শিরোনাম
সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইতিহাস

নবাবী শাসনামল

বঙ্গদেশ ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ। আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে মুর্শিদকুলী খান বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়েছিলেন। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তিনি স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে থাকেন এবং বঙ্গদেশে একটি নতুন নবাব বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তার সময় ইংরেজ বণিকগণ বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার যে অধিকার লাভ করেছিল তা হতে বঞ্চিত হয়। মুর্শিদকুলী খানের কঠোর শাসনে দেশে শান্তি স্থাপিত হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে। তার মৃত্যুর পর তার জামাতা সুজাউদ্দীন খান বঙ্গদেশ ও উড়িষ্যার নবাব হন। তার আমলে বিহার প্রদেশ বাংলা সুবার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং আলীবর্দী খান বিহারের শাসনকর্তা পদে নিযুক্ত হন। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে সুজাউদ্দীনের মৃত্যু হলে তার পুত্র সরফরাজ খান বাংলার নবাব হন। মসনদে আরোহণ করে সরফরাজ খান পিতার উপদেশানুসারে প্রধান ও অভিজ্ঞ রাজকর্মচারীদের পদমর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখেন। ফলে হাজী আহম্মদ, আলম চাঁদ জগেশঠ প্রমুখ ব্যক্তি নিজ নিজ পদে বহাল রইলেন। কিন্তু এসব কূটনীতিপরায়ণ ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা তার ছিল না। তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিহারের শাসনকর্তা আলীবর্দী খান তাকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকলে জগেশঠ, আলম চাঁদ, হাজী আহম্মদ প্রমুখ ব্যক্তি তার দলে যোগদান করেন। ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে আলীবর্দী খান পাটনা থেকে সসৈন্যে বাংলার দিকে যাত্রা করেন এবং গিরিয়ার যুদ্ধে সরফরাজ খানকে পরাজিত ও হত্যা করেন। সরফরাজ খানের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলার ইতিহাসের পাতা থেকে মুর্শিদকুলী খানের বংশদরদের নাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। গিরিয়ার যুদ্ধে বিজয় লাভের ফলে আলীবর্দী খান বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যার নবাবী লাভ করেন।

আলীবর্দী খানের প্রকৃত নাম মীর্জা বান্দে বা মীর্জা মুহম্মদ আলী। তিনি ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত ও শিয়া মতাবলম্বী। তার পিতা মুহাম্মদ মদানী সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র আযম সাহের অধীনে কর্মজীবন শুরু করেন। মীর্জা মুহম্মদের পুত্ররা সাবালক হলে আযম শাহ্ তাদের চাকরিতে নিয়োগ করেন। কিন্তু আযম শাহের মৃত্যুর পর এ পরিবার বেশ অভাব-অনটনের মধ্যে পতিত হয়। তখন এ পরিবারের দুই ভ্রাতা মুহম্মদ আলী ও মীর্জা আহমদ উড়িষ্যার সুবাদার সুজাউদ্দীনের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন। সুজাউদ্দীন নবাব হওয়ার পর এ দুই ভাইয়ের উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়। ১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে সুজাউদ্দীন মীর্জা মুহম্মদ আলীকে রাজমহলের ফৌজদার নিয়োগ করে ‘আলীবর্দী’ খেতাবে ভূষিত করেন। আলীবর্দী খান তার উদার শাসনে রাজমহলে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনয়ন করতে সমর্থ হন। ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিহারের সহকারী সুবাদার পদে নিযুক্ত হন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর