সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

হৃদয়বাগানে ইমানের পরিচর্যা হয়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হৃদয়বাগানে ইমানের পরিচর্যা হয়

কালেমা তৈয়বার বীজ থেকে ইমানের চারা গজায় মানব মনে। ফুলের চারা বা ফলের চারাকে যেমন নিবিড় যত্নে বড় করতে হয়, গড়ে তুলতে হয় মহীরুহ করে, তেমন ইমানের চারাটিকেও মধুর যত্নের মাধ্যমে বড় করতে হবে আমাকে, আপনাকে। ফুলে-ফলে সাজিয়ে তুলতে হবে মনবাগানের ইমান বৃক্ষটিকে। তবেই ইমান নামক ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়বে ভিতর থেকে বাইরে। ব্যক্তি থেকে বিশ্বে। এমন সব ইমান ফুলের সাধকদের বলা হয় অলি-আওলিয়া, পীর-ফকির, দরবেশ-মুরশিদ। প্রশ্ন হলো— মনবাগানের ইমান চারাটির যত্ন নেব কীভাবে? কীভাবে ছোট্ট ইমানকে মহীরুহে পরিণত করব? ইমান ফুলের সৌরভ ভিতর-বাইরে কীভাবে ছড়িয়ে দেব? উত্তরে বলব, ইমানের চারাটিকে বৃক্ষে পরিণত করতে হলে আপনাকে মনবাগানের মালী হতে হবে। অর্থাৎ নিজেই নিজের ইমানের যত্ন নিয়ে ধীরে ধীরে উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হবে। হাদিসের ভাষায় এ ধরনের মালীকে বলা হয়েছে মুজাহিদে আকবার। অর্থাৎ বড় জিহাদকারী। আর ইমানের যত্ন নেওয়াকে বলা হয়েছে জিহাদে আকবার বা বড় জিহাদ।

প্রিয় পাঠক! আপনি যখন মনবাগানের মালী হবেন, দেখবেন হাজারো আগাছার ভিড়ে ইমানের চারাটি দেখা যাচ্ছে না। তখন আপনার পয়লা করণীয় হবে আগাছা পরিষ্কার করা। আগাছা পরিষ্কার করতে পারলেই ইমান চারাটি দ্রুত বেড়ে উঠবে। মনবাগানের আগাছা, অন্যভাবে বলতে গেলে ইমানের বেড়ে ওঠার পথে প্রতিবন্ধকগুলো হলো লোভ, হিংসা, অহংকার, আত্মগরিমা, বড়াই, লড়াই, মিথ্যা, চোগলখোরিসহ যত ধরনের প্রবৃত্তিগত দোষ আছে, এসবই ইমানের জন্য মহাহুমকি। যত দিন হৃদয়বাগান থেকে এসব পোকামাকড় তাড়াতে না পারবেন, তত দিন আপনার ইমান বেড়ে উঠবে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, হৃদয়বাগানে ইমান বৃক্ষটির সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হলে আপনাকে প্রথমে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু আপনি তো মালী। পোকামাকড় তাড়াতে বিশেষজ্ঞ কিংবা অভিজ্ঞ কেউ নন। তাই আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। যিনি নিজের মনবাগান প্রবৃত্তির দোষ থেকে মুক্ত রেখেছেন এবং অন্যদের মনবাগান পরিষ্কারেও পরামর্শ দিচ্ছেন। এই পরামর্শদাতাকে কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে মুরশিদ। মুরশিদ মানে যিনি পরামর্শ দেন। পথ দেখান। তিনি আপনাকে বলে দেবেন, এভাবে হৃদয়বাগান পরিচর্যা কর। আগে এই সার দাও। তারপর এই ওষুধ দাও। তারপর ইমানবৃক্ষে এই সময় পানি ঢাল। এই কর। সেই কর ইত্যাদি।

প্রিয় বন্ধু! এভাবে যখন আপনি মুরশিদের পরামর্শ মেনে হৃদয়বাগানের মালী হতে পারবেন, তখন দেখবেন আপনার মনের ইমানবৃক্ষটি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। মনে আলাদা তৃপ্তি পাচ্ছেন। আত্মায় ইমানি রওশন অনুভব করছেন। চোখ বন্ধ করেও চোখ খোলার চেয়ে বেশি দেখছেন। অর্থাৎ আপনিও একজন কামিল মালী হয়ে গেছেন। তখনই আপনি হৃদয়ে ইমানের স্বাদ তথা জওক অনুভব করবেন।

আফসোস! আমরা এখন আর ইমানের যত্ন নিই না। মনবাগানের আগাছাও পরিষ্কার করি না। কামিল মুরশিদের পরামর্শেরও প্রয়োজন পড়ে না আজকাল। ফলে আমাদের হৃদয় ভরে গেছে হাজারো আগাছায়। লোভ-হিংসা, কাম-ক্রোধে ছেয়ে গেছে আমাদের জীবন। তাই তো আমাদের জীবনেও যেমন স্বস্তি নেই। আত্মায়ও তেমন প্রশান্তি নেই। অথচ রসুল (সা.) বলেছেন, অন্তরের প্রশান্তি তো সে-ই পাবে, যে আল্লাহকে প্রভু, মুহাম্মদ (সা.)-কে নবী ও ইসলামকে জীবন বিধান পেয়ে ইমানের নিবিড় যত্ন নেবে। আমাদের আল্লাহ আছেন, নবী আছেন, ইসলামও আছে। নেই শুধু নিবিড় যত্ন। আগাছা পরিষ্কারের সাধনা। তাই ইমান এখন আর বেড়ে উঠছে না। হৃদয়বাগানে ইমানের ফুল ফুটছে না। আত্মায়ও ইমানের সৌরভ অনুভব করছি না। বাইরে তো নয়ই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মনবাগানের সাধক মালী হওয়ার তাওফিক দিন। ইমান চারাটিকে মহীরুহে পরিণত করে বিশ্বের মাঝে বিশ্বাসের ছায়া বিস্তারের তাওফিক আমাদের দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর