শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

জান্নাত আমাদের পরম আকাঙ্ক্ষার বিষয়

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম, পেশ ইমাম : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

নাহ্মাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম। মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ও সেরা সৃষ্টি মানবজাতি। এই মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য। প্রতিটি কাজের হিসাব-নিকাশ গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে পৃথিবীতে আমাদের পাঠিয়ে ইচ্ছামাফিক চলার সুযোগ দিয়েছেন। যার ফলে পরকালে তাকে জান্নাত অথবা জাহান্নাম প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। ভালো কাজ ও কর্মের অধিকারীদের আল্লাহতায়ালা চিরশান্তির স্থান বেহেশত বা জান্নাত দেবেন আর মন্দ কাজ ও কর্মের বিনিময়ে আল্লাহ নারাজ হলে শাস্তি বা জাহান্নাম প্রদান করবেন। যেখানে কষ্ট, শাস্তি ও লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিছুই নেই।

আল্লাহ বলেন, ‘তাদের বলা হবে তোমরা জাহান্নামের দরজাসমূহ দ্বারা প্রবেশ কর তাতে স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য। জাহান্নামে নিকৃষ্ট অহংকারীরা থাকবে।’ ইমানদারদের তাই অহংকারমুক্ত থাকতে হবে। অনেক কষ্টের শিকার হলেও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় আল্লাহ তাদের অভয় দিয়ে বলেন, ‘যারা তাদের রবকে ভয় করবে তাদের দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের কাছে পৌঁছবে এবং এর দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হবে তখন জান্নাতের পাহারাদাররা বলবে আপনাদের প্রতি সালাম, আপনারা সুখী হোন এবং স্থায়ীভাবে চিরস্থায়ী সুখের স্থানে অবস্থান করুন।’ (সূরা জুমা : ৭৩)। এটা ইমানদারদের আকাঙ্ক্ষার স্থান, যার ফলে প্রতিটি কাজকর্মে আল্লাহর ভয় নিয়ে মুমিনকে পৃথিবীতে চলতে হয়েছিল।

আল্লাহর ভয় ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত যাদের অন্তরে থাকবে তাদের জন্য আল্লাহ জান্নাত নসিব করবেন। উল্লেখ্য, জান্নাত আটটি ১. আদন ২. খুলদ ৩. মাওয়া ৪. দারুস সাল্লাম ৫. দারুল কারম ৬. দারুল মাকাম ৭. নাঈম ৮. ফিরদাউস।

পৃথিবীতে মা-বাবার সন্তুষ্টি জান্নাতে যাওয়ার প্রথম সোপান। নবী (সা.) বলেছেন, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ তাই মা-বাবার আদেশ মান্য করা সন্তানের ওপর অত্যাবশ্যক। পৃথিবীতে মানুষ উপঢৌকন পেলে খুশি হয়।

নবী (সা.) বলেন, ‘মুমিনের জন্য মৃত্যু ফুলস্বরূপ।’ (কানজুল উম্মাল ও দায়লামি মাসনাদুল ফিরদাউস)।

পৃথিবীতে ভালো কাজ করতেও অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়, সেই কষ্ট ও সমালোচনা সহ্য করেও বান্দা আল্লাহর ভয় নিয়ে গভীর রাতে ইবাদত করে আরামের বিছানাকে একদিকে রেখে নামাজ আদায়ে রত হয়ে যায়। চোখের পানিতে একাকার হয়ে যায়। বান্দার মুখমণ্ডল পৃথিবীর মানুষগুলো যখন ব্যস্ত ঘুমে বিভোর তখন তার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে যারা নবী (সা.)-এর মহব্বতে তিলাওয়াতে কোরআন, নামাজের সিজদা, দরুদ সালামকে জীবনের জন্য আপন করে নিয়ে ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং পৃথিবীর দুঃখ-কষ্টকে আপন করে নিয়েও আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস-ভক্তি রেখে চলেছে, তাদের জন্যই জান্নাত রয়েছে পরকালে। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুত্তাকিরা থাকবে জান্নাতে ও নহরসমূহের মাঝে। বিপরীতে কাফিরদের জন্য শাস্তি হবে ভয়াবহ যা অট্টালিকাসদৃশ বড় বড় স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে।’ আগুনের এ স্ফুলিঙ্গ তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবে চিরস্থায়ীভাবে। অন্যদিকে পৃথিবীতে যারা নেক আমল করেছে কিন্তু পেট ভরে খাবার খেতে পর্যন্ত পারেনি ঠিকমতো, আল্লাহ তাদের সেদিন কষ্টের জীবন না দিয়ে পুরস্কার দেবেন।

তাদের বলা হবে, তোমরা পরম আনন্দে খাও ও পান কর তোমাদের কৃতকর্মের বিনিময়ে। সুতরাং আমল যদি ভালো হয় তা বিফলে যাবে না। পৃথিবীতে কষ্ট করতে শারীরিক মানসিক যে দুর্ভোগ ছিল তা ইমানদারদের আরাম-আয়েশ দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। নিশ্চয়ই মুত্তাকিরা সেদিন ছায়া ও বহুল আরামদায়ক স্থানে থাকবে। (সূরা মুরসালালাত : ৪১)।

আর কাফিরদের জন্য রয়েছে ফুটন্ত পানি ও পুঁজ যা তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ পাবে। সুতরাং একটু কষ্ট হলেও ইমান-আমলের ওপর থাকলে বিনিময়ে জান্নাত তথা পরম সুখের স্থান অবধারিত। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে সাফল্য।’

অন্যদিকে কাফিরদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মানুষ পলায়ন করবে নিজের ভাই, মাতা-পিতা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি থেকে।’ (সূরা আবাসা :  ৩৪-৩৬)। যাদের জন্য অন্যায় করে কষ্ট করে পাপাচারে পৃথিবীতে মানুষ নিজেকে ধন্য মনে করে, সেই মানুষগুলো তার একটি গুনা পর্যন্ত নেবে না এবং যাদের আপন ভেবে খুশি করা হয়েছিল সেদিন তাদের দেখে অপমান থেকে বাঁচার জন্য পলায়ন পর্যন্ত করবে। তাই আল্লাহর নিয়ামতের প্রত্যাশায় প্রয়োজনে সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী থাকাই হবে শ্রেয়। আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন অনেক মুখমণ্ডল হবে দীপ্তিমান, হাস্যময় ও প্রফুল্ল। সেই আকাঙ্ক্ষিত স্থান জান্নাতুল ফিরদাউস যেন হয় আমাদের আকাঙ্ক্ষার লক্ষ্যবস্তু। সেজন্য আমাদের রাখতে হবে ধৈর্য, থাকতে হবে পাপাচার, কামাচার ও দুরাচারমুক্ত। সুন্দর সমাজ, সংসার ও শান্তিময় পৃথিবী গড়তে আমাদের পরকালমুখী চিন্তা-চেতনা লালন-পালন করতে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও নির্দেশ মেনে নিয়ে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ ও অনুকরণের মডেল হিসেবে সামনে রাখতে হবে। তবেই শান্তি-সুখ ও কল্যাণের পুরস্কার জান্নাত লাভ করতে সক্ষম হব। ইনশা আল্লাহ আল্লাহ আমাদের পরকালীন চিরস্থায়ী জান্নাতের আকাঙ্ক্ষায় নেক আমল করার তাওফিক দান করুন।

 

সর্বশেষ খবর