সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কেমন আছে মধ্যবিত্তরা!

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ

কেমন আছে মধ্যবিত্তরা!

মানব সভ্যতার ধারাবাহিকতায় সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা উন্মেষে  মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে শ্রেণি বিন্যাসের রূপান্তর ঘটেছে। উৎপাদনশীলতায় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কালক্রমে সমাজও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী তখন থেকেই আমরা সমাজের মানুষদের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছি। দাস ও সামন্ত  প্রথার যুগে মানুষ প্রভু-দাস, জমিদার-কৃষক অর্থাৎ উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল।  আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় এই দুয়ের মাঝখানে জ্ঞানী, ধনসম্পদ ও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক শক্তিবলে মধ্যবিত্ত নামক আরেক শ্রেণির মানুষের জন্ম ও বিকাশ ঘটেছে। যদিও মধ্যবিত্তের কোনো অবয়ব নেই, তবুও বর্তমান আধুনিক সমাজে তাদের অস্তিত্ব, বিকাশ ও গ্রহণযোগ্যতা সমাজবিজ্ঞানীরা স্বীকার করে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুগে যুগে সামাজিক রূপান্তর ও পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্স বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল এই মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের দ্বারা। তেমনি আমাদের দেশেও স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক ও অধিকার আদায়ের আন্দোলনেও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের যে একটা বিশাল ভূমিকা আছে তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এমনকি বর্তমান সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক যে সাফল্য এসেছে তা-ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাত ধরে। কিন্তু আমাদের দেশে এই মধ্যবিত্তরা কেমন আছে! বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তাদের জীবন আচরণে কোনো মৌলিক পরিবর্তন এসেছে কিনা, না-কি দৈনন্দিন জীবনযাপনে অনেক দুঃখ-কষ্ট, নিরাপত্তাহীনতা, সুশাসনবিহীন নাগরিক অধিকারহীনতাসহ নানাবিধ বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে—তা নিয়ে আজকের এই লেখা।

যদিও দীর্ঘদিন ধরে দেশ একটা রাজনৈতিক অচলাবস্থা বা সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। মানুষ তাদের ভোটের অধিকার হারিয়েছে। একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার দেশ পরিচালনা করছে। তার মধ্যে আবার অর্থনৈতিক সংকট যদি প্রবল হয় তাহলে এর প্রভাব নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তসহ সব মানুষের জীবনযাত্রার ওপর পড়বে তা অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিশেষ করে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রমান্বয়ে যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে মধ্যবিত্ত মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে চালের দাম এখনো অস্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। আমিষের মধ্যে মাছ-মাংসের দাম তো সর্বদা বেড়েই চলছে। বেড়েই চলছে আবার পিয়াজের দাম। সাম্প্রতিককালে পিয়াজের বাজারমূল্য ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এর পাশাপাশি শীতকালীন সবজিতে বাজার ভরপুর হলেও দাম আগের মতোই চড়া ও ঊর্ধ্বমুখী। কোনো পণ্যের দামে স্থিতিশীলতা নেই। পাইকারি ও খুচরা বাজারে জিনিসের দামের পার্থক্য সাধারণ মানুষকে বেশ হাঁপিয়ে তুলছে।

অন্যদিকে ব্যবসায়ী, গ্রাহক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের বিরোধিতার পরেও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াল সরকার। এ নিয়ে বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে আট দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এ পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫.৩ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বিইআরসি। যা চলতি মাস ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন মূল্যহারের কারণে বিদ্যমান ৬.৫০ টাকা থেকে বেড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৬.৮৫ টাকায় দাঁড়াবে। এ মুহূর্তে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষসহ অর্থনীতিবিদ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজুুমার্স অ্যাসোসিয়েশন বা ক্যাব। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে বিদ্যমান বাস্তবতায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১ থেকে ৬ পয়সা কমানো সম্ভব ছিল। কিন্তু বিদ্যুতের দাম ৫.৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম তিন বছর আগের মূল্যের অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং তেলের মূল্য কমার কারণে বাংলাদেশে ফার্নেস অয়েল দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও হ্রাস পাওয়ার কথা। কিন্তু সরকার প্রতি বছর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেই চলেছে। ফলে দুর্ভোগের প্রহর গুনছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। বিদ্যুতের এই মূল্য বৃদ্ধিতে আরেক দফা দ্রব্যমূল্য বাড়বে। বাড়বে পরিবহন ভাড়া। শিল্প উৎপাদন বেড়ে মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের। এতে নিরুৎসাহী হবে বেসরকারি খাত। ফলে বিনিয়োগ কমে আসবে। সে ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি খাতে চাকরিজীবী যাদের বেতন বেড়েছে তাদের বিদ্যুৎ, বাসা ভাড়াসহ ভোগ্যপণ্যের বাড়তি ব্যয়ে যে অর্থ খরচ হবে তাতে আর্থিক টানাটানি লেগেই থাকবে। উল্লেখ্য, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িভাড়া বৃদ্ধি বা কমানো সংক্রান্ত কোনো গ্রহণযোগ্য সরকারি নীতিমালা না থাকায় বাড়ির মালিকরা যে কোনো ছুঁতোয় বাসাভাড়া বাড়িয়ে দেন। ফলে বাসা ভাড়ার চাপ গুনতে হবে মধ্যবিত্তদের। বেতন বৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বস্তির কথা বলে যারা বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করছিল সেটা মনে হয় ধুলোয় মিশে গেল। কিন্তু কী দাঁড়াবে বেসরকারি বা ব্যক্তি খাত যেমন শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্ট খাতসহ অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে যাদের বেতন মোটেই বাড়েনি। ক্রয়ক্ষমতা হারাবে তারা। ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান হবে নিম্নগামী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মামুলি ব্যাপার, জনজীবনে এর প্রভাব পড়বে না।’ এখন আমরা হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। অর্থনীতিবিদ না হয়েও বলা যায়, উৎপাদনের উপকরণগুলোর মূল্যবৃদ্ধি পেলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বেই। বিদ্যুৎ সে ধরনের একটা উপকরণ যা ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত। একই সঙ্গে বিদ্যুতের বর্ধিত বিল গুনতে হবে ভোক্তাদের আয় থেকে। তাই জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব যে পড়বে তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। পক্ষান্তরে বিভিন্ন শহরসহ আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচলে যে পরিমাণ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে তাতে করে এসব গণপরিবহনে চলাচলরত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের নানা ধরনের জটিল ও গুরুতর রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। তদুপরি ফেরি পারাপারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা আরেক ধরনের বিড়ম্বনা। এ ছাড়া বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সিক্যাব, অটোরিকশাতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার দরুন মেরুদণ্ডের সমস্যাসহ মানসিক চাপ বেড়ে বিভিন্ন স্নায়বিক বৈকল্য যেমন হাইপারটেনশন, ব্রেন স্ট্রোক, হৃদরোগের ঝুঁকি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। অন্যদিকে পাবলিক পরীক্ষা, প্রাইভেট পরীক্ষাসহ সব ধরনের চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুদে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি), জুনিয়র শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (জেএসসি) কোনো পরীক্ষারই প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে আর বাকি থাকছে না। স্মার্টফোনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র এখন এক নিমিষেই চলে যাচ্ছে পরীক্ষার্থীর হাতে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের স্তরটি আজ কোন জায়গায় এসে ঠেকেছে তা পুরো জাতির ভেবে দেখা দরকার। আর এসব কর্মকাণ্ড আমাদের জাতিকে কোন অন্ধকার গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে তা কি আমরা চিন্তা করছি? জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে স্বীকৃত শিক্ষা নিয়ে এ ধরনের অনৈতিক ক্রিয়াকর্ম সুশিক্ষিত জাতি গড়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করবে। আর এর সম্পূর্ণ খেসারত দিতে হচ্ছে একেবারে সুবোধ-নিরীহ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের। তাদের সন্তানদের পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষার জন্য লেখাপড়ার খরচ বাবদ একটা মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়। জিপিএ-৫ পাওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত হতে গিয়ে সন্তানদের টিউটরের কাছে পড়ানোর জন্য তাদের আয়ের একটা সিংহভাগ চলে যাচ্ছে। ফলে ঋণগ্রস্ত হয়ে খাবার ও অন্যান্য খরচ কমিয়ে শিক্ষা খাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে মধ্যবিত্ত পরিবারে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যা জাতিকে এক মহাবিপদে ফেলে দিতে পারে।

পক্ষান্তরে আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটা বিশাল অংশ এসেছে মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী থেকে। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত পরিবর্তন না হওয়ায় এখানে ক্ষমতাসীনদের একচেটিয়া আধিপত্য বিরাজমান। যে কারণে বিরোধী জোট বা বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মী হলেই তাকে নানা ধরনের হয়রানি, মামলা-হামলা, জেল-জুলুম হুলিয়ার মোকাবিলা করতে হয়। সারা দেশে বিরোধী জোটের কেন্দ্রীয়-স্থানীয় নেতাসহ কর্মী-সমর্থকদের নামে ২৪ হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে গুম-খুন, অপহরণ-হত্যাসহ নানা ধরনের বর্বর  কাজ। ফলে যে মানুষটি গুম-খুন বা অপহরণ হচ্ছে সে মানুষটির আর্থিক ও পারিবারিক বিপর্যয় ঘটে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। আবার যাদের বিরুদ্ধে ডজন ডজন মামলা হয়েছে তারা জেল খাটা ও আদালতে হাজিরা দিতেই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। ফলে মধ্যবিত্ত এ শ্রেণির মানুষের ক্রমাবনতি ঘটে দরিদ্র জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে পরমতসহিষ্ণুতার অভাব থেকে। যার প্রভাব পড়ছে সমাজের ওপর। একশ্রেণির মানুষ ক্ষমতার জোরে অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হচ্ছে। সাধারণ মানুষ শ্রেণিচ্যুত হয়ে মধ্যবিত্ত থেকে দরিদ্রে পরিণত হচ্ছে। বলাবাহুল্য, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অব্যবস্থাপনা-অনিয়মের ফলে যে ধরনের লুটপাট হচ্ছে তা দেশের অর্থনীতির জন্য রীতিমতো অশনিসংকেত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋণের নামে গ্রাহকদের হাজার হাজার কোটি টাকার আমানত লুটে নিচ্ছে ঋণ খেলাপিরা। এভাবে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপিরা নিয়ে গেছে। ফলে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। দুর্নীতিবাজ ব্যাংক মালিক, কর্মকর্তা ও ঋণ খেলাপিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় তারা ভুয়া এলসি খুলে এবং বিভিন্ন কৌশলে বিদেশে অর্থ পাচার করছে। এর ফলে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে করে বেকারত্ব ও সামাজিক বৈষম্য আরও বাড়বে বৈ কমবে না।

পরিশেষে বলা যায়, যুগে যুগে দেশে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় উন্নয়নে মধ্যবিত্তের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের দেশও এ থেকে ব্যতিক্রম নয়। কেননা এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমাজ সুষ্ঠু চিন্তার ধারক ও বাহক। বাংলাদেশের গত কয়েক দশকের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মধ্যবিত্তের একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রের মৌল-কাঠামো অর্থনীতি কার্যত রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। আবার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সামাজিক উন্নয়নের সূচক বৃদ্ধি করে। তখন মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। আবার বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও যে তিনটি ভিত্তি ছিল যথাক্রমে— মানবিক মর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার তা এখনো পূর্ণাঙ্গরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমনকি যে মধ্যবিত্ত শ্রেণিটি নিরন্তর জীবন-সংগ্রাম করে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল সেটাও আজ এক ধরনের সংকটে নিপতিত।  একই সঙ্গে সমাজের স্থিতি ও পরিশুদ্ধ সামাজিক সংস্কার যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাতে হয় নানা আর্থিক টানাপড়েন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজ তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ফলস্বরূপ সামাজিক ঐতিহ্যসম্পন্ন একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, স্বজনরা হচ্ছে অবহেলিত, উপেক্ষিত। রাষ্ট্রে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা না থাকায় প্রাত্যহিক অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধাগুলো কতিপয় নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর হাতে চলে যাচ্ছে। এতে চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে আপামর সাধারণ মানুষ।  ফলে এই কোঠারিভুক্ত স্বার্থান্বেষী সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে তারা খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে কখনো নীরব আবার কখনো সরবে নিশ্চিতভাবে ভেঙে পড়ছে সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সংস্কৃতির ভাবধারা, ঐতিহ্য। যা আমাদের বিকশিত মধ্যবিত্তসম্পন্ন মানুষের জীবনে বড় আঘাত।

লেখক : চেয়ারম্যান, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি

ই-মেইল : [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর