শিরোনাম
সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)

মাওলানা মুহম্মাদ আশরাফ আলী

সন্তানের ওপর মায়ের প্রভাবই থাকে সবচেয়ে বেশি। যে কারণে সন্তান যাতে সুসন্তান হয়ে গড়ে ওঠে তা একমাত্র মায়ের পক্ষেই নিশ্চিত করা সম্ভব। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বুজুর্গ হিসেবে হজরত আবদুল কাদের জিলানীর গড়ে ওঠার পেছনে মায়ের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। বলা হয়, হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন, তখন তার পুণ্যময়ী জননী কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করতেন। মাতৃগর্ভে থাকা শিশু তা মুখস্থ করে ফেলতেন। এভাবে জিলানী (রহ.) মায়ের গর্ভে থাকাবস্থায় আঠারো পারা কোরআন শরিফ মুখস্থ করে ফেলেন। জন্মের পরেই তার বাবা ইন্তেকাল করেন। তার পুণ্যময়ী মা-ই তাকে লালন-পালন এবং প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করেন। সে শিক্ষার কারণেই পরবর্তী জীবনে উন্নতি সাধনে সক্ষম হন। মমতাময়ী জননী তাকে সদা সত্য কথা বলতে শিখিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে সন্তানের প্রথম কথা যেন কালিমা বা আল্লাহপাকের নাম হয়। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) বাল্যশিক্ষা শেষে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য মা তাকে বাগদাদের উদ্দেশে পাঠান। তখন তার জামার পকেটের নিচে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা ভরে দিয়েছিলেন। কিশোর জিলানী (রহ.) এক যাত্রীদলের সঙ্গে বাগদাদে রওনা হলেন। পথিমধ্যে যাত্রীদের কাফেলা ডাকাত দলের দ্বারা আক্রান্ত হয়। ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে মালামাল লুটে নেয়। অল্প বয়সের বালক হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-কে কিছু বলল না ডাকাত দল। একজন ডাকাত কৌতূহলবশত তাকে জিজ্ঞাসা করল, হে বালক! তোমার কাছে কী আছে? উত্তরে তিনি বললেন, আমার কাছে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা আছে। এই দেখ আমার জামার ভিতরে সেলাই করা আছে। তোমরা সেগুলো নিয়ে যাও। সে ডাকাত হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-কে তাদের সরদারের কাছে নিয়ে যায়। সরদার মুদ্রাগুলো বের করে হাতে নিয়ে বলল, হে বালক? তুমি যদি না বলতে তবে আমরা তোমার এ স্বর্ণমুদ্রার খবর জানতাম না। তুমি কেন স্বর্ণমুদ্রার কথা বললে। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) বললেন, আমার মা আমাকে মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। ডাকাত সরদার তার কথা শুনে হতবাক হয়ে গেল। অতঃপর তার হাত ধরে কাঁদতে লাগল আর বলতে লাগল, হে বালক আজ তুমি আমার জ্ঞান চোখ খুলে দিয়েছ, আমি এতদিন অন্ধ ছিলাম। আমরা এতকাল ভুল করেছি, তুমি আমাদের তওবা করাও। আমরা কখনো আর এ পথে যাব না। ডাকাত দল তার হাতে তওবা করে ভালো হয়ে গেল। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) মায়ের শিক্ষার কারণেই জগদ্বিখ্যাত বুজুর্গ হতে পেরেছিলেন। একজন মায়ের যদি তার সন্তানকে বড় করার ইচ্ছা থাকে তবে সন্তানকে সত্যের পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মিথ্যা থেকে দূরে থাকার জন্য অনুপ্রাণিত করতে হবে।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর