শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

দাওয়াতের আরেক নাম তাবলিগ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

দাওয়াতের আরেক নাম তাবলিগ

ভালো-মন্দের দ্বন্দ্ব সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চলছে। ভালো চায় মন্দকে ভালো করতে। মন্দ চায় ভালোকে কালো করতে। ভালো-মন্দের কালো-আলোর খেলা নিয়েই মানুষের জীবনের ভেলা। একদল মানুষ ভালোর দলে। তাকে লড়াই করতে হয় কালোর বিরুদ্ধে। আরেক দল মানুষ মন্দের দলে।  তাকে লড়াই করতে হয় আলোর বিপরীতে। এ দুই দলের পরিচয় কোরআন এভাবে দিয়ছে— ‘ওয়া আসহাবুল ইয়ামিন। মা আসহাবুল ইয়ামিন। ভালোর দলের লোক। ভালো দলের লোক কারা জান?’ ‘ওয়া আসহাবুশ শিমাল। মা আসহাবুশ শিমাল। মন্দ দলের লোক। মন্দ দলের লোক কারা জান?’

ভালো চায় কালোকে আলোর পথ দেখাতে। পবিত্র কোরআন এবং রসুল (সা.)-এর হাদিসের ভাষায় এ সুন্দর চাওয়ার নামই ‘দাওয়াত’। দাওয়াতের আরেক নাম ‘তাবলিগ’। তাবলিগ অর্থ পৌঁছে দেওয়া। কালোর কাছে আলো, মন্দের কাছে ভালো পৌঁছে দেওয়াকেই কোরআনের ভাষায় বলে তাবলিগ। আর দাওয়াত অর্থ ডাকা। মন্দকে ভালোর পথে, কালোকে আলোর দিকে ডাকার নামই দাওয়াত।

দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত কথাটির মানে হলো, পৃথিবীজুড়ে যত কালো আছে, মন্দ আছে— সব আঁধার দূর করে, মন্দ ধুয়ে-মুছে আলোর প্রদীপ জ্বালানো। কথাটি যদিও এক লাইনে বলে ফেলেছি, তবে কাজটি করতে হলে এক জীবনও যথেষ্ট নয়। শুধু এক লাইনের এ কথাটি বাস্তবায়ন করার জন্যই লাখ লাখ নবী-রসুল এবং কোটি কোটি আল্লাহ প্রেমিক বান্দা জীবনভর সাধনা করেছেন। আলাহতায়ালা তাদের মেহনতের উত্তম প্রতিদান দিন। তাদের আলোকিত জান্নাতে রাখুন।

প্রিয় পাঠক! আপনিও যদি চান আলোকিত জান্নাত পেতে তবে আপনাকেও আলো এবং ভালোর সাধক হতে হবে। জনে জনে আলো বিলাতে হবে। মন্দ ও অসত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। হতে হবে আলোক মশাল। আলো বিলিয়ে ভালোর পথ দেখাতে হবে মানুষকে। কালো ও মন্দ দূর করতে হবে আলো ও ভালোর পরশ বুলিয়ে।

এই আলোর সাধকদের বলা হয় দায়ি। বলা হয় মুবাল্লিগ। তারা মানুষকে আলোর পথে ডাকেন। ভালোর কাছে পৌঁছে দেন। আল্লাহর সঙ্গে জুড়ে দেন। তাই আপনি যদি দায়ি বা মুবাল্লিগ হতে চান, আমার ভাষায় আলোর সাধক হতে চান, তবে প্রথমে নিজেকে ভালো হতে হবে। নিজের ভিতরে যত কালো আছে, আবর্জনা-ময়লা আছে, সব ধুয়ে-মুছে সাফ করেই নামতে হবে দাওয়াতের মাঠে। তবেই আপনি অল্প প্রচেষ্টায় বেশি সফলতা পাবেন।

আমি নিজে যদি ভালো না হই, তবে জনে জনে আলো বিলাব কীভাবে? আফসোস! অধিকাংশ দায়িই নিজে ভালো না হয়ে আলো বিলানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ফেলেন। ফলে আলো ছড়ানো তো দূরের কথা, আলোর মাঝেই অন্ধকার মিশে যায়। বাংলা ভাষায় যাকে বলে শর্ষের মাঝে ভূত ঢোকা। তাই এখন আর আগের মতো দাওয়াতের সফলতা দেখা যায় না। খাজা মঈনুদ্দীন চিশতির (রহ.) দাওয়াতে এক লাখ মানুষ বিনা বাক্যে ইসলামের মালা গলায় পরেছেন। আর আমরা ১০ লাখ মানুষ যদি দাওয়াতের মেহনত করি, তবে ১০ জনকেও ইসলামের মালা গলায় পরাতে পারি না। সমস্যা একটাই। আমাদের নিজেদের মাঝে আলোর সাধনা নেই।

প্রিয় দায়ি ভাই! আলোর সাধনা, ভালো হওয়ার চেষ্টা এমনভাবে করতে হবে, ভিতরে তো আমরা ভালো হবই, বাইরেও যেন আমরা ভালো থাকি।

তাই আল্লাহতায়ালা রসুল (সা.)কে দাওয়াতের নির্দেশ দিয়ে প্রথমেই যে উপদেশ দিয়েছেন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ছিল— ‘ওয়া ছিয়াবাকা ফাতাহহির। নবী হে! আপনার পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখুন। পোশাক থেকেও যেন আলোর দ্যুতি ভালোর সুঘ্রাণ ছড়ায় সে রকম সাধক হোন।’ যে আল্লাহর কাছে বাহ্যিক কোনো রঙ-ঢঙের তাৎপর্য নেই, তিনিই দাওয়াতের ক্ষেত্রে বাহ্যিক পোশাককে পরিচ্ছন্ন-পরিষ্কার-কালোমুক্ত রাখতে বলেছেন, তাহলে ভিতরকে কত বেশি পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে একবার ভেবে দেখুন! আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভালোর সাধক হওয়ার, আলোর পথের যাত্রী হওয়ার তাওফিক দিন।  আমিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

 

সর্বশেষ খবর