বুধবার, ৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

আলীবর্দী খান

আলবর্দী খান বলপূর্বক বাংলার মসনদ দখল করলেও তিনি একজন শক্তিশালী ও যোগ্য শাসক ছিলেন। তার আমলে মারাঠা আক্রমণ বা বর্গীর হাঙ্গামা একটি বার্ষিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। আপ্রাণ চেষ্টা করেও যখন মারাঠাদের আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি, তখন তিনি দেশ রক্ষার জন্য উড়িষ্যার রাজ্যের একাংশ ও বার্ষিক ১২ লাখ টাকা চৌথ দান করে মারাঠাদের সঙ্গে সন্ধি করলেন। এই ব্যবস্থার ফলে বাংলার নিরীহ নর-নারী বর্গীদের উপদ্রব থেকে রক্ষা পায়। আলীবর্দী খান এ দেশে ইরেজদের ক্রমবর্ধমান শক্তি সম্পর্কে সজাগ ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, নৌবলে বলীয়ান ইংরেজদের বঙ্গদেশ থেকে বিতাড়িত করা সহজসাধ্য নয়। এজন্য তিনি তাদের এ দেশে বাণিজ্য করার অনুমতিদান করেছিলেন; কিন্তু ইংরেজদের দুর্গ নির্মাণ বা অনুরূপ কোনো সামরিক বা রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগদানের পক্ষপাতী ছিলেন না। তবে মারাঠা আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য তিনি ইংরেজদের পরিখা খনন করা এবং কাশিমবাজার কুঠির নিরাপত্তার জন্য প্রাচীর নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলেন। আলীবর্দী খান ইউরোপীয় বণিকদের সঙ্গে সদ্ভাব রক্ষা করে চলতেন এবং তাদের প্রতি যাতে কোনো অন্যায় বা অত্যাচার না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতেন।  ইউরোপীয় বণিকদের প্রতি নবাব আলীবর্দী খানের ব্যবহার সম্পর্কে ড. কে কে দত্ত বলেন, ‘ইউরোপীয়দের প্রতি আলীবর্দী খানের ব্যবহার বস্তুত কড়া ছিল; কিন্তু তা বিনা প্রয়োজনে ছিল না। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্য জরুরি আর্থিক প্রয়োজনে তিনি কোনো কোনো সময়ে ইউরোপীয় বণিকদের কাছ থেকে বলপূর্বক টাকা আদায় করতেন। বঙ্গদেশ থেকে ইউরোপীয় বণিকদের বিতাড়িত করার ইচ্ছা অথবা তাদের ব্যবসায়ে কোনোরকম ক্ষতি করা তার আদৌ অভিপ্রায় ছিল না।’ কোনো কোনো ইতিহাসবিদ আলীবর্দী খানকে অর্থলোভী ও অত্যাচারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু তা ঠিক নয়। মারাঠা আক্রমণ বাংলার আর্থিক অবস্থা পঙ্গু করে দিয়েছিল; তাই বাংলার নিরাপত্তা বিশেষ করে মারাঠা আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশরক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যয় সংকুলানের জন্য তিনি জমিদারদের কাছ থেকে কোনো কোনো সময় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কলকাতা, সুতানটি ও গোবিন্দপুরের জমিদার হিসেবে ইংরেজদেরও অন্য দেশীয় জমিদারদের মতো অর্থ দিতে হতো। এতে তার প্রতি অত্যাচারী মনোবৃত্তি বা অন্যায়ভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ আনয়ন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর