সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এসেছিলেন রসুল (সা.)

মুহম্মদ ওমর ফারুক

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এসেছিলেন রসুল (সা.)

আল্লাহর একটি পরিচয় তিনি ন্যায়বিচারক। মানবজাতিকে তিনি তাদের সামগ্রিক জীবনে আদল বা ন্যায় প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম লক্ষ্য ছিল পৃথিবীতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য আল্লাহ তাকে এমন এক ভূখণ্ডে পাঠান যেখানে ন্যায় বা ইনসাফ লোপ পেয়েছিল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের আগে গোটা আরব জাহানে ন্যায়বিচার বলতে কিছুই ছিল না। জোর যার-মুল্লুক তার এটাই ছিল তখনকার সামাজিক রীতি। নিরীহ নির্যাতিত মানুষের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠত। মানুষ, মানুষ হিসেবে সবাই সমান। সাম্য ও সম্প্রীতির এ মূলমন্ত্র সমাজ থেকে তিরোহিত হয়ে গিয়েছিল। এমনি এক কঠিন মুহূর্তে মহান আল্লাহতায়ালা ন্যায়বিচারের মূর্ত প্রতীক হিসেবে তাঁর প্রিয় হাবিব রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরবের বুকে প্রেরণ করেন রাহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবে। মহান আল্লাহতায়ালা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে ন্যায়প্রতিষ্ঠার সংবিধান মহাগ্রন্থ আল কোরআন প্রদান করেন। কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করলেন— নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ইনসাফ ও সদাচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিচ্ছেন।

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কর। এটি তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী।’ অর্থাৎ ন্যায় ও ইনসাফ না করলে তাকওয়া পরহেজগারি অর্জিত হয় না। আল্লাহর প্রতি বান্দার নিরঙ্কুশ আনুগত্য নিশ্চিত করার স্বার্থে ন্যায়বিচারের প্রতি আন্তরিক হতে হবে।

ইনসাফ প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে তাকওয়ার অন্যতম ভিত্তি। যার মধ্যে ইনসাফ নেই তার মধ্যে তাকওয়াও নেই। স্বজনপ্রীতি, জুলুম-অত্যাচার, হিংসা-প্রতিহিংসা এসব বিষয় তাকওয়ার অন্তরায়। স্বজনপ্রীতি জাহেলি যুগের এক ধরনের বর্বরতা। ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আপসহীন। তিনি স্বজনপ্রীতির মূলে কুঠারাঘাত করে ইনসাফের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন : আল্লাহর কসম, যদি আমি মুহাম্মদের প্রিয় কন্যা ফাতেমাও চুরি করে তাহলে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দেব (বুখারি, মুসলিম)। ন্যায় বিচারকদের আখিরাতে পুরস্কৃত করা হবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় যারা ন্যায় বিচারক তাঁরা পরকালে মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর ডান পাশে নূরের মিম্বরে সমাসীন হবে। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। তাই জীবনের সব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা মুমিনদের দায়িত্ব। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে তৌফিক দিন।

            লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর