সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

যশোর রোডের চার লেন

শতবর্ষী বৃক্ষগুলো টিকিয়ে রাখুন

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমণ্ডিত যশোর রোডের যশোর-বেনাপোল অংশ চার লেনে উন্নত করতে শতবর্ষী আড়াই শতাধিক রেইনট্রিসহ কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত প্রকৃতিপ্রেমীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্দেহ নেই, দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের সঙ্গে যশোরের সংযোগকারী সড়কটি চার লেনে পরিণত করা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের আমদানি-রপ্তানিতে এ সড়কটির উল্লেখযোগ্য অবদান থাকায় তা প্রশস্ত করে সময়ের চাহিদা মেটানো জরুরি হয়ে উঠেছে। তবে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য শতবর্ষী গাছগুলো কেটে ফেলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শতবর্ষী গাছগুলো রেখেই রাস্তা প্রশস্ত করার পক্ষে বেশির ভাগ মানুষ মতামত দিচ্ছে। নড়াইলের জমিদার কালিবাবুর উদ্যোগে যশোর থেকে কলকাতা পর্যন্ত এ রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছিল। নড়াইলের জমিদার পথচারীদের ছায়াদানে রাস্তার দুই পাশে লাগিয়ে ছিলেন কয়েক হাজার রেইনট্রি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে গাছগুলোর বেশির ভাগই মরে গেছে। কিছু গাছ কেটে নিয়েছে অসাধু লোকজন। কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এ সড়কের দুই পাশে নতুন করে অনেক গাছ লাগানোও হয়েছে। যশোর জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, যশোর-বেনাপোল সড়কে নতুন-পুরনো মিলিয়ে আড়াই থেকে তিন হাজার গাছ রয়েছে। এর মধ্যে শতবর্ষী গাছের সংখ্যা আড়াইশ। রাস্তা চার লেনে প্রশস্ত করার নামে শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, রাস্তার জন্য আপাতত গাছ কাটা হলেও তারা নতুন করে গাছ লাগাবেন। সড়কের ক্ষতি না করেই সে গাছ লাগানো হবে। স্মর্তব্য, মুক্তিযুদ্ধকালে যশোর রোড নিয়ে অ্যালেন গিন্সবার্গ লিখেছিলেন সাড়া জাগানো গান সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড। যা পাকিস্তানি নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে জনমত গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। যশোর রোডের পার্শ্ববর্তী গাছগুলো নিধন হলে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যের স্মারক এ সড়কের চিরচেনা বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যাবে। এলাকার পরিবেশের ওপর তা ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করবে।  বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল থেকে বারাসাত পর্যন্ত শতবর্ষী গাছগুলো রেখেই রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে, যশোর-বেনাপোল সড়কটিও সেভাবে করা যায় কিনা সে ব্যাপারে ভেবে দেখা উচিত। বিকল্প থাকলে বৃক্ষ নিধনের পথ থেকে সরে আসাই হবে শ্রেয়। আমরা আশা করব এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর