সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

অ্যাসিড সন্ত্রাস

মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে

অ্যাসিড হামলার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কড়া দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও এ অপরাধের ইতি ঘটছে না। অ্যাসিড হামলার সঙ্গে জড়িত প্রতিহিংসা চরিতার্থের পৈশাচিক মনোভাব। পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে প্রতিহিংসা চরিতার্থের সে দানবিক মনোভাবের রেশ থাকা পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধের ঝুঁকি যে থেকেই যাবে তা সহজেই অনুমেয়। বিয়ে বা প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়া, পূর্বশত্রুতার জের কিংবা জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধেও বেছে নেওয়া হয় প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য অ্যাসিড নিক্ষেপের পথ। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে দেশে মোট অ্যাসিড-সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে ৭০টি আর অ্যাসিডে ঝলসে যান ৮৬ জন। ২০১৪ সালে হামলার ঘটনা ঘটে ৫৯টি, অ্যাসিডে ঝলসে যান ৭৪ জন। ২০১৫ সালে ৫৯টি অ্যাসিড হামলার ঘটনায় আহত হন ৭৪ জন। ২০১৬ সালে ৪৪টি অ্যাসিড নিক্ষেপ ঘটনায় আহত হন ৫০ জন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ৩৮টি অ্যাসিড নিক্ষেপ ঘটনায় দগ্ধ হন ৪৭ জন। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর প্রকাশিত ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের দেওয়া পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ছাড়াও অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে পুরুষ, মেয়েশিশু ও ছেলেশিশুদের ওপর। এ সময়ে ১৬৮ জন নারী অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হন। এর বাইরে ৪৩ জন পুরুষ, ৩৬ জন মেয়েশিশু এবং ১১ জন ছেলেশিশু অ্যাসিড-সন্ত্রাসে আহত হয়। চলতি বছর জানুয়ারি মাসেও দুজন অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হন। এর মধ্যে একজন নারী ও একজন শিশু। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া মনোভাবের কারণে অ্যাসিড সন্ত্রাস কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও এর ইতি যে ঘটেনি তা স্পষ্ট। এ ধরনের অপরাধ রোধে মানুষের মনে যে হিংসাশ্রয়ী মনোভাব দানা বেঁধে রয়েছে তার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। অ্যাসিড হামলার মতো প্রতিহিংসাপরায়ণ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমতও গড়ে তুলতে হবে।  অ্যাসিড সন্ত্রাসের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে এ ধরনের অপরাধে জড়িত হওয়ার সাহস কেউ যাতে না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। মনুষ্য চেতনার কারও পক্ষে অ্যাসিড সন্ত্রাসে জড়িত হওয়া সম্ভব নয়।  অ্যাসিড সন্ত্রাসসহ এ ধরনের অপরাধ রোধে মানবিক চেতনার পক্ষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করারও উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর