সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রসুল (সা.) ফাতিমাকে বেশি মুহব্বত করতেন

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কন্যাদের মধ্যে হজরত ফাতিমাকে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করতেন। যারা দীন ইসলামকে ভালোভাবে শেখেনি তাদের অনেকে বলে যে, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত ভালোবাসতেন অথচ ভালোবাসার কোনো নমুনা রেখে গেলেন না। অর্থাৎ টাকাপয়সা, জমিজমা তো কিছুই রেখে গেলেন না। হ্যাঁ, আমাদের মুহব্বত-ভালোবাসার ভিত্তি যেমন এই তুচ্ছ দুনিয়ার অর্থসম্পদের ওপর নবীদের ক্ষেত্রে তেমন নয়। যে কারণে আখেরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার-আপনার মতো অর্থসম্পদ রেখে যাননি। কারণ নবীদের সম্পদের ওয়ারিশিস্বত্ব থাকে না। তা ছাড়া আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় সম্পদহীন থাকার দোয়া করতেন।

হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ায় বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমার জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মিসকিন বানিয়ে রাখুন এবং এমন মিসকিন অবস্থায় মৃত্যুদান করুন যেন আমার মৃত্যুর পর কাউকে দেওয়ার মতো সম্পদ না থাকে; এরপর ময়দানে হাশরেও মিসকিনদের কাতারে দাঁড় করুন।’

আমাদের সমাজে জুলুম : আমাদের সমাজে এক প্রকার জুলুমের প্রচলন আছে। তা হলো— অনেক বাবা তার মেয়েদের ওয়ারিশি সম্পত্তি দেন না, বরং তাকে তার প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ছেলেদের মধ্যে সব সম্পদ বণ্টন করে দেন। এ জুলুম সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় বড় শিক্ষিত জ্ঞানী-গুণী ও কোটিপতির মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়।

অনেকে এই জুলুমকে বৈধতার লেবাস পরানোর চেষ্টা করেন; বলেন, ‘বোনেরা তাদের ন্যায্য ওয়ারিশ স্বেচ্ছায় ভাইদের দিয়েছেন।’ কী আশ্চর্য! শুধু কি বোনেরাই ভাইদের স্বেচ্ছায় দিয়ে যেতে থাকবেন? আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য বোন পাওয়া যায় যারা নানা কারণে তাদের ন্যায্য ওয়ারিশ নেন না কিংবা নিতে চান না, কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন কোনো ভাইয়ের কথা শুনলাম না যে ভাই বলেছেন, ‘আমার ওয়ারিশ নেব না; বোনদের দিয়ে দিলাম।’ ভাইয়ের জন্য বোনের এত ত্যাগ; ভাইয়ের ত্যাগ কোথায়?

পরিবারের বাপ ও ভাইদের পক্ষ থেকে এমন কৌশলে চাপ শুরু হয় যে, বোন ওয়ারিশ পাবেন দূরের কথা, ভয়ে প্রকম্পিত থাকেন। বোন চিন্তা করেন, স্বামীর ঘরে থাকি; কোনো দিন যদি তিনি তালাক দিয়ে বসেন, তখন তো আমাকে আবার বাপ-ভাইয়ের কাছে ফিরে আসতে হবে। এসব চিন্তা করে এবং বাপ ও ভাইয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘আমার ওয়ারিশ লাগবে না।’ অনেক সময় বাপ মেয়েকে সামান্য কিছু দিয়ে বলেন, ‘তোমাকে লেখাপড়া করিয়েছি, বিয়ে দিয়েছি, এতে অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে; সুতরাং যা দিচ্ছি এগুলোই নিয়ে যাও!’

শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত ওয়ারিশ থেকে কেউ যদি তার মেয়েকে বঞ্চিত করেন তাহলে তিনি শিক্ষিত, জ্ঞানী, গুণী, হাজী, গাজী, কিংবা তাহাজ্জুদগুজার যাই হোন না কেন তাকে জান্নামে দগ্ধ হতে হবে, জাহান্নাম থেকে তার রেহাই নেই।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর