শিরোনাম
সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

হে আল্লাহ! ধৈর্য ধারণের তাওফিক দিন

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

হে আল্লাহ! ধৈর্য ধারণের তাওফিক দিন

আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহি ওয়াসাল্লামদের বিভিন্নভাবে বিপদ-আপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছেন। হজরাতে আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.) সেই পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছেন। আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.) সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো তাঁরা কাবলান নব্যুয়ত ও বাদান নব্যুয়ত অর্থাৎ নব্যুয়তের পূর্বাপর নিষ্পাপ ছিলেন। হজরতে রসুলে আরাবি (সা.) ইরশাদ করেন, বালা-মসিবত সবচেয়ে বেশি হবে নবীদের ওপর। অতঃপর যারাই নবীওয়ালা কাজ বেশি করবে তাদের ওপর অবস্থা বেধে বালা-মসিবত আসবে। হজরাতে আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.) ছাড়া অন্যদের জন্য বালা-মসিবত যেমনিভাবে গুনাহ মাফের জন্য এসে থাকে, অনুরূপভাবে মর্যাদা বাড়ানোর জন্যও এসে থাকে। তবে সব বালা-মসিবত মোকাবিলা করতে হয় ধৈর্যের সঙ্গে, তাহলেই আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অফুরন্ত নেয়ামত পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ধৈর্য ও সবরের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা ধৈর্যের সঙ্গে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাজের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষে তা সম্ভব। (সূরা বাকারা : ৪৫) বস্তুত, ধৈর্য এমন একটি মহাগুণ যারাই এই মহাগুণকে আঁকড়ে ধরেছেন তারাই সফলতার উচ্চস্তরে পৌঁছতে পেরেছেন। যার বাস্তব নমুনা হলো হজরাতে সাহাবায়ে কেরামের (রা.) জীবনী। তাঁরা নববী আদর্শে বলীয়ান হয়ে জীবনের সব প্রতিকূল মুহূর্তে আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্যের পাহাড় বনে যেতেন। তাই তো তাঁরা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ থেকে নুসরত ও সাহায্য পেয়ে ধন্য হতেন। আম্বিয়ায়ে কেরাম ও সাহাবায়ে কেরামদের (আ.) পর আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দা-বান্দীদেরও বিপদ-আপদ দ্বারা তাদের ইমান পরীক্ষা করেছেন। এই পরীক্ষার মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে যত বেশি ধৈর্য ধারণ করেছেন। আল্লাহতায়ালার কাছে তাঁর মর্যাদা তত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, সব প্রতিকূল পরিবেশে দীনি কাজ করতে গেলে মাঝে মাঝে মহান রাব্বুল আলামীন বিপদ-আপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। আমি আল্লাহতায়ালার একজন নগণ্য গোলাম। ইমান বড় দুর্বল। নিজেকে অতি অধম মনে করি। নিজের গুনাহের কারণে কিছুদিন আগে মহা এক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে গেলাম। আল্লাহর কাছে শুধু কায়মনে দোয়া করলাম আল্লাহ আমি যদিও তোমার নগণ্য গোলাম। কিন্তু যেহেতু তোমারই সৃষ্টি, তাই আমাকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান কর। আমি শতভাগ বিশ্বাস করি আল্লাহপাক আমার মতো নগণ্য বান্দার দোয়া কবুল করেছেন। আমি ছিলাম সব রোগ-বিরোগের ব্যাপারে খুবই ভীতু একজন ব্যক্তি। কিন্তু যখন পরীক্ষার সম্মুখীন হলাম, তখন আল্লাহপাক আমার ভিতর থেকে সব ভয়ভীতি দূর করে দিয়েছেন। আমি নিজেকে এক আল্লাহর ওপর অর্পণ করে দিয়েছি এবং পদে পদে আল্লাহর সাহায্য ও নেয়ামত লাভ করেছি আলহামদুল্লািহ। গত ১৫ ডিসেম্বর কুমিল্লার কোটবাড়িতে আমার এক মাহফিল ছিল, ওই মাহফিলে আমি প্রধান বক্তা ছিলাম। আমি মদনপুর দিয়ে কুমিল্লায় রওনা হলাম। মদনপুর পৌঁছার পর ড্রাইভার গুগলে সার্চ দিয়ে দেখল যে, মদনপুরে প্রচুর জ্যাম। সে আমাকে বলল হুজুর! আমি আপনাকে হোমনা দিয়ে নিয়ে যাই। আমি বললাম সেদিকে জ্যাম আছে? সে বলল নাহ, সেদিকে কোনো জ্যাম নেই। বললাম সেদিক দিয়েই চল। হঠাৎ মারাত্মক একসিডেন্ট করলাম। সঙ্গে আমার বড় ছেলে আসজাদ হোসাইন তাকরীম এবং এক ছাত্র আনওয়ার ছিল। তারা আমাকে ধরাধরি করে ওপরে উঠানোর চেষ্টা করছিল। বললাম আমাকে টানাটানি করার প্রয়োজন নেই, আমাকে দরুদ, ইস্তেগফার ও কালিমা পড়তে দাও। সেখান থেকে উঠার পর ডান পায়ে এবং বুকে ব্যথা অনুভব হয়েছে। এক ফার্মেসিতে নিয়ে যাওয়ার পর হাইপাওয়ারের ব্যথার ইনজেকশন দিয়ে দিল, ফলে ব্যথা হালকা মনে হলো। আল্লাহর ওপর ভরসা করে এ অবস্থাতেই মাহফিলে গেলাম। তখন রাত্র প্রায় ১১টা। আল্লামা কাসেমি সাহেব হুজুর আমার আসার কিছুক্ষণ আগেই মাহফিলে পৌঁছলেন। তখন আমার বয়ান করার মনমানসিকতা একেবারেই ছিল না। কারণ, আমি ডান পায়ে একেবারেই ভর দিতে পারলাম না। বড় হুজুর আমাকে বললেন যে, বাযী! উল্লেখ্য, আল্লামা কাসেমী সাহেব অনেক ছাত্রকে আদর কারে বাযী বলে ডাকেন। স্টেজে যাও। কিছু বয়ান কর। হুজুরের এই কথা আমি ফেলতে পারলাম না। বললাম হুজুর আপনি দোয়া করলে ইনশাআল্লাহ বয়ান করা যাবে। হুজুর বললেন বেটা যাও বয়ান কর। ছাত্ররা আমাকে ধরে স্টেজে নিয়ে গেল। আল্লাহর রহমতে ও বড় হুজুরের দোয়ায় প্রায় শোয়া এক ঘণ্টা বয়ান করলাম। বয়ানের মাঝে আমি যে মারাত্মকভাবে আহত তা অনুভবই হলো না। আমার মনে হলো ওই বয়ানটা আমার জীবনের সেরা বয়ান। সেখান থেকে ঢাকায় চলে এলাম। ভোর ৫টার দিকে বাসায় পৌঁছলাম। সকাল ৯টার দিকে পায়ে প্রচুর ব্যথা অনুভব হলো, সঙ্গে সঙ্গে বাসার পাশে একটি হসপিটালে গেলাম। ডাক্তার আমার পায়ের কাটার জায়গাটা ব্যান্ডেজ করে দিলেন এবং পায়ে ও বুকের এক্স-রের কথা বললেন। এক্স-রের রিপোর্ট একদম স্বাভাবিক এলো। এভাবে ১০ দিন কেটে গেল। দশম দিন টের পেলাম যে, আমার ডান পা মারাত্মক আহত হয়েছে। অপারেশন করা লাগবে। চিন্তায় পড়ে গেলাম। হঠাৎ জানতে পারলাম আমার এক মামা লালমাটিয়ায় ইয়ামাগাতা হসপিটালের মালিক ডা. ইখলাসুর রহমান সাহেব। উনার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তিনি রিপোর্ট দেখে বললেন ভাগিনা তাড়াতাড়ি ভর্তি হয়ে যাও তোমার অপারেশন লাগবে। তিনি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলেন। তা করানোর পর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেলাম। আল্লাহর মর্জি আমার মতো একজন অতি ভীতু ব্যক্তি কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করলাম তা আল্লাহই ভালো জানেন। আমার মাদ্রাসার সম্মানিত আসাতিজায়ে কেরাম বিশেষ করে আল্লামা কাসেমী সাহেব দা.বা., ছাত্ররা, আমি যে মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করি মসজিদ কমিটি, মুসল্লি, আমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এমনভাবে আমার খোঁজখবর নিয়েছেন, দোয়া করেছেন। পরিশেষে আমার সব পাঠকের কাছে দোয়া চাই আল্লাহতায়ালা যেন আমাকে তাঁর দীনের জন্য কবুল করেন এবং দ্রুত তামাম রোগ থেকে মুক্তি দান করেন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর