বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমাদের আমল যেন হয় এখলাস ও আন্তরিকতার সঙ্গে

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

আমাদের আমল যেন হয় এখলাস ও আন্তরিকতার সঙ্গে

আমরা যা কিছু করি সব কাজ যেন এখলাসের সঙ্গে করি। আন্তরিকতার সঙ্গে করি। আল্ল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করি। আল্ল্লাহর খুশির জন্য যদি নেক আমল করা হয় তাহলে তা কবুল হবে। আল্ল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে। নতুবা অনেক ভালো কাজ করেও তা বিফলে যাবে। মানুষকে খুশি করার জন্য যত ভালো কাজই করি না কেন তাতে কোনো সওয়াব হবে না। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সব কাজকর্ম নিয়ত অনুযায়ীই হয়ে থাকে। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে তাই পায়। কাজেই যার হিজরত আল্ল্লাহ ও তাঁর রসুলের দিকে (উদ্দেশ্যে) হবে, ফলত তার হিজরত আল্ল্লাহ ও তার রসুলের (দিকে) পরিগণিত হবে। আর যার হিজরত দুনিয়া লাভে কিংবা কোনো নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তার হিজরত সেদিকে গণ্য হবে যার উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে। বোখারি ও মুসলিম। লোক দেখানোর আমলকে নবী (সা.) শিরক বলেছেন। হজরত শাদ্দাদ বিন আউস (রা.) বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ পড়ল সে শিরক করল। যে ব্যক্তি দেখানোর জন্য রোজা রাখল সে শিরক করল। যে ব্যক্তি দেখানোর জন্য দান-খয়রাত করল সে শিরক করল। (মুসনাদে আহমদ)। নবী করিম (সা.) আরও ইরশাদ করছেন, যে ব্যক্তি অন্যকে শোনানোর জন্য কিছু করে আল্ল্লাহতায়ালা তা অন্যকে শোনাবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে দেখানোর জন্য কিছু করে আল্লাহতায়ালা তা অন্যকে দেখাবেন। (বোখারি ও মুসলিম)। লোক দেখানোর জন্য বড় বড় আমলও বিফলে যাবে। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ একটি লম্বা হাদিস বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিকে বিচারের জন্য পেশ করা হবে সে হবে একজন শহীদ। তাকে আল্ল্লাহর এজলাসে উপস্থিত করা হবে। তারপর আল্ল্লাহপাক তাকে (দুনিয়ার প্রদত্ত) নেয়ামতসমূহের কথা প্রথমে স্মরণ করিয়ে দেবেন। আর সেও তা স্মরণ করবে। এরপর আল্লাহতায়ালা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, আচ্ছা বলতো শুনি! এতসব নেয়ামতের কৃতজ্ঞতার বিনিময়ে দুনিয়াতে তুমি কী আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য (কাফেরের সঙ্গে) লড়াই করেছি। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমি শহীদ হয়ে গেছি। তখন আল্লাহপাক বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি এ উদ্দেশ্যে লড়াই করেছ যেন তোমাকে বীর বাহাদুর বলা হয়। (আর তোমার অভিপ্রায় অনুসারে) তোমাকে দুনিয়াতে তাও বলা হয়েছে। তারপর তার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হবে, তখন তাকে উপুড় করে টানাহেঁচড়া করতে করতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর সেই ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করা হবে, যে নিজে দীনি ইলম শিক্ষা করেছে এবং অপরকেও শিক্ষা দিয়েছে। আর পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করেছে (এবং অপরকেও শিক্ষা দিয়েছে)। তাকে আল্লাহপাকের দরবারে হাজির করা হবে। তাকে প্রথমে তার নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন এবং সেও তা স্মরণ করবে। তারপর আল্লাহতায়ালা  তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এসব নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে তুমি কী আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি নিজে স্বয়ং ইলম শিক্ষা করেছি এবং অপরকেও শিক্ষাদান করেছি এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য কোরআন পাক অধ্যয়ন করেছি। তখন আল্ল্লাহতায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়; বরং তুমি এ জন্য বিদ্যাশিক্ষা গ্রহণ করেছ যেন তোমাকে বিদ্বান বলা হয়। তারপর (এবং এই তোমার অভিপ্রায় অনুসারে) তোমাকে বিদ্বান ও কারি বলাও হয়েছে। তারপর (ফেরেশতাদের) তার সম্পর্কে আদেশ করা হবে সুতরাং তাকে উপুড় করে টানতে টানতে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর