শিরোনাম
শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

হে আল্লাহ! দাওয়াতি মেহনতে সবাইকে কবুল করুন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হে আল্লাহ! দাওয়াতি মেহনতে সবাইকে কবুল করুন

মুমিন জীবনের অন্যতম মিশন হলো দাওয়াত। দাওয়াতের মেহনতের মাধ্যমেই পৃথিবীজুড়ে ডালপালা ছড়িয়েছে ইসলাম নামক বৃক্ষটির। যুগে যুগে নবী-রসুলগণ দাওয়াতের এ মিশন নিয়েই পৃথিবীর বুকে এসেছেন মানুষের কল্যাণ ও মুক্তির জন্য। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)ও দাওয়াতের কর্মসূচি নিয়েই প্রেরিত হয়েছেন বিশ্ববাসীর ওপর। আল্লাহ বলেন, ‘নবী হে! আপনি তাবলিগ করুন যা আমি আপনাকে তাবলিগ করেছি। মনে রাখবেন, তাবলিগের এ মেহনত যদি আপনি না করেন তবে রিসালাতের দায়িত্বে চরম অবহেলাকারী হয়ে আমার সামনে দাঁড়াতে হবে।’ (সূরা মায়েদাহ : ৬৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘প্রিয় বন্ধু! তাবলিগ করুন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানসম্মত পন্থায়। বিতর্কিত বিষয় গবেষণা করে প্রমাণ করে দিন আপনার রবের কথাই সত্য। যদিও আপনার রব ভালো করেই জানেন কে সত্য আর কে মিথ্যা।’ (সূরা নাহল : ১২৫)।

দাওয়াতের এ মেহনত রসুল (সা.) জীবনভর করেছেন। যখনই তিনি সুযোগ পেয়েছেন উম্মতকে বলেছেন, ‘বাল্লিগু আন্নি ওয়ালাও আয়া।’ উম্মত আমার! আল্লাহ আমাকে এক বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। তা হলো দাওয়াতের মেহনতের দায়িত্ব। তোমরা যারা আমাকে ভালোবাস, আমার পক্ষ থেকে আল্লাহর কালামের একটি আয়াত হলেও অন্যের কাছে পৌঁছে দিও। অর্থাৎ, তাবলিগ করো। (বুখারি) এ হাদিস থেকেই বোঝা যায় তাবলিগের দায়িত্ব কত গুরু ছিল নবীজির ওপর। আর নবীজি (সা.)ও কত ভালো করে উপলব্ধি করেছিলেন দাওয়াতের মেহনতকে। তাই তো পুরো জীবন দাওয়াতের মেহনতে ব্যয় করেও বিদায় হজের সময় উম্মত থেকে স্বীকৃতি নিয়েছিলেন এই বলে, ‘হে উম্মত! আমি কি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পেরেছি?’

লাখো কণ্ঠে উম্মত একসঙ্গে বলে উঠল— ‘অবশ্যই পেরেছেন’। তখন রসুল (সা.) আকাশের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বিনম্রভাবে ভেজা চোখ নিয়ে কাতর কণ্ঠে বললেন, ‘দয়াময় প্রভু! তুমি সাক্ষী থেকো, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। যে তাবলিগের বোঝা আমার কাঁধে দিয়েছ, আমি জনে জনে তা বণ্টন করেছি। দেখ! তোমার বান্দারাই সে সাক্ষ্য দিচ্ছে।’

এখানেই শেষ নয়। রসুল (সা.) লাখো মানুষকে বললেন, ‘আজ তোমরা যারা এখানে এসেছ, তারা তাদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দেবে যারা এখানে আসেনি।’ রসুল (সা.)-এর নির্দেশ শুনেই সাহাবিরা তাবলিগের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লেন। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে তাবলিগের মারকাজ গড়ে তুললেন। এমনই একটি মারকাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তুরাগ তীরের সবুজ ঘাসের ওপর বাঁশের খুঁটি আর চালার চটে ঘেরা জান্নাতি ভূমিতে। যেখানে আরাফার ময়দানের সেই কথাগুলোই প্রতিধ্বনি হয় ওলামায়ে কিরামের কণ্ঠ হয়ে।

প্রিয় পাঠক! এক বছরের জন্য দুই পর্বের ইজতেমা শেষ হয়েছে। সবাই যার যার বাড়ি চলে গেছেন। ইজতেমার প্যান্ডেল খোলার কাজ শুরু হয়েছে। আবার তুরাগ তীরের কহর দরিয়া বিরান মাঠ হয়ে পড়বে অল্প দিনের মধ্যেই। ইজতেমার শেষে আমাদের সবাইকে যে কথাটি স্মরণ রাখতে হবে তা হলো, নবীজির সেই কথা— ‘অনুপস্থিতদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দিও।’ সবাই ইজতেমা বাগানের ফুল হতে পারেনি। কেউ কেউ হয়েছে দর্শক। আবার কেউ হয়েছে শ্রোতা। সে যাই হোক, আমরা যারা ইজতেমা বাগানের ফুল হয়েছি, আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিয়েছেন, আমরা অবশ্যই ইজতেমার আদর্শ-শিক্ষা, বয়ান অন্যদের কাছে পৌঁছে দেব দরদি ভাষায়। আমরা দেখিয়ে দেব মাত্র তিনটি দিন কীভাবে আমাদের ভিতর অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আমাদের আচার-ব্যবহার, কথাবার্তায় কী দারুণ শোভা ফুটেছে। এসব দেখিয়েই মানুষকে জানান দেব, দেখ! ইজতেমা কীভাবে মানুষকে বদলে দেয় ভিতর-বাইরে। তুমিও যদি নিজেকে বদলাতে চাও, আল্লাহর রঙে নিজেকে রাঙাতে চাও তবে চল ইজতেমার পথে হাঁটো। দাওয়াতের রঙে নিজেকে সাজাও।

এভাবে যখন আমি নিজেকে উপস্থাপন করব তখন মুখ ফুটে বলতে হবে না— ভাই! ইজতেমায় আসুন। দাওয়াতের মেহনতে সময় লাগান। দেখবেন সে নিজেই এসে বলবে, ভাই! আমাকেও তোমার মতো সুন্দর জীবন উপহার দাও। আমাকে দাওয়াতের সবুজ জমিনে বীজ হিসেবে রুয়ে দাও। ব্যস! কাজ হয়ে গেল। দেখবেন, এ বীজটি আপনার চেয়েও অনেক বড় দাওয়াতি বৃক্ষ হয়ে মানুষের মাঝে জান্নাতি ছায়া দেবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দাওয়াতি মেহনতে কবুল করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

 

সর্বশেষ খবর