সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

পোশাক শিল্পের হাল হকিকত

ন্যায্যমূল্য আদায়ে উদ্যোগী হোন

দেশের পোশাক শিল্পে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমছে। কমছে একই সঙ্গে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ। এক সময়ে যে শিল্পের কর্মীদের ৮০ ভাগই ছিল নারী, এখন তাদের অংশগ্রহণ ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশে নেমেছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ— সিপিডি দেশের ১৯৩টি তৈরি পোশাকশিল্প কারখানার দুই হাজার শ্রমিকের মধ্যে জরিপ চালিয়ে বলেছে, এ খাতে বিগত ২০১২ থেকে ২০১৬ চার বছরে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। পুরুষ নারীদের মজুরির ক্ষেত্রে এ শিল্পে গড়ে তিন শতাংশ বেতন বৈষম্য রয়েছে। পুরুষদের বেতন গড়ে সাত হাজার ২৭০ টাকা হলেও নারীদের সাত হাজার ৫৮ টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চার বছরে পোশাকশিল্পে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। যা ২০০৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ছিল ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সে হিসাবে চার বছরে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমেছে দশমিক ৭১ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতে সামাজিক অগ্রগতি হলেও অর্থনৈতিক অগ্রগতি পিছিয়েছে। এ সময় নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য কমলেও, নারী কর্মসংস্থানের হার কমেছে। পোশাক শিল্প দেশের সবচেয়ে শ্রমঘন শিল্প। শিল্প খাতে এককভাবে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পোশাক শ্রমিকদের সিংহভাগ নারী হওয়ায় নারীর ক্ষমতায়নে এ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও তৈরি পোশাকের অবদান সবচেয়ে বেশি। এ প্রেক্ষাপটে পোশাকশিল্পে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেও এ খাতের শ্রমিকদের মজুরি দুনিয়ার যে কোনো দেশের একই খাতের শ্রমিকদের মজুরির চেয়ে কম। ক্রেতা দেশগুলো পোশাকের ন্যায্যমূল্য না দেওয়ায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের মালিকরাও কীভাবে শ্রমিকদের কম অর্থে পোষা যায় সে চেষ্টাই করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য তারা এ অনৈতিক পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থার অবসানে তৈরি পোশাকের ন্যায্যমূল্য পেতে আন্তর্জাতিক সংলাপের তাগিদ দিয়েছে সিপিডি। বাস্তবতার নিরিখে এটি খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা যেতে পারে। পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থেই এ ব্যাপারে সরকারকেও উদ্যোগী হতে হবে।

সর্বশেষ খবর