বিশ্বজুড়ে কঠিন সময় পার করছে মুসলমানরা। মুসলমানদের প্রাণের স্পন্দন প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস তাদের হাতছাড়া। বায়তুল্লাহর খাদেমরা ইসলামের শত্রুদের বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে। তাদের হাত লাল করেছে মুসলমানের রক্তে। এমন নাজুক সময়ে লিখতে বসেছি আজকের লেখাটি।
পাঠক! যখন আমাদের প্রথম কিবলা হাতছাড়া, বর্তমান কিবলা শকুনের নজরবন্দি; তখন আমাদের পয়লা করণীয় হলো— আল্লাহর দরবারে প্রার্থনার বৃষ্টি ঝরিয়ে মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ব মানবের জন্য দোয়া করা। ‘হে আল্লাহ! নির্যাতিত এই মুসলমান জাতিকে আপনি বাঁচান। হে নবী! অসহায় এই উম্মতের জন্য আল্লাহর দরবারে শাফায়াত করুন।’ এভাবে কেঁদে-কেটে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা খুবই জরুরি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে উম্মত! পৃথিবীতে অনেক শক্তিশালী অস্ত্রের আবিষ্কার হবে; যা মুহূর্তেই পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারবে। কিন্তু মনে রেখো, আমার মুমিন উম্মতের কাছে এমন এক ঐশী অস্ত্র থাকবে, যার মোকাবিলায় কোনো শক্তিই কাজে আসবে না। খুব ভালো করে শুনে রাখো সেই অস্ত্র হলো দোয়া।’ (মিশকাত)।
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার কোনো বান্দা যদি অন্তর থেকে প্রেমভরা দরদি কণ্ঠে আমাকে একবার আল্লাহ বলে ডাক দেয়, আমি সত্তরবার তার ডাকে সাড়া দিই।’ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, ‘আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দেন দুই ভাবে। তার গুনাহ মাফ করে এবং প্রয়োজন মিটিয়ে।’ একবার সাহাবিরা বললেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! আমরা আল্লাহকে কীভাবে ডাকব— জোরে না আস্তে? সকালে না বিকালে? কখন তিনি ফ্রি থাকেন? বান্দার সমস্যা শোনার জন্য কখন তাঁর দিল ঝুঁকে থাকে?’ আল্লাহর নবী মুচকি হেসে কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে বললেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো জোরে কিংবা আস্তে, সকালে অথবা সন্ধ্যায়; তোমাদের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য, প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমি সব সময় উন্মুখ থাকি। আমাকে ডাকো। আমি সাড়া দেব।’
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, আল্লাহকে এত ডাকলাম, কই আমার দোয়া তো কবুল হলো না। এ প্রশ্নের জবাবে নবী (সা.) নিজেই বলেছেন, ‘কোনো দোয়াই ব্যর্থ হয় না। কিছু দোয়া সঙ্গে সঙ্গে ফলে যায়। আর কিছু দোয়া ফলতে দেরি হয়। আবার কিছু দোয়ার ফল হয়ে অন্য বিপদাপদ দূর হয়ে যায় কিংবা আখিরাতে তাকে উচ্চমর্যাদা দেওয়া হয়। তখন বান্দা আল্লাহকে বলবে, “হে আল্লাহ! আমি তো এত নেক আমল করিনি। আমার এত মর্যাদা হলো কীভাবে?” আল্লাহ মুচকি হেসে বলবেন, “বান্দা! তুমি আমাকে প্রেম নিয়ে ডেকেছো। প্রার্থনার বৃষ্টিতে নিজেকে সিক্ত করেছো। আমি ভালো মনে করেছি, তাই তোমাকে নগদ না দিয়ে বাকিতে শতগুণ বাড়িয়ে দিলাম।” তখন বান্দা আফসোস করে বলবে, “হায়! যদি আমার কোনো দোয়াই নগদ কবুল না হতো, তাহলে তো আজ আরও বেশি মর্যাদার স্থান পেতাম”।’
বিশ্ব মুসলিমের বিপদের দিনে আসুন আমরা প্রার্থনার বৃষ্টি ঝরাই। আল্লাহর কাছে মুসলমানদের কল্যাণের জন্য, মুক্তির জন্য দোয়া করি। যেসব মুসলমান ঘরহারা, বাড়িহারা, সহায়হারা, স্বজনহারা তাদের কথা মোনাজাতে বলি। নয় তো সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের নামের পাশেও ‘শরণার্থী’ শব্দটি যোগ হবে। আমরাও হয়ে পড়তে পারি সর্বহারা। হে আল্লাহ! আপনার রহমতের অসিলায়, আপনার হাবিবের অসিলায় বিশ্ব মুসলমানকে শকুনের নজর থেকে হেফাজত করুন। মুসলমানদের মনে ইমানের শক্তি ঢেলে দিন। যে শক্তির বলে তারা আবার গড়ে তুলবে কোরআনের বসুন্ধরা। আমিন।
লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
www.selimazadi.com