বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এরশাদের ভোট বিপ্লব, নাহিদের কেন পদত্যাগ নয়?

পীর হাবিবুর রহমান

এরশাদের ভোট বিপ্লব, নাহিদের কেন পদত্যাগ নয়?

বছরের শেষে ভোটযুদ্ধ ছিল। শেষ ভোটযুদ্ধটিও ছিল সুষ্ঠু নিরপেক্ষ- প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উত্সবমুখর। সেটি হচ্ছে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বিএনপি প্রার্থী জামানত হারানোর পরও দলের মহাসচিব বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে শাসক আওয়ামী লীগ শোচনীয় পরাজয় মেনে নিয়ে বলেছে, গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। রংপুরের দুর্গ পুনরুদ্ধার করে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও তার পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বড় গলায় কথা বলছেন। ভোটযুদ্ধের বাইরে থাকা নবগঠিত চার দলের যুক্তফ্রন্ট আহ্বায়াক সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, জনগণ আর আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে চায় না। শাসক দল আওয়ামী লীগ আরও বলেছে, স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। বিএনপিও অভিন্ন মনোভাব দেখিয়েছে। এর আগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের পর বিএনপি বলেছে, জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। আওয়ামী লীগ পরাজিত হলেও তাদের ভোট বেড়েছে বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিল। এটা সত্য সেই নির্বাচনে বিএনপির শক্তিশালী জনপ্রিয় প্রার্থীর বিপরীতে আওয়ামী লীগ নতুন নারী মুখ দিয়ে প্রমাণ করেছে তাদের ভোট বেড়েছে। কিন্তু রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোট প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস না নেমে থাকলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ইমেজ সংকট ছিল তলানিতে। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনে কতটা ভুল করেছিল, ভোটের ফলাফল দেখার পর সেটি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। জাসদ থেকে জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি থেকে জেপি, জেপি থেকে আওয়ামী লীগে এসে বিগত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। সেই নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে দুজন প্রার্থী হয়েছিলেন। এরশাদ ও জাতীয় পার্টি সে নির্বাচনে ছিলেন দর্শকের ভূমিকায়। তবুও বিদ্রোহী প্রার্থী এবারের বিজয়ী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ৭০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এবার এরশাদ মোস্তফাকে শুধু প্রার্থীই করেননি, বিদ্রোহী হওয়ায় নিজের ভাতিজাকে বহিষ্কার করে দলীয় শৃঙ্খলাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কোমর বেঁধে জাতীয় পার্টিকে ঠেলে দিয়েছিলেন ভোটযুদ্ধের বিজয় ছিনিয়ে আনতে। জনপ্রিয় প্রার্থীকে নিয়ে এরশাদ ও জাতীয় পার্টি মরণ লড়াই করে ব্যালট বিপ্লবে লাখো ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে এসেছেন। এরশাদের এই ব্যালট বিপ্লব তাকে রংপুরের দুর্গই ফিরিয়ে দেয়নি; আগামী দিনের জাতীয় নির্বাচনে তার দরকষাকষির বাজার দরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এরশাদ এখন গাইবান্ধা এক আসনের উপনির্বাচনে জয়ের জন্য লড়বেন। রংপুর এখনো যে তার এই বার্তা প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তিকেই নয়, দেশবাসীকেও দিতে পেরেছেন। দেশের সব নির্বাচনে জামায়াতের যেমন ন্যূনতম ভোটের অঙ্ক রয়েছে, তেমনি এরশাদেরও একটি ভোট ব্যাংক রয়ে গেছে। সেটির ওপরেই আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তিনি যে পথ হাঁটবেন সেখানে শাসক দল যেমন তাকে হারাতে চাইবে না, তেমনি সুযোগ পেলেই বিএনপি লুফে নিতে চাইবে। রাজনীতির বাজারে চাউর হয়েছিল, এরশাদের ভাই জি এম কাদেরকে দিয়ে বার্তা পাঠিয়েছিল এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্যের। যেখানে এরশাদকে রাষ্ট্রপতি ও সংসদের ১০০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। বিএনপি আওয়ামী লীগের বাইরে দূরত্বে থাকলেও তৃতীয় বৃহত্তম নেতা হিসেবে এরশাদ এখনো যে ফ্যাক্টর রংপুর নির্বাচন সেই চিত্রও রাজনীতির ময়দানে তুলে এনেছে। রংপুরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী সরফুদ্দিন ঝন্টু দল বদলেই বিতর্কিত নন, কর্মী ও মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বাড়িয়েছিলেন সম্পদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। মেয়র নির্বাচনে বড় মাপের জয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছেন। আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা রাশেক রহমান ভোটের ময়দানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানদের নিয়ে নেমেছিলেন। চমক সৃষ্টি করেছিলেন প্রচারণার বাইরে। ১৪ জন প্রার্থীকে এক করা যাবে না বলে, তাকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগেই তিনি দেশের বাইরে চলে যান। ঘরের বিদ্রোহ দমাতে পারলেও আওয়ামী লীগ নিজের ভোট ধরে রাখতে পারেনি। ফলাফল যে হাতছাড়া হবে সেটি আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড আগেই বুঝেছিলেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন নির্বাচন সমন্বয়ে ভোটের ময়দানে পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু ঘরের ভোট ফেরাতে পারেননি। জাতীয় পার্টির প্রার্থীও ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়। সাধারণ মানুষের আপনজনই নন, একজন সৎ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মানুষের শক্তি ও জনসমর্থনকে ভরসা করেছিলেন বলে আওয়ামী লীগের ভোটও তিনি টানতে পেরেছিলেন। রাজনীতির বাইরের ভোট দুহাতে তুলেছেন। এ থেকে জাতীয় নেতাদের জন্য আরেকটি বার্তা সামনে এসেছে এই যে, অর্থ, পেশিশক্তি, হোন্ডার বহর আর শোডাউন দিতে পারলেই শক্তিশালী হয় না। জনগণের হৃদয়ে আসন থাকা চাই। বিজয়ী প্রার্থী গরিব হলেও সৎ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই নিয়েছিলেন। মানুষ সৎ ও তাদের আপনজনদের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার লোভে ভোট দেয় না। ভোট দেয় ভালোবাসা ও আস্থা-বিশ্বাসের ওপর। মোস্তফা মানুষের সেই আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন। বিএনপি একে তো সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। আর তাদের প্রার্থীও বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। ভোটের ময়দানে যতটা লড়াইয়ে এসেছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদের সমন্বয় ও মহাসচিব ফখরুলের প্রচারণায় অংশগ্রহণের কারণে। জাতীয় রাজনীতিতে অর্থ ও পেশিশক্তি দেখে যারা মনোনয়ন দেন রংপুরে এরশাদের ব্যালট বিপ্লব তাদের চোখ  খুলে দিয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন দাম্ভিক প্রার্থীর যতই অর্থ ও পেশিশক্তি থাকুক না কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ভোটের বাজার তার জন্য মূল্যহীন। ব্যালটের শক্তি মানুষ গোপনে প্রকাশ করে। অর্থ ও পেশিশক্তি প্রকাশ্যে এলেও গোপন কক্ষের ব্যালটযুদ্ধে সেটি পরাস্ত হয়।

যারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলে না, তারা সত্যকে অস্বীকার করছেন। ’৯৪ সালে দেশের চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অবিভক্ত ঢাকায় বিএনপির মির্জা আব্বাসকে দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে বিরোধী দল থেকে প্রথম নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মো. হানিফ। চট্টগ্রামে বিজয়ী হন, সদ্য প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। খুলনায় বিএনপির শেখ তৈয়বুর রহমান ও রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু বিজয়ী হয়েছিলেন। দুটিতে আওয়ামী লীগ ও দুটিতে বিএনপি। সিলেট পৌরসভায় দীর্ঘদিন পর বদরউদ্দিন আহমদ কামরান হয়েছিলেন বিজয়ী চেয়ারম্যান। ’৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে গোটা দেশ দেখেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভিষিক্ত হয়ে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন। শুধু তাই নয়, সেই নির্বাচনের আগে গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির পতন হয়েছিল। সেই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার মেয়র হানিফ জনতার মঞ্চ করে গণতন্ত্রের বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। আর সেই গণআন্দোলনে চট্টগ্রাম থেকে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বারুদ জ্বালিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া সব কটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়, দক্ষ ও সফল মেয়ররা পরাজিত হয়েছিলেন বিপুল ভোটে। তাও বিএনপির আনকোরা প্রার্থীদের কাছে। সেই সময়টা বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছিল। সেই জাতীয় নির্বাচন বর্জন ও হটকারী হরতাল-অবরোধের সহিংস প্রতিরোধ আন্দোলন বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে পঙ্গুই করেনি, নেতা-কর্মীদের মামলার জালে আটকে দিয়েছিল। আগামী দিনে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনই প্রমাণ করবে রংপুরের নির্বাচন তাতে প্রভাব রাখতে পেরেছে কিনা বা সেটি জনমত যাচাইয়ের অ্যাসিড টেস্ট ছিল কিনা। জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য একের অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী সেখানে রংপুরের পরাজয় দুই দলকে আত্মদহন বা গ্লানিতে নিমজ্জিত না করে সন্তোষজনক স্বস্তির নিঃশ্বাস দিলেও নতুন বছরের শুরুতে ঢাকার উত্তরের মেয়র নির্বাচন দিয়েই সেই জনমত যাচাইয়ের দরজা উন্মুক্ত হবে। ঢাকা উত্তরের সফল মেয়র জননন্দিত আনিসুল হকের অকাল মৃতুতে মেয়র পদে উপনির্বাচন আসন্ন। এখানে দলীয় প্রার্থী সংকটে পতিত আওয়ামী লীগ বিজিএমই-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট আতিকুল ইসলামকে প্রার্থী করছে। তাকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী প্রস্তুতির। তিনি প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তার একটি ক্লিন ইমেজ রয়েছে। এখানে বিএনপি প্রার্থী করছে দলের তরুণ নেতা তাবিথ আউয়ালকে। বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টুর পরিচয় ছাড়াও বিগত নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আনিসুল হকের মতো শক্তিমান ভোটযোদ্ধার বিপরীতে ভোটের দিন দুপুরে দল বর্জন করার পরেও তিন লক্ষাধিক ভোট পেয়েছিলেন। সেই ভোটযুদ্ধে তার পিতা ছিলেন পলাতক। নেতা-কর্মীরা হয় কারাগারে, না হয় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। দলের নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব ছাড়া কেউ নামতে পারেনি। এবার বিএনপি নেতা-কর্মীদের জন্য ভোটের পরিবেশ অনুকূলে। ঢাকার উত্তরে তাবিথেরও ক্লিন ইমেজ রয়েছে। তরুণদের মধ্যে তিনিও চমক সৃষ্টি করেছিলেন। আতিকুল ইসলামেরও ক্যারিশমা রয়েছে। জনগণের ভোট ময়দানে প্রথম এলেও প্রার্থী হিসেবে তিনি কতটা শক্তিশালী সেটি বলার সময় এখনো হয়নি। ভোটযুদ্ধ শুরু হলেই সেটি দৃশ্যমান হবে। তবে ঢাকা উত্তরের উপনির্বাচন যদি রংপুরের মতো গ্রহণযোগ্যতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় তাহলে ফলাফল দেখে বোঝা যাবে জনমত কার অনুকূলে দোল খাচ্ছে। আগামী বছর ভোট রাজনীতির বছর। বছরের মাঝামাঝি রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা সবকটি সিটি নির্বাচনই রংপুর, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ মডেলের সুষ্ঠুু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরপেক্ষতার কারণে একে একে সবকটি সিটি নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে। তার অধীনে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ অনুষ্ঠান যে সম্ভব তার পক্ষে এ নির্বাচনগুলো মডেল হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফলফল বলে দেবে জনমত কার।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শুধু কর্মকর্তারাই ঘুষ খান না, মন্ত্রীরাও দুর্নীতি করেন। মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর। কর্মকর্তারা যাতে সহনশীল হয়ে ঘুষ খান এ জন্য তিনি আকুতি জানান। তিনি বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। তাই অনুরোধ করছি, আপনারা ঘুষ খান। কিন্তু সহনশীল হয়ে খান। কেননা আমার সাহস নেই বলার, ঘুষ খাবেন না, তা হবে অর্থহীন। রবিবার শিক্ষাভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। পুরো অনুষ্ঠানের দুই ঘণ্টার বেশি লাইভ প্রচার হয়। যার বড় অংশজুড়ে ছিল মন্ত্রীর বক্তব্য। দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপনারা স্কুলে যান খাম রেডি থাকে। সেটি নিয়ে আসেন আর পজিটিভ রিপোর্ট দেন। এটার পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে একজন কর্মকর্তাকে দুদক দিয়ে ধরিয়েছি। কারণ থানা-পুলিশ দিয়ে ধরালে ঘুষ খেয়ে তারাও ছেড়ে দেবে। বাধ্য হয়ে দুদক দিয়ে ধরাতে হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ওই কর্মকর্তার তথ্য সংগ্রহ করে দেখলাম তিনি পাঁচটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে পিয়ন পর্যন্ত সবার এক মাসের বেতন দিতে বলেন। সে অনুযায়ী শিক্ষকরা টাকা রেডি করে। অনেক কষ্টে তাকে ধরতে হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় আটককালে তার সঙ্গে আড়াই লাখ  টাকা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এখন এক মাসের বেতন মানে অনেক টাকা। কারণ শিক্ষকদের বেতন দিগুণ হয়েছে। তাই এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। তিনি আরও জানান, ওই দফতরে চাকরি করে একজন ঢাকায় ১৩টি বাড়ি করেছে। তিনি আরও বলেন, অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এখন কেউ চা পর্যন্তও খান না। আমি বলব, এটা করার দরকার নেই। আপনি আপসে চা কেন মাংস খান, কিন্তু খাম না নিলেই হয়। তিনি বলেন, বিসিএস কর্মকর্তাদের মধ্যে রেষারেষি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মেয়েরা মেয়েদের সম্পর্কে এমন কথা বলে যা কল্পনা করা যায় না। আমার শোনার দরকার নেই, আপনারা ভালো হয়ে যান। আপনারা খারাপ দিকগুলো বাদ দিয়ে ভালো দিকগুলো কাজে লাগান। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি কমেছে। সব কার্যক্রম ডিজিটাল হলে তা আরও কমে আসবে।

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নিউজ পোর্টালে ভাইরাল হয়ে যায়। দিনভর সারা দেশে এটিই ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। সর্বত্র ছিল এক আলোচনা। শিক্ষামন্ত্রী যে কথা বলেছেন তা গোটা দেশের মানুষের মনের ভাষাকে তুলে ধরেছেন। মনে হয়েছে, তার হৃদয় নিঃসৃত বক্তব্যে কেবল একজন মন্ত্রীর অসহায়ত্বই ফুটে ওঠেনি— দেশের মানুষের আকুতি তার কণ্ঠে উচ্চারিত করেছেন। শিক্ষাভবন নিয়ে সারা দেশের অভিযোগ হচ্ছে, গেট থেকে এখানে ঢুকতে ঢুকতে টাকা দিতে হয়। টেবিলে টেবিলে ঘুষ দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে বের হয়ে আসতে হয়। যুগের পর যুগ শিক্ষা ভবন ঘিরে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। এ ভবন থেকে সারা দেশের স্কুল-কলেজের যারাই পরিদর্শনে যান, তারাই ফুলেফেঁপে ওঠেন। অগাধ বিত্তবৈভবের মালিক হন। এক সময় উচ্চশিক্ষা নিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা সম্মান ও পবিত্র এবং মর্যাদাকর পেশা হিসেবে মানুষের শ্রদ্ধা কুড়াতেন। একালে এসে দেখা যায়, বছরের পর বছর স্কুল-কলেজ শিক্ষক সংকটে ভোগে। স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা নজর দেন শিক্ষাভবনের দিকে। একবার শিক্ষাভবনে কর্মকর্তা হয়ে ঢুকলেই হলো, অগাধ বিত্তবৈভব গড়ার আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান তারা। যে শিক্ষাভবন একটি জাতির আলো ছড়ানোর কথা সেটিই ঘুষ-দুর্নীতিতে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে অন্ধকারে অভিশপ্ত হয়ে উঠেছে। শিক্ষকতার চেয়ে শিক্ষাভবনের চেয়ার-টেবিলে যাদের কুদৃষ্টি এবং শিক্ষাভবন থেকে যারা আর শিক্ষকতায় ফিরে যেতে চান না তাদের মন ও মগজজুড়ে কেবলই লোভ আর লোভ। শরীরের শিরায় শিরায় রয়েছে, দুর্নীতির শ্রোত। শিক্ষাভবন থেকে ঘুষ-দুর্নীতির পথে দুহাতে টাকা কামিয়ে সমাজেও তারা দম্ভের সঙ্গে চলছেন। ঘুষ-দুর্নীতির পাহাড়ের ওপর দাঁড়ানো কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুকভরা ক্রন্দন নিয়েই হোক, হতাশা বা ক্রোধ নিয়েই হোক কার্যত যে কথা বলেছেন তাতে জনগণের টাকায় পড়ালেখা করে জনগণের টাকায় খেয়েপরে যারা দুর্নীতির উল্লাস নিত্য করছেন তাদের গালে কশে থাপ্পড় বসিয়েছেন। নুরুল ইসলাম নাহিদ তার সারাজীবনের রাজনীতিতে এই প্রথম সত্সাহসিকতার সঙ্গে যে অপ্রিয় সত্য উচ্চারিত করেছেন তাতে কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের চোর বললেও, কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। কিন্তু তার রাজনৈতিক জীবন ধন্য হতো, ইতিহাস অমরত্ব দিত, যদি তিনি চোর দমনে ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করতেন। একজন সৎ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, নীতিবান, ব্যক্তিত্ববান সাহসী মন্ত্রী হিসেবে রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টি করতেন যদি পদত্যাগ করতেন। তিনিও ক্ষমতার মোহ ছাড়তে পারলেন কই, তার চারপাশ ঘিরে তোষামোদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে সেটিকেও তিনি ভাঙতে পারেননি। প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে হতে প্রাথমিক পর্যন্তও এসে ঠেকেছে। দুর্নীতি ও ব্যর্থতার চিত্র দেখে সত্সাহসী মন্ত্রী হলে নাহিদ কেন আর্তনাদ করবেন? নাহিদ কেন পদত্যাগ করবেন না? নিজেসহ সবাইকে চোর বললেও তিনি চোর আমরা বিশ্বাস করি না। কিন্তু ব্যর্থতার দায় নিয়ে বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু করতে না পারার বেদনা নিয়ে সরে দাঁড়ান এটি চাইতেই পারি।

            লেখক : প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি. নিউজ।

সর্বশেষ খবর