মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের প্রচার শুরুর পর যাদের কাছ থেকে বিরোধিতার সম্মুখীন হন তাদের অগ্রভাগে ছিল উমাইয়ারা। মক্কার ইসলামবিরোধী শক্তির নেতৃত্বে ছিল কুরাইশদের দুটি প্রভাবশালী গোত্র। এর মধ্যে বনি মাখজুম গোত্র ছিল বেশি শক্তিশালী। এই গোত্রের নেতা আবু জাহেল ছিল ইসলামবিরোধিতায় সবচেয়ে সক্রিয়। দ্বিতীয় স্থানে ছিল উমাইয়া গোত্রের অধিপতি আবু সুফিয়ান। বিধর্মীদের সঙ্গে মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ হয় মদিনার নিকটবর্তী বদর প্রান্তে। যুদ্ধে বনি মাখজুম গোত্রের নেতা আবু জাহেলসহ প্রভাবশালী সদস্যরা প্রাণ হারায়। উমাইয়া গোত্রের নেতা আবু সুফিয়ানকে মুসলমানরা আটক করেছেন— এই ভুল সংবাদের ভিত্তিতে মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে মদিনার মুসলমানদের যুদ্ধ বাধলেও যুদ্ধে উমাইয়াদের অংশগ্রহণ ছিল একেবারে কম। বদর যুদ্ধে বনি মাখজুম গোত্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মুসলিমবিরোধী শিবিরের নেতৃত্বে চলে আসে উমাইয়ারা। উমাইয়া নেতা আবু সুফিয়ান কুরাইশদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি শপথ নেন বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত কোনো নারীর শরীর স্পর্শ করবেন না।
বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে কুরাইশরা উমাইয়া নেতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ৩ হাজার সুসজ্জিত সৈন্য নিয়ে মদিনা অভিমুখে অভিযান চালায়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কার বিধর্মীদের বাধা দিতে ১ হাজার সৈন্য নিয়ে ওহুদ পর্বতের দিকে অগ্রসর হন। যুদ্ধের আগেই মদিনা বাহিনীর অমুসলিম একটি অংশ আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর নেতৃত্বে ৩০০ সদস্যসহ দল ত্যাগ করে। ৭০০ সদস্য নিয়ে মক্কার কুরাইশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে মুসলমানদের অংশ নিতে হয়। যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী পরাজিত হয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচা মহাবীর হামজা এই যুদ্ধে শহীদ হন। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে হামজার লাশের বুক চিরে কলিজা বের করে তা চিবিয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণতার উদাহরণ সৃষ্টি করেন। মুসলমানদের মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে উমাইয়া নেতা আবু সুফিয়ানকে আটক করা হয়। তাকে মহানবী (সা.)-এর সামনে হাজির করা হলে তিনি তাকে ক্ষমা করেন। কালক্রমে উমাইয়ারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করে। এর মধ্যে আবু সুফিয়ানের ছেলে মুয়াবিয়া (রা.) মহানবী (সা.)-এর সাহাবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
শাকিলা জাহান