বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাদকের বিরুদ্ধে অরণ্যে রোদন

আলম রায়হান

মাদকের বিরুদ্ধে অরণ্যে রোদন

আমার এক বন্ধু মো. নাসিরুজ্জামান, সরকারের অতিরিক্ত সচিব; এখন একটি করপোরেশনের চেয়ারম্যান। আছেন সচিব হয় হয় অবস্থায়। বন্ধুটি আমার পুরোদস্তুর কঠিন আমলা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নরম ছিল, কবিতা লিখত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তার নামের সঙ্গে আমি জুড়ে দিয়েছিলাম ‘রনি’। ফলে কবি হিসেবে তার নাম হলো, নাসিরুজ্জামান রনি। অবশ্য শেষতক তার কবি প্রতিভার অপমৃত্যু হয়েছে। ফলে হারিয়ে গেছে আমার দেওয়া তার নাম। তবে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হারায়নি। আমি প্রায়ই তার কাছে যাই, আড্ডা দিই। বিকালের নাশতা ও দুপুরের লাঞ্চ একবারেই সারি চা-বিস্কুট দিয়ে বিকালের দিকে; তার পর চলে আসি। এ বন্ধুর কাছে আমার অবস্থা অনেকটা নিরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতার অমলকান্তির মতো; অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। এসব বলার অর্থ এই না যে, আমি অসময়ে বন্ধু বন্দনা করতে বসেছি। মো. নাসিরুজ্জামানের প্রসঙ্গ তোলার কারণ হচ্ছে, তার সঙ্গে ৭ ডিসেম্বর আড্ডায় মাদকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমার জাসদীয় উত্তেজনা অনেকটাই বাস্তব ভিত্তি পেয়েছে; মাদকের আগ্রাসন বিষয়ে আমার ভ্রান্তিবিলাস কেটে গেছে অনেকটাই। তবে নিশ্চয়ই ভ্রান্তিতে অনেকেই আছেন। এ ভ্রান্তির ঘোরে মাদক প্রশ্নে আমাদের অবস্থা সম্ভবত কলুর বলদের মতো! কেবল এক কেন্দ্রেই ঘুরছি। আর সরিষা-তিল-তিসি থেকে বের হওয়া তেল ভোগ করে অন্য কেউ; মাদক ব্যবসার দেশি-বিদেশি মাফিয়ারা।

কে না জানে, মাদক আমাদের জন্য একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে বহু আগেই। যারা মাদক উত্পাদন, পাচার ও মাদকের ব্যবসায় জড়িত তারা মানবতাবিরোধী অপরাধী। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মাদক ও সাম্প্রদায়িকতা একই ধরনের ভয়ানক আসক্তি। এ দুটো সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। যারা মাদক সেবন ও সাম্প্রদায়িকতায় জড়িয়ে পড়ে তারা অল্প সময়ের মধ্যেই কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রাণীতে পরিণত হয়। এরা জড়িয়ে যায় নানা ধরনের অপরাধে, ফলে সমাজে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। কারোরই কোনো দ্বিমত নেই, সর্বনাশা মাদক আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে রাক্ষসের মতো। রাক্ষস রূপকথার চরিত্র; কিন্তু মাদকের আগ্রাসন নির্মম বাস্তবতা। অতি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উদ্বেগ উত্কণ্ঠা রয়েছে মাদকের আগ্রাসন নিয়ে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতবার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলেন প্রায় তত বারই সোচ্চার হন মাদকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, এ নিয়ে করণীয়ও বলে দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জঙ্গিবাদের রাস অনেকটা টেনে ধরা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মাদকের সেয়ান ঘোড়া কেবল ছুটছেই চেঙ্গিস খানের বর্বর বাহিনীর গতিতে। ধ্বংস হচ্ছে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ; সবার চোখের সামনে জনশক্তি পরিণত হচ্ছে উদ্ভ্রান্ত বোঝায়। আত্মঘাতী জঙ্গি সৃষ্টিতে এ উদ্ভ্রান্ত জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করা হয় কিনা সেটিও কিন্তু ভেবে দেখা প্রয়োজন। রাতারাতি যারা আঙ্গুল ফুলে কেবল কলাগাছ নয়, হয়েছেন তাল গাছ- তাদের ব্যাপারেও খতিয়ে দেখা দরকার। তা হলে দেখা যাবে, অনেকেরই উত্থানের পেছনে মূল ব্যবসা হচ্ছে মাদক।

সাধারণভাবে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার সবাই। মিডিয়া থেকে শুরু করে সরকারের কর্মকর্তা, দেশি-বিদেশি নানা সংগঠন, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা; সবাই মাদকের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন থেকে মুক্তি চায়। এ নিয়ে বক্তৃতা-সেমিনার-কথন-ভাষণের অভাব নেই। মাদকের বিরুদ্ধে সবাই আওয়াজ তুলছেন। তবে বাস্তবে এ আওয়াজ সিংহের মুঠোর মধ্যে থাকা মূষিকের মতো মনে হচ্ছে অনেকের কাছেই। তা না হলে আবেগের রাজনীতিতে আমার সাবেক নেতা বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমন উক্তি করবেন কেন? অতি সম্প্রতি তিনি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে মাদক সমস্যা নিরসনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সমস্যা ও মাদকাসক্তি : বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী। আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সব স্তরের জনগণের অংশগ্রহণে কঠোর আন্দোলন নিশ্চিত করা হলে মাদক ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের সমূলে নির্মূল করা যেতে পারে।’ তথ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যে বিরক্তিকর উপাদান কিন্তু বেশ আছে। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রী ও তার সরকারের কাছে প্রশ্ন করা যায়, মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন এবং দেশের সব স্তরের জনগণের অংশগ্রহণে ‘কঠোর আন্দোলন নিশ্চিত’ করার আগে বিরাজমান ব্যবস্থার দিকে কি নজর দেওয়া দরকার না? দেশব্যাপী মাদকবিরোধী তত্পরতায় আছে র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। দায়িত্বরত সংস্থাগুলোর প্রতি কিঞ্চিত নজর দেওয়া যাক। র‌্যাব। এলিট ফোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত জঙ্গি দমন থেকে শুরু করে ভেজাল ওষুধবিরোধী অভিযান পর্যন্ত এমন কোনো কাজ নেই যা র‌্যাবকে করতে না হয়। অবশ্য চুক্তিতে মানুষ খুনের অভিযোগও আদালতে প্রমাণিত হয়েছে র‌্যাবের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অনেকের বিরুদ্ধে আদালতের বাইরেও বিভাগীয় কঠোর ব্যবস্থার উদাহরণ আছে। আর প্রমাণহীন ঘটনা কত আছে কে জানে! মনে রাখা প্রয়োজন, মানুষ খুনের বাণিজ্যের চেয়ে মাদকের ব্যবসা অনেক জমজমাট ও লাভজনক।

র‌্যাবের পর আসে পুলিশ প্রসঙ্গ। কাজ ও আকাজের পরিধিতে পুলিশ সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই আলোচিত-সমালোচিত। রাস্তায় মূত্র ত্যাগের ঘটনা থেকে শুরু করে খুনের আসামি ধরার দায়িত্ব পুলিশের; এমনকি দুর্ধর্ষ জঙ্গিও ধরতে হয় পুলিশকে। অবশ্য জঙ্গি ধরার ব্যাপারে সাফল্যের পাশাপাশি নাটকের অভিযোগও আছে পুলিশের বিরুদ্ধে। আর ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহূত হওয়ার দুর্ভাগ্য তো পুলিশের কপালের লিখন। এরপরও মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চয়ই দেশবাসী প্রশংসার সঙ্গে বিবেচনা করে। কিন্তু গত ১৭ ডিসেম্বর ‘দৈনিক প্রথম আলো’তে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনেকেরই মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ রিপোর্টের শিরোনাম, ‘মাদক সেবন ও বিক্রিতে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ।’ একই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬৭ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।’ যে রিপোর্টে একটা সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাপটের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, ‘কোথা থেকে মাদক আসছে, কোথায় কীভাবে বিক্রি হচ্ছে তা পুলিশ জানে। কাজেই এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা পুলিশের জন্য কঠিন কোনো কাজ নয়।’ এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদকে দুটি প্রশ্ন করা যায়। প্রশ্ন এক. তা হলে পুলিশ ধরে না কেন? দুই. আপনার ভাষ্যমতে ‘সহজ কাজটি’ আপনি কতটুকু করতে পেরেছিলেন পুলিশে থাকাকালে? অবশ্য তার সময় পুলিশের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের সাবেক এই আইজি। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণ হওয়া কি অত সহজ! সাবেক আইজিপির সঙ্গে বাহাসে না গিয়ে পাঠকের কাছে প্রশ্ন করা যাক, মাদকের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কি আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন আছে! তবে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো, প্রথম দিকে দাপটের সঙ্গে থাকলেও শেষ দিকে নূর মোহাম্মদকে কিন্তু মূল্য কম দিতে হয়নি। মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছিল কিনা তা অবশ্য নিশ্চিত নয়। তবে এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বরিশালে পুলিশ বর্তমান কমিশনার এস এম রুহুল আমিনকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল মাদকসহ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার কারণে। তবে সান্ত্বনার কথা হচ্ছে, তিনি টিকে গেছেন এবং আছেন আগের দৃঢ়তায়ই। এদিকে কৌশল বদল করে মাদক ব্যবসায়ীরা নজর দিয়েছে বরিশালের গ্রাম অঞ্চলে; টিউমারের ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার মতো।

র‌্যাব ও পুলিশের পর তিন নম্বরে আছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। অথচ এ সংস্থাটিই এক নম্বরে থাকার কথা ছিল। মাদকের আগ্রাসন ঠেকানোর কাজ আসলে এ অধিদফতরেরই; এ জন্যই ১৯৯০ সালে গঠন করা হয় এ সংস্থাটি। কিন্তু কী অবস্থা এ সংস্থার? এ প্রতিষ্ঠানকে মাস কয়েক আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ঠুঁটো জগন্নাথ! আমার ধারণা অনেক কষ্টের কারণে নিজের মন্ত্রণালয়াধীন সংস্থা সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বিষয়ে যারা জানেন তারা কষ্টের পাহাড় বহন করে চলেন চিরন্তন। কারণ প্রতিষ্ঠার পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দ্রুত বিকশিত হলেও পরবর্তীতে কেবলই সংকুচিত হয়েছে। আর ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো ইয়াবা আটক হওয়ার ঘটনায় মহাপরিচালক মোহাম্মদ সালাম চাকরি হারানোর পর অধিদফতরটি দ্রুত সংকুচিত হতে হতে প্রায় অকার্যকর সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ফলে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই চিহ্নিত করেছেন সরকারি এ সংস্থাটিকে। কিন্তু নানান ব্যস্ততার কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্ভবত বিষয়টি তলিয়ে দেখার সময় পাননি। তা না হলে নিশ্চয়ই তার নজরে আসত, ২০০২ সাল থেকে কত দ্রুত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সংকুচিত হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাহীন এ সংস্থার জনবল ১৬ বছরে অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। আর যাও আছে তাও প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যবহূত হচ্ছে বিভিন্নরকমের ফাইল ওয়ার্কে। ফলে মূল কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর বিভিন্ন মহাপরিচালকের সময় এ অধিদফতের গতি নানামুখী হওয়ার অভিযোগও আছে। সব মিলিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এমনটি হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। এটি শক্তিশালী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। শুধু তাই নয়, মাদকবিরোধী খুবই শক্তিশালী বডি আছে। সেটি হচ্ছে, জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড। এ বোর্ডে পররাষ্ট্র, অর্থ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্রসহ মন্ত্রীই আছেন ১১ জন; তথ্যমন্ত্রীও শক্তিশালী এ বোর্ডের সদস্য। কিন্তু মাদকের বিরুদ্ধে এত বড় একটি বডিতে থাকার কথা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সম্ভবত ভুলে গেছেন। তা না হলে নতুন করে তিনি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে মাদক সমস্যা নিরসনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানোর আগে বিরাজমান ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করতেন মাদকের বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে কারোরই কোনো সংশয় নেই, মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধে বিরাজমান ব্যবস্থার বিপরীতে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা এবং তাদের ক্ষমতা ও দক্ষতা বহুগুণ বেড়েছে। ফলে মাদক চক্রের কালো হাত এতটাই সম্প্রসারিত হয়েছে যে, কলেজের আড়ালে মাদক ব্যবসা পরিচালনাকারী এক ইয়াবাসম্রাটের রিমান্ডের বিরোধিতা করতে আদালতে দাঁড়ায় প্রায় দেড় ডজন অইনজীবী। আর তাদের সিনিয়র হচ্ছেন এমন এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী যার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের পক্ষে দাঁড়ানো, আসামির পক্ষে নয়; মাদক ব্যবসায়ীর পক্ষে তো নয়ই। কিন্তু যা হওয়ার কথা নয় তাই হচ্ছে। ফলে ইয়াবাসম্রাটকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে পাওয়া যায় মাত্র একদিন। তাও আবার জেলগেট থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ফেরত আসতে হয়। কারণ কারা কর্তৃপক্ষ জানান, ‘আসামি অসুস্থ; কারা হাসপাতালে ভর্তি।’ মাননীয় মাদক ব্যবসায়ী এতটাই মান্যবর! এ একটি উদাহরণ মাত্র। অহরহ মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষে নানান রকমের ঘটনা ঘটছে প্রকাশ্যে ও আড়ালে। ফলে ২০০২ সালের প্রথম ইয়াবা আটকের ঘটনায় দুটি মামলার একটি এরই মধ্যে খারিজ হয়ে গেছে; অপরটিও যায় যায় অবস্থায় আছে বলে শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যা হওয়ার তাই হচ্ছে আমাদের দেশে! আর মাদক নিয়ে যা চলছে তা চলতে থাকলে হয়তো ফিলিপাইনের মতো গুলি করে মানুষ মেরে মাদকের আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা করতে হতে পারে। পরিস্থিতি এমনই ভয়ঙ্কর দিকে প্রবহমান বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু এর বিপরীতে আমরা কী করছি তা হাতড়ে পাওয়া কঠিন।

মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের চলমান বুলন্দ আওয়াজের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে চেষ্টা করলে হয়তো একটি বিষয়ের সঙ্গে মেলানো যায়। তা হচ্ছে রাজপথে তাজিয়া মিছিলের মাতমের সঙ্গে, যে মিছিলে মাতম করতে গিয়ে নিজের শরীরও রক্তাক্ত করে মানুষ। মাদকের বিরুদ্ধেও একরকম মাতমই চলছে। তবে ফলাফলের ক্ষেত্রে পার্থক্য অত্যন্ত স্পষ্ট। তাজিয়া মিছিলের মাতম ধর্মপ্রাণ মানুষদের মনে করিয়ে দেয় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্রকে সীমারের ছুরিতে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা। যা থেকে মানুষের ধর্মীয় অনেক অর্জন আছে। কিন্তু মাদকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চলমান মাতম অনেকের মতো আমার কাছেও মনে হয় বেফজুল! মাদকের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চলমান অরণ্যে রোদন কি চলতেই থাকবে? 

            লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।

সর্বশেষ খবর