বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসলামে নারী জাতির মর্যাদা

মাওলানা মুফতি ওলিউল্লাহ পাটোয়ারী

ইসলামে নারী জাতির মর্যাদা

নারী জাতির ধর্মীয় অধিকার : বিভিন্ন ধর্মে যেখানে নারীকে সব পাপের উৎস বা শয়তানের প্রবেশদ্বার প্রভৃতি বলা হয়েছে, সেখানে ইসলাম নারীকে অমূল্য সম্পদ, পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী, পুরুষের ভূষণ ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করেছে। আর অধিকারের প্রশ্নে নারীকে কোথাও পুরুষের চেয়ে বেশি অধিকার এবং  কোথাও সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। তেমনি আমলের ক্ষেত্রে নারীরা পরিপূর্ণ প্রতিদান পায়। এ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন— যে-ই নেক কাজ করবে, পুরুষ হোক বা নারী এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে আমি অবশ্যই তার প্রতিদান দিব যেরূপে আমল করেছে তার চেয়ে উত্তমভাবে। (সূরা নাহল, আয়াত নং ৯৮)।

নারীর অর্থনৈতিক অধিকার : ইসলাম নারী জাতিকে পরিপূর্ণ মালিকানা অধিকার প্রদান করেছে। তাই নারীরা পুরুষদের মতোই জমিজমা, ধনদৌলত, কলকারখানা, দোকানপাট, বাড়ি-গাড়িসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে পারে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন— পুরুষরা যা অর্জন করবে সেটা তাদের অংশ এবং নারীরা যা অর্জন করবে সেটা তাদের অংশ। (সূরা নিসা, আয়াত নং ৩২)। তেমনিভাবে নারীরা ওয়ারিশি সম্পত্তিতে অংশীদার হয় ন্যায়ানুগভাবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, পিতা-মাতা ও আত্মীয়জনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের অধিকার রয়েছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদের অংশ রয়েছে। তা অল্প হোক বা বেশি। তা সুনির্দিষ্ট অংশ। (সূরা নিসা, আয়াত নং ৭)। নারীর শিক্ষা অধিকার : বিশ্বনবী (সা.) পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ইমান-আমলের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন পরিমাণ ইলম শিক্ষা করা ফরজ বলেছেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন— প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ইলম অর্জন করা ফরজ। (মুস্তাদরাকুল ওয়াসিল, হাদিস নং ২১২৫০)। মহানবীর কাছে পুরুষ সাহাবিরা যেমন ইলম শিখতেন, তেমনি মহিলা সাহাবিরা ইলম শিক্ষা করতেন। তবে সহশিক্ষা নয়। বরং নারীদের জন্য আলাদা শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।

এমনকি রসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের শিক্ষা-দীক্ষা প্রদানের অজস্র ফজিলত বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন— যে ব্যক্তি তিনজন মেয়েকে লালন-পালন করবে এবং তাদের শিষ্টাচার শিক্ষা দেবে আর তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করবে, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৪৮১)। নারীর বিবাহ ও দেনমোহরের অধিকার : একজন মুসলিম নারী নিজ পছন্দমতো যে কোনো একজন মুসলিম পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অধিকার রাখে। অভিভাবকরা তাকে জোর করে বিবাহ দিলে উক্ত বিবাহ টিকিয়ে রাখা না রাখার অধিকার ইসলাম নারীকে দিয়েছে। এক হাদিসে বর্ণিত আছে— এক বালেগ কুমারী মেয়ে নবীজীর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমার অমতে আমাকে বিবাহ দিয়েছেন। একথা শুনে নবীজী তাকে এ স্বামীর সঙ্গে থাকা না থাকার অধিকার দিয়েছেন। তেমনি ইসলাম নারীকে দেনমোহরের বিশেষ অধিকার প্রদান করেছে।

লেখক : খতিব, বাইতুননূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ, ওলি মার্কেট, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর