রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাদক আগ্রাসন

সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

দেশে জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের কেনাবেচাও বেড়ে চলেছে পাল্লা দিয়ে। বাংলাদেশে ব্যবহৃত মাদকের ৯৫ শতাংশের বেশি আসে বিদেশ থেকে। দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার থেকে গোপন পথে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। দেশের প্রতিটি সীমান্ত এলাকায় চলছে মাদকের বিকিকিনি। খোদ রাজধানীতেও বসছে মাদকের হাট-বাজার। লুকোচুরি নয়, বরং প্রকাশ্যেই বেচাকেনা চলছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ সব ধরনের মাদকদ্রব্য। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও পুলিশের  তথ্যানুযায়ী, ২০০ গডফাদারের তত্ত্বাবধানে ১ লাখ ৬৫ হাজার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার সমন্বয়ে দেশব্যাপী মাদক-বাণিজ্যের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। তাদের আগ্রাসন প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এ চক্রের সদস্যরা ঘাটে ঘাটে টাকা বিলিয়ে সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। মাঝেমধ্যে কোথাও কোথাও মাদকবিরোধী অভিযান চললেও তা মাদক নেটওয়ার্কে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না। এসব অভিযানের বেশির ভাগ আইওয়াশ, এমন অভিযোগও প্রবল। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, পুলিশের পাঁচ শতাধিক সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের সহস্রাধিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। যে কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মাদকের থাবা।

বিশেষজ্ঞরা ২০২০ সালের মধ্যে দেশে ১ কোটি লোক নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। মাদক আগ্রাসন ঠেকাতে না পারলে মাত্র দু-তিন বছরের মধ্যে প্রতি বছর শুধু নেশার পেছনেই খরচ হবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ মুহূর্তে রাজধানীর সর্বত্রই মাদক ব্যবসায়ী আর নেশাখোরদের চলছে দাপুটে তৎপরতা। গত বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেকর্ডপত্রে নগরীতে ৫৪২টি মাদক স্পট থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে তা বেড়ে হাজারে পৌঁছেছে। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত গলিয়ে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, আফিম থেকে শুরু করে সব ধরনের নেশাজাত সামগ্রী অবাধে পাচার হয়ে আসছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী আর প্রশাসনিক শক্তির সম্পর্ক থাকায় তাদের ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। দেশের যুবসমাজকে এ মরণ নেশা থেকে বাঁচাতে হলে এই অশুভ জোট ভাঙতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া পদক্ষেপের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর