মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

জলবায়ু পরিবর্তন ও রোগব্যাধির প্রকোপ

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

জলবায়ু পরিবর্তন ও রোগব্যাধির প্রকোপ

সারা বিশ্বের জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ঋতু পরিবর্তনের ফলে নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। গত শতাব্দীতে এ পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়েছে এবং ক্রমেই মানবসভ্যতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যে কোনো অঞ্চলের প্রচলিত আবহাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে আবার ওই আবহাওয়ায় হঠাৎ ব্যাপক পরিবর্তনে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের সুস্থতায় যে হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে তা আগামীতে আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ববাসী এখন সোচ্চার। উন্নত বিশ্বের শিল্পায়নপ্রসূত নির্গত গ্যাস বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। ওজোন স্তর ফুটো হয়ে বাড়ছে উষ্ণতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশে এ জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ হচ্ছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর অধিক হারে কার্বন গ্যাস নির্গমন। এ কার্বন জলবায়ুর সঙ্গে মিশ্রণের কারণে বাড়ছে তাপমাত্রা। ফলে অস্বাভাবিকভাবে দুই মেরুর বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়ছে। আর এভাবেই জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। পৃথিবীর এক অংশে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ আবার আরেক অংশে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা। বৃষ্টির দিনে নেই বৃষ্টি, ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে মাছ, পাখিসহ অনেক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটছে, বিভিন্ন রোগব্যাধি বাড়ার ফলে মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। কী হতে পারে স্বাস্থ্য সমস্যা? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যাটাই এক বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মানুষের শরীর ও রোগবালাই চারপাশের পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবী আরও বেশি উষ্ণ ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশের ওপর যে যৌগিক চাপ ফেলবে তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে অনেক গুণ। স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়বেই। অতিবেগুনি রশ্মি অধিক মাত্রায় পৃথিবীতে প্রবেশ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়বে।

ভূপৃষ্ঠের পরিবেশের কী কী সমস্যা হতে পারে?

বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে তার একটি অংশ জলাশয় ও সমুদ্রের পানির সঙ্গে মিশে পানির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন হয়। হিমালয়ের বরফ অতিরিক্ত গলার ফলে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে আঞ্চলিকভাবে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে এবং লোনা পানি নদ-নদীতে প্রবেশ করে মিঠা পানি লবণাক্ত করবে। এর প্রভাবে প্রাণিকুলের অস্তিত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। লবণাক্ত পানি ভূগর্ভস্থ স্তরে প্রবেশ করে সুপেয় পানির স্তরকেও হুমকির মুখে ফেলবে। জমির উর্বরতা নষ্ট হবে। বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার বৃদ্ধির ফলে গোটা পৃথিবীর তাপমাত্রা হুমকির মুখে পড়বে। এ ছাড়া শিল্পকারখানার বর্জ্য নদী, জলাশয় ও সমুদ্রের পানিতে মিশে এরই মধ্যে বিভিন্ন উেসর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে। পানিদূষণের ফলে পানিতে বসবাসকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্র প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের খাবার সংকট দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া দূষিত পানিতে বড় হওয়া মাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। সেসব রোগাক্রান্ত মাছ মানবস্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। কোনো একটি ক্ষুদ্র প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হলে প্রাণিজগতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। শাক-সবজি ও অন্যান্য ফসলি জমিতে সেচকাজে ব্যবহৃত পানি দূষিত হলে ওই সবজি ও খাদ্যশস্য গ্রহণের ফলে শারীরিক রোগব্যাধি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

পানিবাহিত রোগ ও গড় আয়ুর ওপর প্রভাব : জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশনের বিদ্যমান সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং তুলবে। দেশের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে তারা দ্রুত নানারকম জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং হতেই থাকবে। ২০২০ সালের মধ্যে উদরাময়জনিত রোগ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া তাপমাত্রা উষ্ণ থাকলে সমুদ্রে ঘন ঘন শৈবাল জন্মায়, বিশেষ করে যেখানে দূষিত পানি রয়েছে। আর শৈবালের সঙ্গে কলেরা জীবাণুর সংশ্লিষ্টতা থাকায় এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে উন্নয়নশীল দেশের হতদরিদ্র মানুষের গড় আয়ু কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রোটিনের প্রধান উৎস মাছ। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাবে, ফসলহানি ঘটবে। মাছ ও জলীয় উদ্ভিদের ক্ষতি হবে। পানি ও খাবারের অভাবে কৃষক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির সমস্যা প্রকট হচ্ছে এবং আরও হবে।

ফুসফুস ও শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগব্যাধির প্রভাব : বায়ুমণ্ডলে শিল্পকারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন দূষিত গ্যাস, কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অন্যান্য দূষণের কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ যেমন হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, এমফাইসিমা ও অন্যান্য রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে স্বাস্থ্য অবনতির প্রধান ১০টি রোগের মধ্যে একটি হবে শ্বাসজনিত রোগ। ঘরে ও বাইরে বহুক্ষণ ধরে বায়ুদূষণের মধ্যে কাটানোর পর শিশুদের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুস্থতা বেড়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কোনো কোনো গাছপালার রেণু উত্পাদন বাড়বে। ফলে হাঁপানি ও অ্যালার্জিজনিত রোগ আরও বেশি হবে। করোনারি আর্টারি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে এবং বিভিন্ন রকম ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

কীটপতঙ্গবাহিত রোগ : বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে কোনো কোনো পতঙ্গের স্বাভাবিক জীবনকাল দীর্ঘায়িত হবে। ফলে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে এদের দ্বারা বাহিত রোগজীবাণুর সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে। সংক্রামক রোগ পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ঘাতক। যেসব অঞ্চলে মশা, মাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের মাধ্যমে রোগ ছড়ায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সেসব অঞ্চলে সংক্রামক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনে ভেক্টর অণুজীব যেমন মশা, মাছি, ইঁদুর অনুকূল পরিবেশ পেয়ে বেশি বংশ বৃদ্ধি করবে। ফলে বাড়বে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, কালাজ্বর ইত্যাদি।

বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগব্যাধি : মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয় বা মানুষের সামান্য উপকার করে থাকে এমন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে পরিবর্তন হতে পারে। পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া মানুষের অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কোনো কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দানব আকারে আবির্ভূত হতে পারে। কাজেই এগুলো যাতে অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।

অতিরিক্ত গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা : অতিরিক্ত গরমে আর সেই সঙ্গে বাতাসে অস্বাভাবিক আর্দ্রতা বাড়ার ফলে স্বাস্থ্য সমস্যার নতুন মাত্রা যোগ হবে। হিট এক্সহসন, এমনকি হিট স্ট্রোকের মতো মারাত্মক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। ফলে মৃত্যুহার বেড়ে যাবে।

পুষ্টিহীনতা ও শারীরিক সমস্যা : প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ার ফলে দরিদ্র জনগণ পর‌্যাপ্ত ও সুষম খাবারের অভাবে পুষ্টির সমস্যায় পড়বে এবং অপুষ্টিজনিত রোগ বেশি হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলী, কিডনি, হাড়সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নানা জটিল রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। যেসব রোগী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সেসব রোগ নিরাময়েও সমস্যা হবে। বিশেষ করে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে শিশুদের টনসিলের প্রদাহ, কানের সমস্যা, ঘন ঘন সর্দি-কাশি, রোটা ভাইরাসের কারণে মারাত্মক ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এতে শিশুদের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

গর্ভবতী মায়েদের সমস্যা : স্বাভাবিক অবস্থায়ও গর্ভবতী মায়েদের নানারকম সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, বায়ুদূষণসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট নতুন পরিস্থিতিতে মা ও নবজাতকের বিভিন্ন জটিলতা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। বিকলাঙ্গ হওয়া, গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়াসহ নবজাতকের নানারকম সমস্যা বাড়ছে। জন্মগত ত্রুটি, মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ, হাবাগোবা শিশুর জন্মহার বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।

মানসিক ও সামাজিক সমস্যা : উষ্ণপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা ইত্যাদি মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনা। দুর্যোগে বিপর্যস্ত পরিবারের জীবনজীবিকা হারানোর মানসিক যন্ত্রণা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে। বিপর্যয়-পরবর্তী সময়ে অনেকেই মানসিক অসুস্থতার শিকার হয়। এ চাপ বা পীড়াদায়ক পরিস্থিতি মানুষের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার পাশাপাশি সামাজিক উত্পাদনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতাও কমিয়ে ফেলে।

কীভাবে স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করা যাবে : ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে, তা প্রতিরোধ করা না গেলে আগামী শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। ফলে সারা বিশ্বে তীব্র মাত্রায় সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হবে; অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক আরও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাবে এবং তারা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হবে। এমনকি সামুদ্রিক ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা বন্যা-পরবর্তী সময়ে নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যও বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র মাত্রার শীত ও গরম বেড়ে যাবে। ফলে সাধারণ রোগে আক্রান্ত রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। উন্নত দেশগুলো এ অবস্থা মোকাবিলায় সক্ষম হলেও উন্নয়নশীল দেশের মানুষের পক্ষে এ অবস্থা মোকাবিলা করা কঠিন হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এর সঙ্গে আমাদের চারপাশের পরিবেশ সুরক্ষার জন্যও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে শব্দ, বায়ু ও পানিদূষণ থেকে আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষার জন্যও উদ্যোগ প্রয়োজন। পরিবেশকে সুরক্ষার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমার সম্ভাবনাও সফলকাম হবে না। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি মোকাবিলার মতো বড় কাজে সাফল্য অর্জন করা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সম্ভব হবে না। শীতপ্রধান কোনো উন্নত দেশের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেলে অনেক মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

তাহলে উন্নয়নশীল দেশের হতদরিদ্র মানুষের কী চরম দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে, তা অনুমান করাও কষ্টকর। তাই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এ শতকের শেষের দিকেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। শিল্পকারখানাসহ অন্যান্য উৎস থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসের দূষণ কমানোসহ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কার্বন পোড়ানো কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় আনতে হবে এবং জ্বালানি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বিকল্প জ্বালানির উদ্ভাবন করতে হবে। সবুজ পৃথিবী নির্মাণে একযোগে কাজ করতে হবে। একমাত্র বৃক্ষরাজিই পারে পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে। পৃথিবীতে প্রাণের বিপর্যয় রোধে অধিক হারে বৃক্ষরোপণ করতে হবে, অন্যথায় পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হবে, পৃথিবী হবে বসবাসের অযোগ্য। সবুজ পৃথিবী গঠন না হলে, গ্রিনহাউস গ্যাস বন্ধ করা সহজ হবে না। মাটি, পানি, বায়ু এ তিনটির সঙ্গেই স্বাস্থ্য ওতপ্রোত জড়িত। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরিভাবে নেওয়া অত্যাবশ্যক। বৈশ্বিক এ সংকট নিরসনে সমগ্র বিশ্বের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে এখনই।

লেখক : অধ্যাপক ও ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর