বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে

আত্মার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে আত্মীয় বলা হয়। সাধারণত রক্ত, বংশ কিংবা বৈবাহিক সূত্র থেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আবার অনেক সময় বন্ধুত্ব থেকেও আত্মীয়ের ন্যায় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়; যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক থেকেও গভীর হয়ে থাকে। শরয়ী বিধান অনুযায়ী আত্মীয়স্বজনের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা হক বা অধিকার রয়েছে। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ওয়াজিব। শরয়ী কারণ ছাড়া আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্পূর্ণ হারাম। যদি কোনো আত্মীয় অসহায়, গরিব বা মূর্খও হয় তবু তার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে এবং তাকে ভালোবাসতে হবে হৃদয়ের গভীর থেকে। যে ব্যক্তি শুধু সম্পদশালী ও প্রতাবশালী স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে কিন্তু অসহায় গরিব স্বজনদের এড়িয়ে চলে, তাদের খোঁজখবর নেয় না, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে না, সে মুমিন হতে পারে না।

মহান আল্লাহতায়ালা আত্মীয়স্বজনের হকের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মানবজাতি, তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর। যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক আত্মা থেকে, আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে তাদের হক আদায় করে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের পর্যবেক্ষক (সব খবর জানেন)।’ (সূরা নিসা, আয়াত-০১)।

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আত্মীয়স্বজনের হক আদায় করে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরের হক ও আদায় কর। আর কোনোভাবেই অপব্যয় কর না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের খুবই অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-২৬-২৭)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালা এবং পরকালের বিশ্বাস রাখে, সে যেন মেহমানদের সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালা এবং পরকালের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালা এবং পরকালের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। (বোখারি)।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রশস্ত রিজিক ও দীর্ঘ হায়াত কামনা করে, সে যেন নিজ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে। (বোখারি)।

হজরত সাঈদ ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে আত্মীয়তা রহমানের রহমতের একটি শাখা। অতএব যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আল্লাহতায়ালা তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেবেন। (মুসনাদে আহমদ)।

আমরা অনেকেই সাধারণ বিষয় নিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কথাবার্তা বন্ধ রাখি। এমনকি অনেকে এভাবে রাগ করে সারা জীবন কথাবার্তা, দেখা-সাক্ষাৎ পর্যন্ত বন্ধ রাখে। এ ধরনের লোকদের ব্যাপারে প্রিয়নবী (সা.) কঠোর বার্তা প্রদান করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো মুসলমানের অপর মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখা জায়েজ নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখল এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ)।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,  কোনো মুসলমানের জন্য তিন দিনের বেশি তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বন্ধ রাখা জায়েজ নেই।’ (মুসলিম)। 

তাই আসুন আমরা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের আশায় আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখি এবং তাদের অধিকারের প্রতি যত্নবান হই। পারস্পরিক বন্ধনকে আরও অটুট করি। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন। (আমিন)।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও ইসলামী গবেষক 

খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

E-mail : [email protected]

 

সর্বশেষ খবর