বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পিলখানা হত্যা মামলার রায়

দোষীরা শাস্তি এড়াতে পারল না

পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ে বিডিআর বিদ্রোহের সময় সেনা কর্মকর্তাদের নির্বিচারে হত্যার দায়ে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর সাজাই বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত। গত সোমবার দেওয়া রায়ে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে বিচারাধীন আদালতে দেওয়া ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে। ইতিহাসের বর্বরতম এ হত্যাকাণ্ডে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। মামলার রায়ে উচ্চ আদালত বলেছে, দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি এবং গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জাতি কিছু প্রতিশ্রুতিশীল, উজ্জ্বল সম্মানিত এবং প্রতিভাবান সেনা কর্মকর্তাকে হারিয়েছে। এ শূন্যতা পূরণে দীর্ঘ সময় লাগবে। অসন্তুষ্ট বিডিআর বিদ্রোহীরা যে অপরাধ করেছে তা মর্মান্তিক, ভয়াবহ, পৈশাচিক এবং নারকীয়। কোনো সভ্য সমাজ এটা মেনে নিতে পারে না। আদালত একই সঙ্গে সাত দফা সুপারিশও করেছে। এতে বলা হয়, অপারেশন ডালভাত কর্মসূচিতে বিডিআরের মতো বাহিনীকে যুক্ত করা উচিত হয়নি, ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ জাতীয় কর্মসূচিতে যেন নেওয়া না হয়। বিজিবি আইন অনুযায়ী সৈনিক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব বজায় রাখা ও অভ্যন্তরীণ মতবিনিময়ের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সুপারিশে। বিডিআর বিদ্রোহের আগাম তথ্য দিতে গোয়েন্দারা কেন ব্যর্থ হয়েছেন তার কারণ খুঁজে বের করার ওপরও আদালত তাদের সুপারিশে তাগিদ দিয়েছেন। বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের প্রাণহানি নিঃসন্দেহে জাতীয় জীবনের এক মর্মান্তিক ঘটনা। এ ভয়াবহ অপরাধে জড়িত ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৮৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক বিডিআর সদস্যকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাকে কাণ্ডজ্ঞানহীন উন্মত্ত আচরণের অনিবার্য পরিণতি বলে অভিহিত করা যায়।  ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ যাতে কোনোভাবে মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবারই সতর্ক থাকা উচিত।

সর্বশেষ খবর