বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মত প্রকাশের স্বাধীনতা

দেশ ও জাতির কল্যাণ নিশ্চিত করে

সংবাদমাধ্যম এবং বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পেশার মানুষের আপত্তির মুখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন বাতিল নিঃসন্দেহে সরকারের শুভবুদ্ধিরই পরিচায়ক। তবে মন্ত্রিসভায় যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদন করা হয়েছে তাতে ঘুরেফিরে ৫৭ ধারা বহাল রাখা হয়েছে কিনা সেটি বড় মাপের একটি প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। নতুন এ আইন শুভঙ্করের ফাঁকি এমন কথাও জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। তার পরও আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাতে চাই বহুল সমালোচিত ৫৭ ধারা বাতিলের ঔদার্য দেখানোর জন্য; এ আইন যে ভালো আইন নয় তা প্রকারান্তরে স্বীকার করার জন্য। আশা করব ৩২ ধারার প্রস্তাবিত আইনে বাতিলকৃত আইনের আছর থাকলে তা পাস করার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করা হবে। নতুন আইনের ১৪টি ধারা জামিন-অযোগ্য হওয়ায় তা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যত্যয় ঘটাবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। আইনকে যেমন অপরাধ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায় তেমন হয়রানির মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বচ্ছতার অভাব থাকলে তারা আইনকে ছেলের হাতের মোয়া বানিয়ে ফেলবেন না, এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। ইতিমধ্যে বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল নতুন আইনটি যাতে সত্য প্রকাশে বাধা না হয়ে দাঁড়ায় তা খেয়াল রাখার তাগিদ দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনলেও বহু ক্ষেত্রে তা যে অভিশাপ হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে তাতে দ্বিমতের অবকাশ নেই। এ অভিশাপের কারণ তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার; যা নাগরিকদের জীবন কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্বিষহ করে তুলছে। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ তথা নাগরিকদের সুরক্ষায় আইনি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এ আইনের যাতে অপপ্রয়োগ না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণে আইন যাতে অস্ত্র না হয়ে ওঠে সে বিষয়ে সতর্ক থাকাও জরুরি। এ বিষয়ে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, আইনের অপপ্রয়োগ হবে না এ ধরনের কর্তৃপক্ষীয় আশ্বাসে আশ্বস্ত হওয়ার অবকাশ নেই। আইনি কাঠামোর মধ্যেই সত্য প্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা থাকতে হবে। রাষ্ট্রকে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, নতুন আইনে এমন সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই— গণমাধ্যম বা সত্য প্রকাশের স্বাধীনতা দেশ, জাতি ও সরকারের জন্য প্রকারান্তরে কল্যাণ নিশ্চিত করে। নতুন আইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্নের কোনো সুযোগ থাকলে তা যে আত্মঘাতী বলে বিবেচিত হবে, সময় থাকতে বিষয়টি উপলব্ধি করাই মঙ্গল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর