শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

গাছ কাটা বন্ধে স্থিতাবস্থা

আদালতের প্রশংসনীয় রায়

ঐতিহ্যমণ্ডিত যশোর রোডের যশোর-বেনাপোল অংশের সড়ক প্রশস্ত করার জন্য প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত আপাতত রুখে দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ শতবর্ষী গাছ কাটার সিদ্ধান্তের ওপর ছয় মাসের স্থিতাবস্থা জারি করায় গাছগুলো আপাতত রক্ষা পেল। আদালত স্থিতাবস্থা আদেশের পাশাপাশি এ ব্যাপারে রুলও জারি করেছে। ব্রিটিশ আমলে নড়াইলের জমিদার কালীবাবু যশোর থেকে কলকাতা পর্যন্ত এ রাস্তাটি তৈরি করেন। পথচারীদের ছায়াদানে রাস্তার দুই পাশে তিনি লাগিয়েছিলেন কয়েক হাজার রেইনট্রি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে গাছগুলোর বেশির ভাগ মরে গেছে। অসাধু লোকজন কিছু গাছ কেটে নিয়েছে। গত পৌনে এক শতাব্দীতে এ সড়কের দুই পাশে নতুন করে অনেক গাছ লাগানোও হয়েছে। যশোর জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, যশোর-বেনাপোল সড়কে গাছের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। এর মধ্যে শতবর্ষী গাছের সংখ্যা আড়াই শ। রাস্তা প্রশস্ত করার নামে শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। স্মর্তব্য, মুক্তিযুদ্ধকালে যশোর রোড নিয়ে অ্যালেন গিন্সবার্গ লিখেছিলেন সাড়াজাগানো গান ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। পাকিস্তানি নৃশংসতার বিরুদ্ধে এ গানটি বিশ্বজুড়ে জনমত গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। যশোর রোডের পার্শ্ববর্তী গাছগুলো নিধন হলে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যের স্মারক এই সড়কের চিরচেনা বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যাবে। এলাকার পরিবেশের ওপর তা সৃষ্টি করবে ভারসাম্যহীনতা। আমরা আশা করব স্থিতাবস্থা জারির এই সময় কীভাবে গাছ বাঁচিয়ে সড়ক প্রশস্ত করা যায় সে কৌশল প্রণয়নে সরকার উদ্বুদ্ধ হবে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের গুরুত্ব ও প্রশস্ত করার যৌক্তিকতা নিয়ে কারোরই সংশয় থাকার সুযোগ নেই। দেশ ও মানুষের স্বার্থে উন্নয়নের প্রয়োজন যেমন অপরিহার্য তেমন পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিও জরুরি। সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এ ব্যাপারে সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সে দায় পালনে গাছ অক্ষুণ্ন রেখে সড়ক প্রশস্ত করার কৌশল বেছে নিলে তা হবে সব দিক দিয়েই ভালো।

সর্বশেষ খবর