করবে, তিনি এর জন্য সওয়াব পাবেন। যারা এর ওপর আমল করবে, এর জন্যও সওয়াব পাবে।’ হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, যে কাজকে মুসলমানরা ভালো মনে করে, তা আল্লাহতায়ালার কাছেও ভালো হিসেবে গণ্য হবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা বিদাতির কোনো আমল কবুল করেন না। না রোজা, না নামাজ, না সদকা, না হজ, না ওমরা, না জিহাদ, না নফল, না ফরজ। ইসলাম থেকে সে বের হয়ে যায়, যেমন আটার খামিরা থেকে (অতি সহজে) চুল বেরিয়ে আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ)।

আল্লাহ আমাদের বিদাত থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামী গবেষক

সর্বশেষ খবর