শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেগম জিয়ার মামলার রায়

সংযমী মনোভাব প্রশংসার দাবিদার

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত বৃহস্পতিবার দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় তার পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও চারজনকে দেওয়া হয়েছে ১০ বছরের কারাদণ্ড। কারাদণ্ডের পাশাপাশি আদালত অভিযুক্তদের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানা করেছে। ইতিমধ্যে বেগম জিয়াকে জেলেও নেওয়া হয়েছে। দেশের ইতিহাসে দুর্নীতির মামলায় এই প্রথম সাবেক কোনো নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে সাজা দেওয়া হলো। এর আগে সামরিক শাসক এরশাদকেও দুর্নীতির মামলায় সাজা ভোগ করতে হয়েছিল। দেশে যখন নির্বাচনের হাওয়া বইছে সেই মুহূর্তে দুর্নীতির অভিযোগে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় আগামী নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ অনিশ্চিত করে তুলেছে। মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন— এ আশঙ্কায় সারা দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হলেও সব পক্ষের সংযমী মনোভাবে বড় ধরনের কোনো অঘটন হয়নি। নির্বাচনের বছরে অসহিষ্ণু আচরণ এড়িয়ে বিএনপি সমর্থকরা যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তা প্রশংসার দাবিদার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতামূলক অবস্থান অঘটন এড়াতে সহায়তা করেছে। মামলায় বিচারিক আদালত যে রায় দিয়েছে, তা আইনগতভাবে মোকাবিলার কথা ঘোষণা করা হয়েছে বেগম জিয়ার আইনজীবীদের পক্ষ থেকে। এজন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। মামলার রায়কে প্রতিহিংসামূলক বলে অভিহিত করলেও আইনগতভাবে মোকাবিলার পদক্ষেপ সুবিবেচনারই পরিচায়ক। দুর্নীতি মামলায় একজন শীর্ষ রাজনীতিক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাজা দেশের রাজনীতির জন্য যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করবে তা সহজে অনুমেয়। স্বীকার করতেই হবে, রাজনীতিকরাও আইনের ঊর্ধ্বে নন। আইন অনুযায়ী চলার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় হলে, যে কারোর জন্যই মামলায় জড়ানোর অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণাম অনিবার্য হয়ে দেখা দিতে পারে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দেশের একজন শীর্ষ রাজনীতিকের সাজার ঘটনা অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা বলে বিবেচিত হলে তা হবে জাতির জন্য একটি বিরাট অর্জন। আমরা আশা করব, রাজনৈতিক নেতারা তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো মামলাকে ভবিষ্যতেও আইনি পথে মোকাবিলার পথ বেছে নেবেন। দেশে আইনের শাসন কায়েমের স্বার্থে বিচারব্যবস্থার প্রতি সব পক্ষের শ্রদ্ধার মনোভাব থাকা অপরিহার্য। দেশে এমন সুসংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সব পক্ষের সুবুদ্ধি ও সুবিবেচনা সময়ের দাবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর