সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজনীতির সরল অঙ্কের লব হরে কাটাকুটি

সুনীল শুভ রায়

রাজনীতির সরল অঙ্কের লব হরে কাটাকুটি

তখন আমি একটি জাতীয় দৈনিকে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করি। আমার বিট ছিল সংসদ। ১৯৯৩ সালের কথা। একদিন সংসদের রিপোর্টার গ্যালারিতে বসে দেখলাম ট্রেজারি বেঞ্চে মহা উল্লাস। অধিবেশন তখনো শুরু হয়নি। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার আসনে উপবিষ্ট হয়েছেন মাত্র। তিনিও হাস্যোজ্জ্বল। সরকারি দলের সব মন্ত্রী সংসদ সদস্যের মধ্যে তৃপ্তি ও আনন্দবোধ। একটা খুশির খবর বিনিময় চলল কিছুক্ষণ। সেই সময়ে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তবে তখনকার দ্বিতীয় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা অধিবেশন কক্ষে ঢুকলেন অত্যন্ত বিমর্ষ মনে। এ ত্রিমুখী চিত্রটা গ্যালারি থেকে পর্যবেক্ষণ করলাম। সেখান থেকে কান পেতে শুনলাম— কী খবর নিয়ে তাদের মধ্যে এ উল্লাস। খবরটা হলো— জনতা টাওয়ার মামলার রায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছে। তিনি তখন ওই সংসদেরই জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা। পাঁচ আসনে বিজয়ী হওয়া একজন সংসদ সদস্য। তবে পাঁচ আসনে বিজয়ী হলেই বা কী! পাঁচ মিনিটের জন্যও তাকে সংসদে বসতে দেওয়া হয়নি। সাজা পেয়ে নয়— মামলা দেওয়ার আগেই তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। কারাগারে রেখেই তার বিচার করা হয় এবং বিচারে তার সাজা পাওয়া দেখে সেই সময়কার সরকারি দল বিএনপিকে উল্লাস করতে দেখলাম। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস!

সেদিন যে কারাগারে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অবস্থান করছিলেন, নিয়তি সেখানেই টেনে নিয়ে গেছে ওই দিনের উল্লাসকারিণী বেগম খালেদা জিয়াকে। আজ তিনি নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ। কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগার নয়, কিংবা অদূরে কাশিমপুরের উন্নত কারাগারও নয়— একেবারে নাজিমউদ্দিন রোডের সেই পুরনো, পরিত্যক্ত কারাগার। যেখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ছয় ছয়টা বছর একনাগাড়ে কাটাতে হয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে তিন বছর নির্জন কারাবাস, বাকশূন্যভাবে। কারও সঙ্গে কথা বলারই অধিকার ছিল না, এমনকি কারারক্ষীর সঙ্গেও। তাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দুঃখভরা দীর্ঘশ্বাসগুলো ওই কারা প্রাচীরের মধ্যে এখনো হয়তো ঘুরপাক খাচ্ছে। এসবই ছিল খালেদা জিয়ারই অবদান। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দীর্ঘশ্বাসের উষ্ণতা নাজিমউদ্দিন রোডের ওই কারাগার হয়তো সহ্য করতে পারেনি। তাই ওই কারাগারই ভেঙে গেছে, তারপরও ওই ধ্বংসাবশেষ হয়তো অপেক্ষা করেছে খালেদা জিয়ার জন্য।

কতদিন বা কতটুকু সময় ওই কারাগারে কাটাতে হবে খালেদা জিয়াকে তা আজ বড় বিষয় নয়। যে কারাগারে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে পাঠানো হয়েছিল সেই কারাগার পরিত্যক্ত হওয়ার পরেও সেখানে খালেদা জিয়াকে যেতে হয়েছে— এটাই আজ নিবিড়ভাবে ভেবে দেখার কথা। ওই কারাপ্রাচীরের মধ্যে একটি নিভৃত কক্ষে, একাকী একবারও কি বেগম জিয়ার মনে হবে না যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও আমি এখানে পাঠিয়েছিলাম শুধু হিংসার বশবর্তী হয়ে। একবার মনে করে দেখুন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের কথা। একদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমিও চিরদিন কারাগারে থাকব না আর আপনিও চিরদিন প্রধানমন্ত্রী  থাকবেন না। কার থাকার জায়গা একদিন কোথায় হবে আল্লাহপাকই তা নির্ধারণ করে রেখেছেন।’ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখনো বেঁচে আছেন সুস্থ আছেন। হয়তো এ দিনটি দেখার জন্য কিংবা দেশকে আরও কিছু দেওয়ার জন্য আজও সুস্থ-সবল এবং ভালোভাবে বেঁচে আছেন। এইতো নিয়তির খেলা।

দুর্নীতির দায়ে বেগম খালেদা জিয়ার কারাভোগের সাজায় বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীর কান্না, চোখের জল আমার মনে কোনো উল্লাস সৃষ্টি করে না। কারণ, আমরাও তো ভুক্তভোগী। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিনা বিচারে কারাগারে নেওয়ার পর তার অগণিত অনুসারী-ভক্ত-নেতা-কর্মী-সমর্থক একদিন এভাবেই অশ্রু বিসর্জন করেছিলেন। সেদিন ওনাদের আমরা হাসতে দেখেছি, উল্লাস করতে দেখেছি। আমরা আনন্দও করছি না, উল্লাসও করছি না। শুধু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে গভীরভাবে উপলব্ধি করছি। মুখে বলুক আর না বলুক, জানি তাদের চরম শিক্ষা হয়ে গেছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়া সেদিনের বিএনপি যদি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার নেশায় মেতে না উঠত তাহলে দেশের শাসনব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক পথচলা এমনি নিকৃষ্টভাবে কলুষিত হতো না। মনে কি পড়ে— কী আচরণ করা হয়েছিল জাতীয় পার্টির ওপর। সে সময় কোনোমতে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যেতে পারল কিন্তু প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে থাকতে পারলেন না। পার্টিপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জেলে থেকে পাঁচটি আসনে প্রার্থী হলেন— কিন্তু পোলিং বুথে এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারলেন না। তারপরও জিতলেন সব আসনে। কিন্তু পুরো মেয়াদে সংসদে বসতে দিলেন না এক মিনিটের জন্যও। মামলা দিলেন গণহারে। হিসাব আছে ৪২টির মতো। আজকে বলতে শুনি হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোপাট হয়, তার কোনো বিচার নেই আর খালেদা জিয়ার মাত্র দুই কোটি টাকার জন্য সাজা হয়ে গেল? এখানে টাকার অঙ্ক তো বড় কথা নয়, বিষয়টি নৈতিকতার প্রশ্ন। একজন প্রধানমন্ত্রীর শপথ ভঙ্গের প্রশ্ন। দুই কোটি টাকার দুর্নীতি হয়তো বিএনপি সরকার আমলের মামুলি বিষয়। এটা হয়তো ‘শৈবাল দীঘিরে বলে— উচ্চ করি শির/ লিখে রাখো এক ফোঁটা দিলাম শিশির’— এর মতো বিশাল দিঘিতে এক ফোঁটা শিশির বিন্দুর মতো পরিমাণ। যেখানে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে লাখো হাজার কোটির দুর্নীতি করতে হয়েছে, সেখানে এটা তো এক ফোঁটা শিশিরের চেয়েও তুচ্ছ।

দুই কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় পাঁচ বছর সশ্রম কারাভোগের সাজা হওয়ার জন্য বিস্ময় প্রকাশ করা হয় অথচ মাত্র দেড় লাখ টাকার মামলায়ও পাঁচ বছর জেল দেওয়া হয়েছিল। সে মামলাটি কেমন ছিল সংক্ষেপে একটু বর্ণনা করতে চাই। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে একটি অর্থবছরে আট লাখ টাকা আয়কর দিয়েছিলেন। তারপর তার কর আইনজীবী বললেন যে, ‘স্যার আপনার আয়ের তুলনায় দেড় লাখ টাকা বেশি আয়কর দেওয়া হয়েছে। আবেদন করলে যে টাকা আপনি বেশি দিয়েছেন তা ফেরত পেতে পারেন’। আইনজীবীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি এরশাদ তার আয়কর হিসাব পুনরায় পর্যবেক্ষণ করে আয়কর পুনঃনির্ধারণের আবেদন করলে আয়কর বিভাগ যাচাই-বাছাই করে দেখল যে, সত্যিই দেড় লাখ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে। তারপর আয়কর বিভাগ থেকে সেই টাকাটা রাষ্ট্রপতিকে ফেরত দেওয়া হয়। এটাকে দুর্নীতির মামলা হিসেবে আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে তাকে পাঁচ বছর সাজা দেওয়া হয়েছিল। এখন জনতাই হচ্ছে বিচারকের বিচারক। তারাই বিচার করুক কী বিচার হয়েছিল সেদিন। এরকম আরও দু-একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী চাকরিচ্যুত হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের রায় দেন। রায় অনুসারে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল আদেশে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি এরশাদ। এর জন্যও এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং বিচারে সাজাও দেওয়া হয়েছে। এ রকমই হচ্ছে এরশাদের বিরুদ্ধে খালেদা সরকারের মামলার ধরন। এবার খালেদার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ মামলার কথায় আসা যাক। এ মামলার আদ্যোপান্তে যেতে চাই না। সহজভাবে জানি, এতিমখানার জন্য টাকা এসেছে বিদেশ থেকে। এতিমখানার কোনো খোঁজ নেই, টাকা চলে গেছে অন্য কোথাও। কোথায় গেছে, তার বিচারেই সাজা হয়েছে। পাশাপাশি দেখাতে চাই সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের অস্ত্র মামলার দৃশ্য। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন তাকে ‘শহীদ স্মরণে’ অঙ্কিত সোনালি রঙের একটি পিস্তল উপহার দিয়েছিলেন। এটা ছিল একটি প্রতীকী পিস্তল। যা গুলি করার কাজে ব্যবহৃত হয় না। যেহেতু এটি তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে উপহার পেয়েছিলেন সেহেতু এটা রাষ্ট্রীয় ভবনে শোপিস হিসেবে রেখেছিলেন। এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর তার সরকারি বাসভবনে যা কিছু ছিল তা সবকিছুই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়, যার মধ্যে ওই পিস্তলটিও ছিল। পরে বেগম জিয়ার সুবাদে এ পিস্তলটির জন্যও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলাটি হয়। যারা আইনবিদ তারা নিশ্চয়ই জানেন, অস্ত্র মামলায় কারও সাজা যখন হয় তখন কোনো ব্যক্তির কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকে এবং সেই অস্ত্রসহ যদি ব্যক্তিটি ধরা পড়েন তাহলে ওই ব্যক্তি বিচারে দোষী সাব্যস্ত হন এবং তার সাজা হয়। উপহারের পিস্তলটি সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। তারপরও তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা করা হয়েছে এবং সেই মামলায় তখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাজা তিন বছর থেকে বাড়িয়ে তাকে ১০ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে ওই মামলায় তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন। এভাবে যদি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৪২টি মামলার বর্ণনা করি তাহলে শোকাতুর বিএনপি আজ লজ্জাই পাবে। কত ন্যক্কারজনক কাজ করেছে ভেবে দেখুন তো। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টেও পাঠিয়েছিলেন। এর কি কোনো দ্বিতীয় নজির দেখাতে পারবেন?

খারাপ দৃষ্টান্ত আর যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্যই খারাপ দৃষ্টান্তের ফল কী হয় সে কথা উল্লেখ করতেই এ আলোচনা। খালেদা জিয়ার সরকার এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে ৪২টি মামলা দায়ের করেই ক্ষান্ত ছিল না? জামিনযোগ্য মামলাতেও তো তার জামিন হয়নি। কারাগারে আটক থেকেই তিনি মামলা মোকাবিলা করেছেন। এসব কি ভালো দৃষ্টান্ত ছিল? বিচার ব্যবস্থাকে এভাবে ব্যবহার করে আজ যদি সেই বিষেই আপনারা জর্জরিত হন তাহলে জবাব দেওয়ার মতো কী আছে? রাজনীতির জটিল কুটিল সরল অঙ্কে লব আর হরের মধ্যে তাহলে কাটাকুটি হয়ে গেল। এ রাজনীতিও হয়তো সরল অঙ্কের চরিত্রের মতো তৃতীয় বন্ধনী, দ্বিতীয় বন্ধনী, প্রথম বন্ধনী, তার মধ্যে যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের ব্যবহার, লব হরে কাটাকাটি, শেষ পর্যন্ত উত্তর পাওয়া যায় শূন্য—  ভগ্নাংশ কিংবা ১ অথবা ২।

খালেদা জিয়ার মামলার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করলে এটা কি বলা যাবে আইন সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে ব্যবহৃত হয়েছে? এদেশে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর দুজন সাবেক রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং সাজাও হয়েছে। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ অপরজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার ধরন-ধারণ কি সমান ছিল? এরশাদ কি জামিনযোগ্য মামলায়ও জামিনে থেকে মামলা মোকাবিলার সুযোগ পেয়েছেন? খালেদা জিয়া কি জামিন অযোগ্য মামলাতেও জামিনে থেকে কি মুক্তভাবে মামলা মোকাবিলা করার সুযোগ পাননি? একই মামলায় দুই আসামি হাজতে থেকেছেন আর প্রধান আসামি জামিনে ছিলেন। এ জামিনে থেকে তিনি কি সুযোগ নিয়ে মামলা মোকাবিলা করতে পেরেছেন? জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাটি হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই। বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলাটি নয় বছর চার মাস চলার পর ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে রায় হয়েছে। এর মধ্যে কার্যদিবস ছিল ২৮০ দিন। এ ২৮০ দিনের মধ্যে বেগম জিয়া হাজিরা দিয়েছেন ৩৬ দিন। উচ্চ আদালতে যাওয়া হয়েছে ২৫ বার। বিচারক বদল করা হয়েছে চারবার। এটাও নাকি খুব কম সময়! আর সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে জনতা টাওয়ারের মামলা করা হয়েছিল ১৯৯১ সালে। রায় হয়েছে ১৯৯৩ সালে। যে মামলার রায় শুনে উল্লাস দেখেছিলাম। খালেদা জিয়ার রায়ে বয়স বিবেচনায় এসেছে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে রায়ের সময় বয়সের বিবেচনা করা হয়নি। অথচ এ দুজনের মধ্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই বয়সে বড়। এবার বিজ্ঞ পাঠক সমাজই বিবেচনা করবেন- কোনটা প্রতিহিংসার মামলা, কোনটা রাজনৈতিক মামলা কিংবা কোনটা সত্যিই দুর্নীতির মামলা।

পরিশেষে এ কথাই বলতে চাই, যে দৃষ্টান্তগুলো সৃষ্টি হচ্ছে তার কোনোটাই সুখকর নয়। জাতীয় পার্টি অনেক দুঃসময় মোকাবিলা করে আসছে। প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। প্রকৃতির নিয়মই এমন, চিরদিন কারও সমান যায় না। যে যতটুকু পানিতে নামবে তাকে ততটুকুই ভিজতে হবে। অনেকেই ভাবেন, বেগম খালেদা জিয়া দু-এক দিনের মধ্যেই মুক্ত হয়ে আসবেন। কোনো রাজনৈতিক নেতা কারারুদ্ধ থাকবেন তা প্রত্যাশিত নয়। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি বলছে, বেগম জিয়ার মুক্তি সহসাই হয়ে যাবে এমনটি আশা করা যায় না। আরও কিছু মামলার রায় তার দরজায় কড়া নাড়ছে। আইনের চলার গতিও এতটা দ্রুত নয়। জাতীয় পার্টিই সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। এখন সবকিছু ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা ছাড়া সংকটে পড়া বিএনপির আর কোনো বিকল্প পথ আছে বলে এ মুহূর্তে প্রতীয়মান হয় না। তবে ইতিহাসের শিক্ষা সবার জন্যই জরুরি।

 

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতিক।

 

সর্বশেষ খবর