সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মানবতার মুক্তিদূত রসুল (সা.)

মাওলানা মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

রবিউল আউয়াল মাসে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, সর্বশেষ ও সেরা নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন ও ওফাত লাভ করেন। মাত্র ৬২ বছরের জীবনে তিনি ধর্মপ্রচার, সমাজ সংস্কার ও জাতি গঠনে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অতুলনীয়। তিনি ছিলেন বিশ্বের সেরা আইন প্রণেতা।

রসুলুল্লাহু হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল দীনের প্রচারক ও সমাজ সংস্কারকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি শক্তিশালী জাতির প্রতিষ্ঠাতাও। জাতি গঠনে তাঁর অসামান্য কৃতিত্ব সম্বন্ধে ঐতিহাসিক পি কে হিট্টি বলেছেন, ‘মরণশীল জীবনের অতি স্বল্প পরিসরের মধ্যে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশৃঙ্খল প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে এমন একটি জাতি ও সুশৃঙ্খল রাষ্ট্র গঠন করেন যা ইতিপূর্বে শুধু ভৌগোলিক সীমারেখায় নিবদ্ধ ছিল।’ তাঁর অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা আবরদের একটি সংঘবদ্ধ জাতি হিসেবেই কেবল প্রতিষ্ঠিত করেনি, আন্তর্জাতিকতার ক্ষেত্রকেও তিনি প্রসারিত করছিলেন। বিশ্বমানবতার জয়ধ্বনি শুনিয়েছেন এই মহাপুরুষ। বিদায় হজে তিনি অনুসারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘হে লোকসকল, স্মরণ রেখ, তোমাদের আল্লাহ এক, তোমাদের (আদি) পিতা এক। হুঁশিয়ার! কোনো আরবের ওপর অনারবের যেমন প্রাধান্য নেই, তেমনি অনারবের ওপর আরবেরও কোনো প্রাধান্য নেই; কোনো শ্বেতাঙ্গের ওপর যেমন কৃষ্ণাঙ্গের প্রাধান্য নেই, তেমনি কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গেরও কোনো প্রাধান্য নেই, পরস্পরের মাপকাঠি হচ্ছে একমাত্র খোদাভীতি বা সত্কর্ম।’ মানবতার মুক্তিদূত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে বিভিন্ন মতবাদের অনুসারীদের সমন্বয়ে একটি জাতি গঠনের চেষ্টা করেছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম জাতি, ধর্ম ও মতবাদ নির্বিশেষে সর্বশ্রেণির মানুষের সদিচ্ছা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেন এবং তাঁর সে চেষ্টা সাফল্যমণ্ডিত হয়েছিল। শ্রেণি ও বংশমর্যাদা নির্বিশেষে একই ইসলামী শরিয়ত দ্বারা সর্বশ্রেণির মানুষের ওপর শাসন পরিচালনার জন্য তিনি মদিনায় একটি আদর্শ প্রজাতন্ত্র কায়েম করেছিলেন।

মদিনায় আগমনের পর হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার কাছে যে সনদ পেশ করেছিলেন, তাতে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সব মানুষের জানমাল ও ধর্মের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। দুনিয়ার যাবতীয় ধর্মীয় সংঘাতের মধ্যে সর্বপ্রথম তিনি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ন্যায়সঙ্গত সুযোগ-সুবিধা দানের ক্ষেত্রে তিনি কোনো সামাজিক বৈষম্যের স্থান দিতেন না এবং তাঁর প্রচারিত ধর্মমতে পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি বিদ্বেষ প্রদর্শনের কোনো সুযোগ ছিল না। তিনি তাঁর অনুসারীদের অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি সহনশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর অনুসারীদের অপর ধর্মাবলম্বীর উপাস্য দেবদেবীর নিন্দা করতে নিষেধ করেছিলেন। এখানেই হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব।

►লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর