সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কূটনীতিক সম্মেলন

দেশ সেবার দিক নির্দেশনা অর্জিত হোক

দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে কিনা এ প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। আজকের যুগে ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন, জাতীয় নিরাপত্তা সবকিছুর সঙ্গে কূটনীতির সংশ্লিষ্টতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক মিশনের সাফল্য-ব্যর্থতা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। দেশের এক কোটি মানুষ বিদেশে কর্মরত, তাদের আয় দেশের অর্থনীতিতে প্রাণভোমরার ভূমিকা পালন করছে। সস্তা শ্রমের জন্য বাংলাদেশকে বিনিয়োগের সম্ভাব্য কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছেন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা। বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহ দানের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক মিশনগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। আঞ্চলিক নানা বিরোধে অন্যান্য দেশের সমর্থন আদায়েও কূটনৈতিক ভূমিকার বিকল্প নেই। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও কূটনীতির অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো সে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হচ্ছে কি-না তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ভিআইপিদের প্রটোকল দেওয়া নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো। কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে বেশি সময় কেটে যাচ্ছে প্রটোকলের পেছনেই। কয়েকটি মিশনে প্রটোকলই প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে। এ মিশনগুলোর এক বা একাধিক কর্মকর্তাকে দিনের পর দিন কাটাতে হচ্ছে এয়ারপোর্টে। আকাশপথে স্টপওভার বেশি থাকা দেশগুলোতে মাঝে মাঝে প্রটোকলের চাপে মিশনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালানোই দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক উদ্যোগের অভাবে সোনালি সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাড়ছে না বাণিজ্য-বিনিয়োগ। দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানোর কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না বেশিরভাগ মিশন। কূটনীতিকদের অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে প্রটোকলের সীমা ছাড়িয়ে যায়। সব মন্ত্রীই বিদেশে ‘পূর্ণ’ মর্যাদা চান। তারা ট্রানজিটের জন্য বিমানবন্দরগুলোয় স্বল্প সময় কাটালেও নানান ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয় দূতাবাসকে। এমনকি সরকারি দলের প্রভাবশালী এমপিরাও চান বিধি বহির্ভূত নানান সুবিধা। না পেলে সম্মানহানির অভিযোগ করা হয়। যে দূতাবাসের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ ওঠে, সেখানে কর্মরতদের ‘বিরোধী দলের সমর্থক’ বলার ঘটনাও রয়েছে। দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো যাতে জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করার সক্ষমতা অর্জন করে সে লক্ষ্য নিয়ে গতকাল থেকে রাজধানীতে শুরু হয়েছে ৫৮টি দেশে কর্মরত কূটনৈতিক মিশন-প্রধানদের সম্মেলন। আমরা আশা করব এ সম্মেলন দেশের যথার্থ প্রতিনিধিত্ব করার জন্য করণীয় কর্তব্য নির্ধারণে সক্ষম হবে। দেশের চাহিদা পূরণে কূটনৈতিক মিশনগুলোকে কীভাবে সক্রিয় করা যাবে সে ক্ষেত্রে সম্মেলনে পথ নির্দেশ অর্জিত হবে এমনটিও কাম্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর